চট্টগ্রাম মেডিকেলে রোগীরা অবহেলায় অতিষ্ঠ

0

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক)হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে অনিয়ম, এই অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সংশ্লিষ্ট সকলেরই যেনগাঢ়ছড়া ভাব, কে নেন কার খবর! কিছু কিছু চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও নিরাপত্তাকর্মীর চরম দুব্যবহারে অতিষ্ঠ রোগীরমানুষজনরা। প্রতিটি ওয়ার্ডে আছে নিরাপত্তাকর্মী। তাদের পদে পদে দিতে হয় টাকা। গেটে তালা ঝুলিয়ে রাখে নিরাপত্তা কর্মীরা। সেই সুযোগে দর্শনার্থীদের কাছথেকে টাকা নিচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে। চলছে সিট বাণিজ্যও।

শফিউল আলম নামে একব্যক্তি জানান, “চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে কোনো রোগীর চিকিৎসা করালে প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ লিখা হয় সেগুলো মেডিকেলেরআশপাশ ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না।”

“আমার মাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে দুর্ভোগের শিকার হয়েছি, আমরা সবাই এর প্রতিকার চাই।” জানান, জাসেদ উদ্দিন নামের একব্যক্তি।

বেসিক ল্যাবের কর্মচারীর দুব্যবহার: চট্টগ্রাম মেডিকেলের আরো অনেক অনিয়মের মাঝে একটি, লিখে দেওয়া হয় অমুক ল্যাব থেকে রোগীর এক্সরে ও পরীক্ষাগুলো করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁরা (ডাঃ) বলেন না যে আপনার পরিচিত যে কোন ভাল ল্যাব থেকে এইসব পরীক্ষা করে নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট ল্যাব মানে তোকী সকলেই জানে। চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে লিখে দিলেন, বেসিক ল্যাব থেকে রোগীর এক্সরে, প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে নিয়ে আসেন।

জানা যায়,  বেসিক ল্যাব থেকে একজন কর্মচারী আসে মেডিকেলে, গত ১৫ এপ্রিল ১৭ দুপুর পৌনে ৩ টার দিকে। তিনি পরীক্ষার জন্য রক্ত নিতে গেলে বারবারসুঁই ভুলভাবে দেয়, তা দেখে রোগীর অভিভাবক শিশু রোগীর কষ্ট সইতে না পেরে বলে উঠলেন এরকম হলে রক্ত পরীক্ষার দরকার নেই, আমি অন্যলোক দিয়েরক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেব। তাই সে তুই ব্যবহার ও কসাই চামারের মত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল। নির্ধারিত সময়ে সে না আসায় খুঁজ নিতে গেলে সেরোগীর মানুষের সাথে গায়ে পড়ে তর্ক শুরু করে নানা উছিলায় মেডিকেলে আসার পূর্বেও। অথচ এখই সময়ে ওই রোগীর এক্সরেও করতে আরও দুইজন লোকএসেছে বেসিক ল্যাব থেকে। তারা রোগীর মানুষের দিয়ে আসা ঠিকানামত হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর নাম ধরে প্রথমত ডাকলেই সাথে সাথেরোগীর খুঁজ মিলে। সে দু’জনের আচরণ সন্তোষজনক।

নিরাপত্তাকর্মী সুমনের দুব্যবহার ও দুর্নীতি: নাইটে ডিউটিরত (চমেক) ২তলা ৮ নং ওয়ার্ডের নিরাপত্তাকর্মী সুমন রোগীদের স্বজনের সাথে জগন্যতম দুব্যবহারকরে। অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীর তুলনায় সুমন দুর্নীতিতেও অন্যতম। অর্থ ব্যথিত রোগীর সাথে দেখাই করতে দেয়না দর্শনার্থীদের। জানা যায়, ৮ নং ওয়ার্ড ১নং সিটের রোগীর মা ১৪ এপ্রিল ১৭ সকালে হাসপাতালের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন দেখে বাহিরে গিয়ে টয়লেট সেরে আসতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী সুমন অর্থ ছাড়াকিছুতেই যেতে দিল না, ঝগড়া করেছে অনেক, আরও বলেছে হাসপাতালের টয়লেট তোমরা পরিস্কার কর। রোগীর মা জানান, “হাসপাতালের নার্সদেরঅনেকবার বলার পরও অক্সিজেনের বোতলে পানি দেয়নি সারা রাত কিন্তু তাঁর শিশু সন্তানের নাকে অক্সিজেনের পাইপ সারা রাত দিয়ে রাখায় রোগীর কষ্টহয়েছে কিন্তু সেই কষ্ট কোনো কাজে আসেনি, সঠিকমত চিকিৎসা হয়নি জানান তিনি।” ১৫ এপ্রিল ১৭ সকালে সেই ১ নং সিটের শিশু রোগীটা মারা যায়।এভাবে প্রতিনিয়তই অবহেলা ও চরম দুর্ভোগের শিকার হওয়ার পর মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। নিরাপত্তাকর্মী সুমন গেইট ছেড়ে ওয়ার্ডের ভিতরে এসে ২০ নংসিটের রোগীর পিতাকেও সেই মাঝ রাতে রোগীর পাশ থেকে ধাক্কা দিতে দিতে বাহির করে দিল, কিছুক্ষণ পর সে সুমনকে টাকা দিয়ে রোগীর পাশে ফিরে আসে।১৫ এপ্রিল ১৭ দুপুরে প্রায় ১০ বছর বয়সী সেই শিশু রোগীটাকেও চিকিৎসকরা বাঁচিয়ে তুলতে পারেনি। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে রোগীর স্বজনদের বড় বড়কথা আর গাল মন্দ শুনালেন। এই রোগীগুলো হয়তো ভুল চিকিৎসায় মারাগেল, তানাহলে রোগীদের অভিভাবকের সাথে দুব্যবহারে অমঙ্গল ডেকে আনলো বলেরোগী মারা গেল জানান রোগীর স্বজনরা। মেডিকেলে কিছু কর্মচারী রোগীর একটা কাজও না করেই কিছুক্ষণ পরপর এসে টাকা দাও টাকা দাও করে। টাকা নাদিলে অথবা টাকা দিতে কেউ অপারগ হলে বড় বড় কথা শুনতে হয় রোগীর স্বজনদের।

আপনারা বেতন পাওয়ার পরও রোগীদের অভিভাবক ও দর্শনার্থীদের থেকে টাকা চান কেন জানতে চাইলে সুমন বলেন, “তাদের বেতন ২০০০ টাকা তাই তারারোগীদের স্বজন থেকে অর্থ আদায় করে।” জানা যায়, এইসব নিরাপত্তাকর্মীরা ৮ ঘন্টা করে দৈনিক ৩ জন ডিউটি করে থাকে, এর মধ্যে অতিরিক্তও আছেআরও কয়েকজন। সেজন্য, একেক সময় একেকজনকে গেইটে দেখা যায়, তাই প্রতিজনকে অর্থ দিতে অপারগ হলে রোগীকে পড়তে হয় দুর্দশায়।

ওয়ার্ড গুলোতে নিরাপত্তাকর্মীর দরকার হয়না: এমনটি অভিমত করেন রোগীদের অভিভাবকরা। কারণ মেডিকেলের ওয়ার্ডে কেউ অপ্রয়োজনে প্রবেশ করতেচায়না, চায়না কেউ সেখানে গিয়ে বসে থাকতে। গেইটে নিরাপত্তাকর্মী থাকার কারণে রোগীর জন্য ঔষধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা নেওয়া করার সময়আরও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে রোগীদের ছোটখাট সেবার জন্য একটি ওয়ার্ডে সকাল বিকাল ও রাতে মোট ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেই যথেষ্টে,অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারী রেখে তাদের দিয়ে অর্থ আদায় ও রোগীর আত্মীয় স্বজন দর্শনার্থীদের প্রতি দুব্যবহার করার মানেই হয়না।

রোগীকে নিয়ে জরুরী বিভাগ এলে: রোগীর নাম লিখে রশিদ হাতে দেন কিন্তু নাম খাতায় এন্ট্রি করে না, কোথাই যেতে হবে তা বলে না এবং ওয়ার্ড পর্যন্তযাওয়ার পথ সঠিকভাবে দেখিয়ে না দেওয়ার কারণে রোগীকে নিয়ে ঘুরপাক খেতে হয়, পর ফিরে আসতে হয় আবার আগের জায়গায় খাতায় নাম এন্ট্রি করতে,এভাবে হয়রানি করা হয়। মেডিকেলের ভিতরে সরকারি ন্যায্যমূল্যের ঔষধের দোকান লিখা থাকলেও ন্যায্যমূল্যে ঔষধ পায়না জানান ঔষধ ক্রেতারা।

ব্যারিষ্টার মনোয়ার হোসেন ( চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান) এ বিষয়ে অবগত হন, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগ প্রেরণের পরামর্শ দেন।

সচেতন মহল মনে করেন, রোগীদের স্বজন থেকে অর্থ আদায় বা অর্থের বিনিময়ে রোগীর সেবা করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।চট্টগ্রাম মেডিকেলে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে হলে, রোগীদের প্রতি অবহেলা ও দুব্যবহার রোধ করতে হলে দরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের নজরদারি ও সরকারিকঠোর পদক্ষেপ।

কাজী ইব্রাহিম সেলিম, কবি ও সাংবাদিক, সভাপতি, অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.