সিটিনিউজবিডি : চট্টগ্রামে ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিগ্ন করতে রেলে ৮৫ অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। কিন্তু যাত্রার প্রথমদিন আন্তঃনগর ট্রেনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম কোচ নিয়ে পরিবহন শুরু করেছে।
এতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগকে। তারা বলছেন, অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার বিষয়টি শুভঙ্কারের ফাঁকি। মেক্যানিক্যাল বিভাগের কিছু কর্মকর্তা প্রকৃত তথ্য আড়াল করে ভুল তথ্য প্রদানের কারণে এমন ঘোষণা দিয়েছেন মন্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলমন্ত্রী ঈদ উপলক্ষ্যে ৮৫টি অতিরিক্ত কোচ যুক্ত করার ঘোষণা দিলেও নিয়মিত শতাধিক কোচ সংকট নিয়ে চলাচল করছে রেল। ৮৫টি বগি যুক্ত হলেও নিয়মিত সংকট পূরণ হচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত কোচ যুক্ত করার বিষয়টি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছুই নয়।
রেলওয়ে পরিবহন শাখা সূত্র জানায়, ঘোষণা দেওয়া হলেও ওয়ার্কশপ থেকে কাঙ্খিত ট্রেনের কোচ পাওয়া যায়নি।ফলে ঈদে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন ট্রেনগুলোতে বাড়তি কোচ যুক্ত করা যাচ্ছে না।
এদিকে পরিবহন বিভাগ বগি সংকটের বিষয়টি স্বীকার করলেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন অধিকাংশ কোচ যুক্ত হয়েছে। তবে রেলের পরিবহন বিভাগ বলছে অতিরিক্ত কোচ ছাড়াই যাত্রী পরিবহন শুরু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮টি আন্তঃনগর ট্রেনে এখনো ২২টি এবং মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনে ৩৯সহ মোট ৬১টি কোচ সংকট রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট রুটের কালনী এক্সপ্রেসের ২টি, উপবনে ২টি, জয়ন্তীকাতে ১টি, গোধূলীতে ১টি, তূর্ণা নীশিতায় ১টি, উদয়ন-পাহাড়িকায় ২টি, মেঘনায় ৩টি, উপকূল এক্সপ্রেসে ২টি, রংপুর এক্সপ্রেসে ৩টি, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে ২টি, বিজয় এক্সপ্রেসে ১টিসহ পূর্বাঞ্চলে ৬১টি বগির ঘাটতি থাকছে।
ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন ঠিক থাকছে না। এসব রুটে অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনে কোচ ঘাটতি রেখেই ঈদের ট্রেন চালানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মেকানিক্যাল বিভাগের দায়িত্বশীল কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি বলেন, ঈদে কোচ সংযোজনের বিষয়ে মন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিচ্ছেন কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহি ৮৫ কোচ সংযোজন করার কথা বলা হলেও ৬০টির বেশি কোচ সংযোজন হবে না।
পরিবহন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সূবর্ণ এক্সপ্রেস, গোধূলী ও তূর্ণানীশিতায় ১৮টি করে কোচ থাকার কথা থাকলেও সংকটের কারণে ১৬ থেকে ১৭টি করে চলতো এতোদিন। তবে সোমবার থেকে এসব ট্রেনে বগি বাড়িয়ে ২০টি করে চালানো হচ্ছে।
পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ সূত্রে জানা যায়, জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ৪১ কোচ মেরামত করা হয়। এছাড়া আগামী ১৫ তারিখ আরও ২২টি কোচ মেরামত করে ঈদের বিশেষ ট্রেন ও বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে যুক্ত করা হয়।
তবে মেরামত কোচের অধিকাংশই দ্বিতীয় শ্রেণীর হওয়ায় আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ সঙ্কট কাটছে না। ফলে ঘোষণা দেয়া হলেও ঈদের যাত্রী পরিবহনে রেলের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা।
এদিকে ঈদের অগ্রিম টিকেট নেওয়া যাত্রীরা বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। প্রথমদিন যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকলেও ঈদের আমেজই বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত ৯ জুলাই সোমবারের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়। তারা বিভিন্ন ট্রেনে যাত্রা করেছেন।
প্রথমদিনের যাত্রায় যাত্রীরা সুষ্ঠুভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমদিন যাত্রীদের ভিড় ছিল না। তবে ঈদের আমেজই বাড়ি ফিরেছেন ঘরমুখো মানুষ।