ফতেহপুর ‘জঙ্গি আস্তানায়’ বিস্ফোরণে নিহত সাত থেকে আট

0

সিটিনিউজ ডেস্ক::মৌলভীবাজারের ফতেহপুরে সন্দেহভাজর জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণে সাত থেকে আট জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। এরা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে ফতেহপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মনিরুল। তিনি জানান, ওই বাড়ির ভেতরের দৃশ্যগুলো বীভৎস। সেখানকার ছবি কেউ তুললে তা গণমাধ্যম প্রচার করতে পারবে না। প্রতিটি মরদেহই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের হাত পা, মাথা ও শরীরের বাকি অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুরো বাড়ি জুড়েই।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ও গতকাল বুধবার ভোরে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে শনাক্ত করে ঘিরে রাখে পুলিশ। একটি বাড়ি মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলিতে অবস্থিত। অন্য বাড়িটির অবস্থান শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নাসিরপুর গ্রামে। রাতের বিরতি ও ভোরের বৈরী আবহাওয়ার কারণে নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ছেদ পড়েছিল। আবহাওয়ার বৈরী ভাব প্রশমিত হলে আজ নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় ফের অভিযান শুরু হয়। জঙ্গি আস্তানা ঘিরে এ অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন হিটব্যাক’।

এছাড়া মৌলভীবাজারের পৌর এলাকার বড়হাটের অন্য জঙ্গি আস্তানা এখনও ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা শেষে সেখানে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।

মনিরুলের ধারণা, বুধবার বিকালে বিকট শব্দে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটিই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে। আর আজ ভেতরে যখন পুলিশ সদস্যরা ঢুকে, তখন ভেতরে মরদেহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, ভেতরে যেভাবে মরদেহের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাতে তাদের ধারণা সেখানে সাত থেকে আট জন থাকতে পারেন। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। তারা মরদেহগুলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশ জোড়া দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবেন, এরপর বোঝা যাবে সেখানে আসলে কতজনের মরদেহ ছিল।

মনিরুল বলেন, মরদেহের ছিন্নবিচ্ছিন্ন অংশ দেখে তাদের মনে হয়েছে এই আস্তানার ভেতরে যেমন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছিলেন, তেমনি ছিলেন নারী এবং অপ্রাপ্তবয়স্করাও।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে এই আস্তানাটি ঘেরাও করার পর অভিযান শুরু করেন তারা। এই অভিযান শুরুর পরই পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট হ্যান্ড মাইকের সাহায্যে ভেতরে থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা তাতে রাজি হননি। আর বিকালে অভিযান শুরুর পর মোট ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যার দিকে প্রচণ্ড একটি বিস্ফোরণে ঘরের দরজাসহ কিছু গ্লাস ভেঙে যায়। এরপর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট অভিযান শুরু করে। কিন্তু রাত হওয়ার কারণে স্থগিত করে।

দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান শুরু হতে বিলম্ব হয় বৃষ্টির কারণে। দুপুরের পর পর বৃষ্টি থামলে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ড্রোন দিয়ে বাড়িতে থাকা বিস্ফোরক শনাক্ত করে সেগুলো নিষ্ক্রিীয় করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সোয়াট যখন অভিযান শুরু করে, তখন তারা যখন দেখে পালানোর পথ নেই তখন তারা আত্মহনন করে।’ তিনি বলেন, ‘ভেতরে আমরা যে দৃশ্য দেখেছি সেটি ছিল বীভৎস চিত্র। মাংস ছড়ানো আছে গোটা কক্ষে। এই দৃশ্য ধারণ করলে আপনারা প্রচার করতে পারতেন না ‘

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, তাদের কাছে মনে হয়েছে, সিলেটের আতিয়া মহলে যে জঙ্গিরা ছিল, এখানেও তাদের অনুসারীরাই ছিল। তবে এই আস্তানাটি জঙ্গিরা লোকানোর কাজে ব্যবহার করতে বলে ধারণা করছেন তারা।

আরেক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এই আস্তানায় যারা ছিলেন তাদেরকে স্থানীয় কেউ চিনতেন না। তারা বাড়ি ভাড়া নেয়ার পর সেখান থেকে বের হতেন না তেমন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.