চট্টগ্রামে সরকারী দলের নেতা বদলের রাজনীতি

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ সরকারের বয়স যত বাড়ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃনমুলের ত্যাগী নেতারা ও কর্মীগন দল থেকে ততই ছিটকে পড়ছেন। দলে আসা নতুনদের ভীড়ে ও সুবিধাবাদীদের ঠেলায় নেতৃত্বে ঠাঁই নেই তাদের। মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত অপনজনদের মধ্যে অনেকে এখন ভীড় করছেন নবনির্বাচিত মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দলে। যাদের সকাল হলেই চশমা হিলের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় ঘুর ঘুর করতে দেখা যেত তারা এখন আন্দরকিল্লায় নবাগত মেয়রের বাসায় অথবা তার গাড়িতে দেখা যাচ্ছে।

এসব ডিগবাজি দেওয়া নেতাকমীদের ব্যাপারে মেয়র নাছিরও সতর্ক রয়েছেন। মেয়রের লোকজন বলছেন, নবাগতদের ভীড় বেড়েছে মেয়রের চাপরপাশে। মানুষ এদের ভালভাচে চেনে। কসন্তের এইসব কোকিল ছিল এতদিন চশমাহিলে। এখন তাদের স্থান পরিবর্তন হয়েছে আন্দরকিল্লায়। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন গ্রুপিং কোন্দল না থাকলেও মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের পৃথক কিছু অনুসারী রয়েছেন।

কারো মুখ দেখাদেখি হত না এমন অনেক নেতাকর্মীকেও এখন দেখা যাচ্ছে একসাথে বিভিন্ন কর্মসুচীতে। এই ধারা অব্যাহত থাকায় রাজনীতির বাতাসে সুবাতাস প্রবাহিত হলেও ডিগবাজি খাওয়া নেতাকর্মীদের হঠাৎ করে আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের ভক্ত ও অনুগত হয়ে যাওয়াকে ভাল চোখে দেখছেনা রাজনৈতিক সচেতন মহল।

আমার প্রায় যাওয়া পড়তো মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায়। পেশাগত দায়িত্বপালন ছাড়াও সৌজন্য সাক্ষাতের উদ্যোগে এখনও যাওয়া হয়। অনেকের চেহারা আমার কাছে স্পষ্ট। নামে ও চেহারায় চেনা জানা পরিচিত অনেককে এখন দেখিনা আর চশমাহিলে।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্ষমতা বা দাপট এখনও বিদ্যমান রাজনীতির মাঠে। এখনও সক্রিয় মহিউদ্দিন চৌধুরী। যারা মহিউদ্দিন চৌধুরী জিরো হয়ে গেছেন বলে মনে করেন তারা বোকার রাজ্যে বসবাস করেন। ৬৮ ও ৬৯ সাল থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখে আসছি। অত্যন্ত দৃড়চেতা ও কষ্ট সহিষ্ণু এই মানুষ রাজনীতিতে অত্যন্ত দক্ষ খেলোয়াড়। তার বয়স বেড়েছে। আগের মত হয়তো সময় দিতে পারেন না। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাহস অত্যন্ত প্রবল। এখনও মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের জন্য একটি ফ্যাক্টর। সেদিন এক কাউন্সিলর বললেন, ভাইজান ক্ষমতা কি জিনিস। দেখছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী কিভাবে হিরো থেকে জিরো হয়ে গেলেন।’’ তাকে বললাম,’ভাই এটা অনুসরন করেছেন বাস্তবে এটা সত্য নয়।

উনার অবস্থানে উনি আছেন। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরী কখনো জিরো হবেন না। আ.জ.ম নাছির উদ্দিন তার বর্তমানের অবস্থানে বড় এবং একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। ৯০ এর দশক থেকে নাছির ভাইকে দেখে আসছি। রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের অনেক কিছুই আমাদের অজানা নেই। সকলের উত্থান পতন আমাদের নকদর্পনে। আমাদের অজানা থাকার কথাও নয়। রাজনীতির সকল মাইলষ্টোনে আমাদের পথচলা অব্যাহত ছিল এবং আছে।
গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরাও আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের জন্য গনসংযোগ করছেন ভালভাবে। নাছিরের অনুসারীরাও ছিলেন নির্বাচনি মাঠে সক্রিয়। যৌথ এই গনসংযোগ ও প্রচার ছিল রাজনৈতিক এক নান্দনিক শুভ প্রচেষ্টা। এটা আমাদের ভাল লেগেছে। দুজনে মিলে মিশে রাজনীতির মাঠে এখনও সক্রিয়। দুজনের মধ্যে কোন দুরত্ব নেই। গ্রুপিং বা কোন্দল অথবা কোন দলাদলি নেই। এটা ভাল লক্ষন। কিন্তু তোসামোতকারী চামচারা যখন রাজনীতিবিদদের বেষ্টনি দিয়ে রাখে তখন সাধারন তৃনমুলের নেতাকর্মীগন এই নেতাদের কাছে যেতে পারেন না। আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মেধা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান, সাহসী ও দক্ষ একজন রাজনীতিবিদ আ.জ.ম নাছির উদ্দিন।

দায়িত্ব নেওয়ার আগেই যেন তিনি চামচা ও তোষামোদকারীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত না হন, সেদিকে তাকে নজর রাখতে হবে। যারা মহিউদ্দিন চৌধুরীর মানচিত্র থেকে সটকে পড়ে এসেছেন সাধু সেজে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে নবনির্বাচিত মেয়রকে। কারন এরা আবার নাছিরের বলয় ছেড়ে যাবে কিছুদিন পর। এভাবে ডিগবাজি খাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে রিতিমত বিব্রত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম নাছির উদ্দিন দুজনেই। সকাল বিকাল হাজিরা দেওয়া যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীর প্লাটফরম পরিবর্তন ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় নেতা বদলের রাজনীতি চট্টগ্রামের সুষ্ট রাজনীতিতে একটা অশুভ লক্ষন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর অনেক কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে পরিবর্তনে প্রবাহ লক্ষ্য করেছি। যাদেরকে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর গাড়িতে সব সময় দেখেছি তাদের অনেককে দেখেছি মেয়রের গাড়িতে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এরাই বোল পাল্টে ফেলেছে, রাতারাতি। একজন যুবলীগ নেতাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ’আরে ভাই ক্ষমতা কি মহিউদ্দিন চৌধুরীর আছে নাকি। এখন আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের যুগ চলছে। এসব চামচা ও সুবিধাবাদিরা ঠিকমত জায়গা করে নিচ্ছে আ.জ.ম নাছিরের বলয়ে। এভাবে বোল পাল্টে আ.জ.ম নাছিরের সাথে মিশে রাজনীতির পরিবেশকে নষ্ট করার একটা অশুভ পায়তারা তাদের। রাজনীতিতে কলুষিত করে নেতারা রাজনীতিতে দলীয় প্রভাব ও দাপটতো আছেই। বিগত দিনে দেখেছি সিটি কর্পোরেশনে ঠিকাদারী, টেন্ডারবাজি করে যারা রাতারাতি অর্থের পাহাড় গড়েছেন তাদের মধ্যে কিছু কিছু নেতা আবার নতুন করে ধান্ধাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতে নাম লেখাচ্ছেন আ.জ.ম নাছিরের খাতায়। কিন্তু আমার মনে হয় না, এরা আ.জ.ম নাছিরের কাছে আশ্রয় বা প্রশ্রয় পাবেন। টাউঢ বাটপার এবং চিটিং রাজনীতিবিদদের সংখ্যা ক্ষমতাসীনদলে কম নেই।

সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরেও কর্মকর্তা কর্মচারীতের একটি অংশ এসব বাটপার ও টাউঢ নেতাকমীদের সাথে যৌথভাবে অপকর্ম চালায়। মেয়র মনজুর আমলে বিএনপির কোন নেতাকর্মী সেভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় পায়নি। তিনি প্রশাসনিকভাবে কর্মকান্ড চালাতে ব্যর্থ হলেও কখনও চামচা বা সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন না। তবে কিছু কাউন্সিলর চামচামি ও তোষামোদি করে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়েছেন। এরা এবারও সক্রিয়। কোনমতে নবনির্বাচিত মেয়রকে পটাতে পারলেই কেল্লাফতে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বসে নেই। আগে ঘন ঘন যে সব কর্মকর্তা চশমাহিলে হাজিরা দিতেন তারা এখন আন্দরকিল্লায় যাচ্ছেন। চশমাহিলের রাস্তা তারা ভুলে গেছেন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সুবিধাবাদী আচরনের বাতাস তাদের গায়েও পড়েছে। দুর্নীতিবাজরা আছেন আতংকে। মেয়রকে দায়িত্ব নেওয়ার পর চাকরী থাকে কি না সে চিন্তায় আছেন। চসিক এর প্রকৌশল বিভাগের দুর্নীতি ওপেনসিক্রেট। সামান্য সড়ক পরিদর্শক, ডিভিশন-১ এর সড়ক পরিদর্শক বানু রতœাকর টুনু নগরীতে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেচেন। পাজেরো গাড়ি সহ অঢেল অর্থের মালিক। এভাবে প্রকৌশল বিভাগের অনেক সহকারী প্রকৌশলী, পরিদর্শক, সুপারভাইজার নগরীতে শুধু ফ্ল্যাটই নয়। কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। গাড়ি বাড়ির মালিক এসব প্রকৌশলী, পরিদর্শকের সম্পদের হিসাব নেওয়া প্রয়োজন নবাগত মেয়রের। স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্ন, বিদ্যুৎ ও প্রকৌশল বিভাগের অনেক সাধারন কর্মচারী এখন কোটিপতি। এসব কোটিপতি কর্মচারীদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া উচিত মেয়রের। এরা কিভাবে এত সম্পদের মালিক হল। দুদককে এ ব্যাপারে সহযোগিতার আহবান জানালে নগরবাসী খুঁশি হবে নি:সন্দেহে।

কারন এরাই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নগরীতে রাস্তার মেরামত হলে এক মাসের পর গর্তের সৃষ্টি হয়। দুর্নতির আখড়া এই সিটি কর্পোরেশনে মেয়র একবার শুদ্ধি অভিযান চালালে অনেক রাঘব বোয়ালদের কাহিনী বেরিয়ে আসবে। দুর্নীতিবাজদের কারনে কোনঠাসা হয়ে আছে সৎ কর্মচারীরা সিটি কর্পোরেশনে। এক কর্মকর্তা বললেন,’ মেয়রের লগে লাইন সড়ন ফরিব ভাইজান ন হইলে চইল্লুম কে নে? কত বড় আশা তার। এভাবে যোগসুত্র খুঁজছেন অনেকে অবৈধ সম্পদ ও কুকীর্তিকে চাপা দিতে। নবাগত মেয়রকে প্রথমেই এসব দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে নতুবা তাকে প্রশ্নবিদ্ধ বা ভোগান্তিতে ফেলবে এসব দুর্নীতিবাজরা নি:সন্দেহে। চট্টগ্রাম মহনাগরীতে একটি বিশাল অংশ প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে ডুবছে। আগ্রাবাদ অফিসপাড়া, বেপারীপাড়া, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারীপাড়া ও এক্সেস রোড়ে কোমর সমান পানি। এলাকাবাসি বসবাস করছেন পানির সাথে। এই পবিত্র রমজান মাসেও রোজাদারদের হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।

বেপারী পাড়ার পাশেই নাসির খালের উপর প্রস্তাবিত রাস্তা নির্মানের নামে যত্র তত্র খুঁটি গেড়ে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে ঠিকাদার। বিশাল এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের একমাত্র দাবী মহেশখালের উপর স্যুইচগেইট নির্মানের আশ্বাস দিয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই আশ্বাস জোয়ারের পানির সাথে ভেসে গেছে কি না জানি না। বন্দর স্যুইচ গেইট নির্মান না করলে সিটি কর্পোরেশন এ বছর জরুরী ভিত্ত্বিতে স্যুইচগেইট নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্গতি লাগবে কর্পোরেশনের একটি প্রস্তুতি নিতে আমি বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাবো নবনির্বাচিত মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.