নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়েই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন

0

..শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়েই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিরীক্ষা করাতে সম্মত হয়েছে সরকার।
একই সঙ্গে আইএমএফের কাছ থেকে সম্প্রসারিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) কর্মসূচির আওতায় নেওয়া ঋণের শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি ডলারও নিচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও পাঁচ দিন আগে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা হয় স্থানীয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। অথচ আইএমএফ শর্ত দিয়েছে বিপিসির জন্য আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে।…একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আইন পরিবর্তন করতে আমি রাজি নই। তাই ইসিএফের আওতায় শেষ দুই কিস্তির অর্থ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ইসিএফের শেষ দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে বিপিসির সব হিসাব কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করানোর শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এটা নিয়েই বিপত্তি বাধে। আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী বিপিসির আয়-ব্যয়, সম্পদসহ সার্বিক বিষয় আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করাতে সরকার রাজি ছিল না। সে কারণেই আইএমএফের কাছ থেকে সাত কিস্তিতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার নেওয়ার শেষ দিকে এসে সরকার বাকি দুই কিস্তির অর্থ না নেওয়ার মতো সিদ্ধান্তে যায়।
কিন্তু ঈদের ছুটির ঠিক আগমুহূর্তে নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত ঈদের পর হঠাৎই পরিবর্তন হয়ে যায়। ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে সচিবালয়ে গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফের শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি ডলার বাংলাদেশ নিচ্ছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এ অর্থ পাওয়া যাবে।’
ইসিএফ সহায়তার কিস্তি নেওয়ার বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার বিষয়ে মুহিত বলেন, ‘বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিপিসির সমুদয় হিসাব অডিট করার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ কারণে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানতাম সরকারি কোনো সংস্থা বিদেশি কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করানো যায় না। আমি মনে করেছিলাম যে এটা করতে হলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি ইসিএফ ঋণের শেষ দুই কিস্তির অর্থ না নেওয়ার কথা বলেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সরকারি সংস্থার নিরীক্ষা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে করানো যাবে না, এমন কোনো শব্দ নেই। যেকোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করানো যাবে বলে উল্লেখ আছে। কাজেই বিপিসির হিসাব বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।’
অর্থমন্ত্রী বিপিসিরও এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘বিপিসি যেভাবে চলছে, সেভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। ব্যাডলি ম্যানেজড। চোরটোর বলা যায়। এর আগে যে চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁর সময় থেকেই এমনটা হয়েছে। মানুষ হিসেবে সৎ ছিলেন কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি কোনো যোগ্যতা দেখাতে পারেননি। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানটি হরিলুটের জায়গা হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো ব্যালেন্সশিটও নেই। চুরির সুবিধার্থে কোনো নিরীক্ষাও করা হয় না।’
আইএমএফ পর্ষদ ইসিএফের আওতায় ২০১২ সালের এপ্রিলে সাত কিস্তিতে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইসিএফের আওতায় কোনো একক দেশের জন্য আইএমএফের এটিই সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঋণ। ঋণ নেওয়ার পর সাড়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত পরিশোধ অব্যাহতি (গ্রেস পিরিয়ড) থাকবে। এরপর সাড়ে চার বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। তিন বছর মেয়াদি এ কর্মসূচির প্রতি কিস্তিতে অর্থের পরিমাণ ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এরই মধ্যে সরকার পাঁচ কিস্তির অর্থ নিয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.