সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ

0

নিজস্ব প্রতিনিধি :  চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাংবাদিক ও প্রগতিশীল মানুষের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ । তিনি শুধু লেখক নন, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে আজীবন তাঁর সততা ও নিষ্ঠা ধরে রেখেছেন। সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ। প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় তাঁর চেতনা শাণিত ছিল যা তাকে প্রকৃত মানুষ হতে সহায়তা করেছে। তিনি শুধু একজন মেধাবী সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় পান্ডিত্য দেখিয়েছেন। নিজ কর্মগুণে তিনি সব বয়েসী মানুষের এতো প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন যে, তাকে চাইলেও কখনো ভোলা যাবে না। শোকসভা থেকে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ নিভৃতচারী গুণি এ সাংবাদিকের নামে চট্টগ্রামে বা রাউজানে কোন সড়ক বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি জানান।

রোববার(২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রবীণ সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদের শোক সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা এসব বলেন

সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিদ্দিক আহমেদ এর নামে চট্টগ্রাম নগরী বা রাউজানে একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রেসক্লাবের পাঠাগারে তার নামে একটি কর্ণার ও একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের দাবি জানানো হয়। সিদ্দিক আহমেদ এর জীবন ও কর্মকে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য শোক সভায় এই দাবি জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

প্রেস ক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত শোক সভা ।

প্রেস ক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালি ব্যাংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউল হাকিম, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সিইউজে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, সিদ্দিক আহমেদের পুত্র তানিম আহমেদ সিদ্দিক, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, সাংবাদিক হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, সদস্য আসিফ সিরাজ, সিইউজের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, সিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, বাসস’র ব্যুরো প্রধান সমীর কান্তি বড়ুয়া, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, স্থায়ী সদস্য নুর মোহাম্মদ রফিক, সিইউজের সহ-সভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত, যুগ্ম সম্পাদক স্বরূপ ভট্টাচার্য, অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল কান্তি ধর, প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, স্থায়ী সদস্য ড. সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ প্রমুখ।

সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সভাপতির বক্তব্যে কলিম সরওয়ার বলেন, প্রেস ক্লাব পাঠাগারে সিদ্দিক আহমেদ এর নামে একটি কর্নার ও একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে কার্যকরী কমিটির সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, সিদ্দিক আহমেদ ও আমি প্রায় একই সময়ে সাংবাদিকতা শুরু করি। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মী, সাংবাদিক, সাহিত্যকর্মীদের মাঝে তিনি খুবই জনপ্রিয়। তিনি একজন সফল মানুষ।

শোকসভায় বক্তারা বলেন, সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি ভালোবাসা সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি বই ও জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতেন এবং তা অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তিনি ছিলেন সৎ, সাহসী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নোয়াননি। সিদ্দিক আহমেদ শুধু একজন সাংবাদিক নন, লেখক ও আদর্শ মানুষ হিসেবে আজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন। আজীবন সৎ এই সাংবাদিক তাঁর লেখা ও কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। চট্টগ্রামে থাকার কারণেই সিদ্দিক আহমেদের মতো মানুষের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। তাঁর আদর্শ ও জীবনাচরণের মধ্য দিয়েই তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ ও প্রগতিশীল মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় শোকসভায় সিদ্দিক আহমেদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী। সভার শুরুতে সিদ্দিক আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক সিদ্দিক আহমেদ গত ১২ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। সিদ্দিক আহমেদের লেখা এ পর্যন্ত আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দুটি স্মারক গ্রন্থও। তিনি দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক হিসেবে ২০১৫ সালে পেশাগত জীবনের ইতি টানেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.