ঘরে বাইরে নিরাপত্তাহীন মানুষ

0

বিশেষ প্রতিবেদক : এলাকাভিত্ত্বিক আধিপত্য বিস্তার, জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পারিবারিক কলহের জের ধরে খুনোখুনির ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। সম্প্রতি নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী ও আকবর শাহ থানার জিয়ানগর এলাকায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ওয়াছিনুর রহমান আদিল (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী সহ দুই তরুন খুন হয়েছেন। থেমে নেই ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা। উঠতি বয়সী কিশোর-তরুনরা এখন ছিনতাই চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ডাষ্টবিনে নবজাতকের জোড়া লাশের সন্ধান এবং আত্মহননের মত সামাজিক অপরাধও অনেকটা নিয়মিতভাবে ঘটে চলেছে।

এসব ঘটনায় সচেতন নাগরিকদের মনে আতঙ্ক ভর করেছে। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নাই দাবী করে নগর বিশেষ অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো: তানভীর বলেন,’ ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দ্বন্দ্বের জেরেই হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাগুলোর কারন অনুসন্ধান এবং জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছি। আর সামাজিক অস্থিরতা থেকে যে সব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে তা নিয়ন্ত্রন বা নির্মুল করতে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সমাজের প্রত্যেক স্তর থেকে দায়িত্বশীল সবাইকে এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে আকবর শাহ থানার জিয়ানগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মো: ইয়াছিন ওরফে মনা (২২) নামে এক যুবক নিহত হন। পেশায় দিনমজুর ওই যুবককে হত্যার অভিযোগে ফিরোজশাহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো: হোসেন ওরফে মনা এবং ফরহাদ নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আকবর শাহ থানার ওসি মো: আলমগীর বলেন,’গত ২৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার দিবাগত রাত দশটার দিকে লেক সিটির জিয়ানগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ১০-১২ জন ইয়াছিনকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় আকবর শাহ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আটককৃত মো: হোসেন ওরফে মনা এবং ফরহাদকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এর একদিন আগে ২৪ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে অপরাধপ্রবন বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকার মাষ্টার কলোনীতে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এসএসসি পরীক্ষার্থী ওয়াছিনুর রহমান আদিল (১৫) ও তার বাবা বদিউল আলম বাচ্চুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। রাতে ছুরিকাহত আদিল ও বাচ্চুকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাদেরকে ওআর নিজাম রোড়ে অবস্থিত বেসরকারী হাসপাতাল মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানোর পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আদিল মারা যায়।

এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারী বিকেল তিনটায় রেয়াজুদ্দিন বাজারের আল মদিনা ভাত ঘর হোটেলে দুপুরের ভাত খাওয়ার সময় ছুরি নিয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষ অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিপক্ষের উপর। এতে প্রান হারান ইয়াছিন আরাফাত (২২) নামে ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনায় ছুরিকাহত অবস্থায় হারুনুর রশিদ ও ইরফান রানা ওরফে ফাহিম নামে আরও দুজনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে ছুরিকাহত হারুনুর রশিদ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও ফাহিমকে জরুরী বিভাগ থেকে সাধারন ওয়ার্ডে নেওয়ার সময় তিনি পালিয়ে যান।

নিহত ইয়াছির চট্টগ্রাম সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক(সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার চদাহা ইউনিয়নে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে রেয়াজুদ্দিন বাজার ভিত্তিক মাদক ব্যবসা সহ অবৈধ আয়ের বিভিন্ন উৎসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের বিরোধের জেরে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এভাবে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অব্যন্তরীন দ্বন্দ্বে ইতিপুর্বে একাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারী দুপুরে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন বিজয়নগর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে জুবায়ের করিম (৩৩) নামে বাংলাদেশ বিমানের একজন গ্রাউন্ড এসিস্টেন্টের মহদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বেডরুমের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। বিমানকর্মী জুবায়েরের স্ত্রী সাদিয়া ইয়াসমিন বৈশাখী পুলিশকে তার স্বামী আত্বহত্যা করেছেন বলে দাবী করলেও আত্বীয়স্বজন এটিকে হত্যা বলে সন্দেহ করেছেন। থেমে নেই ছিনতাই।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী নগরীর কাতালগঞ্জ বৌদ্ধমন্দিরের সামনে একদল ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের শিকার ওই ব্যবসায়ী পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা ও কথিত যুবলীগ নেতা নেতা নুর মোস্তফা টিনুর ভাই নুর আলম শিপুর সম্পৃক্ততার তথ্য পায়।

এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারী চকবাজার মক্কি মসজিদের পাশ থেকে নুর আলম শিপু (৩২) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জানা গেছে, নগর পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ২০১৬ সালে নগরীতে সবমিলিয়ে একশ পাঁচটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। চলতি বছরে আইনশৃঙ্খার অবনতির বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্খা অভিজ্ঞ মহলের।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.