চন্দনাইশে প্রশাসন এবং গ্রামবাসী মুখোমুখি

0

নিজস্ব সংবাদদাতা,চন্দনাইশ :  কাঞ্চননগর রেল ষ্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ি ঢালে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গুচ্ছ গ্রামবাসীদের বাঁধার মুখে কাজ করতে পারেনি প্রশাসন। পরে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় বলে জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান।

স্থানীয়রা জানান, গত রোববার ৭ মে রাতে উপজেলার কাঞ্চননগর রেল ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গুচ্ছ গ্রামের স্থানে আবাসন নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল উপজেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে গত ৭ মে বুলডোজার দিয়ে কাজ করতে গেলে স্থানীয়রা বাঁধা দেয়।  সোমবার পুনরায় স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে বাঁধা প্রদান করে। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান, এলাকার মেম্বার ও বাঁধা প্রদানকারীদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠকে ডাকে।

সোমবার দুপুরে ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক উপজেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান সরকারের নির্দেশনা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে। একটি পক্ষ অবৈধভাবে গুচ্ছ গ্রামের সরকারি খাস জায়গা দখল করে আছে। এটি সরকারের খাস জায়গা। এখানে অবশ্যই হত দরিদ্র, নদী ভাঙ্গা, ভূমিহীন মানুষদের বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।

মঙ্গলবার ৯ মে থেকে কাজ শুরু হবে, কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে না। অপরদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেছেন, এটি একটি প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবায়নাধীন গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকরণ প্রকল্প। যে জায়গায় গুচ্ছগ্রাম স্থাপন করা হচ্ছে, সেটি একটি সরকারি খাস জায়গা। এ প্রকল্পটি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন দপ্তরে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন ছিল।

সম্প্রতি প্রকল্পটি অনুমোদনের পাশাপাশি অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে জবর দখলকারী কিছু লোক এতে বাঁধা প্রদান করে। এখানে জনগণের কোন স্বার্থ নাই। এলাকার গৃহহীন মানুষ এখানে তাদের বাসস্থান পাবে। যেকোন কিছুর বিনিময়ে এ প্রকল্পের কাজ আজ ৯ মে থেকে শুরু হবে বলে তিনি বলেন। এদিকে কাঞ্চনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিগত ১০/১২ বছর আগে কাঞ্চননগর রেল ষ্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ি এলাকায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাস জমিতে গুচ্ছ গ্রামের জন্য নির্ধারন করা হয়।

তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত হুমায়ুন কবির চৌধুরীর সময় জায়গা সমান করা হয়। অনুমোদন না পাওয়ায় গুচ্ছ গ্রামের কাজ স্থগিত ছিল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ গুচ্ছ গ্রামের প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়ে উপজেলা প্রশাসন কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল এতে বাঁধা প্রদান করে। এ ব্যাপারে তাদের কোন কাগজপত্র থাকলে উপস্থাপন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে বলা হলে, কেউ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। গতকাল সোমবার অবৈধ দখলকারীরা বাঁধা প্রদান করলে, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় উপজেলা পরিষদে একটি বৈঠকে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। ফলে আজ থেকে গুচ্ছ গ্রামের কাজ শুরু হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

সে সাথে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি জানান। এটি পূর্ণাঙ্গ খাস জমি। এখানে যারা গাছের চারা রোপন করেছে, তারা জায়গার মালিক নয় বলে তিনি দাবী করেন। অপরদিকে গ্রামবাসীদের পক্ষে এড. সিহাব উদ্দিন রতন বলেছেন, এখানে গুচ্ছ গ্রামের নামে চোর-ডাকাতের আস্তানা কোনভাবে করতে দেয়া হবে না। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে।

এখানে উদ্বাস্তুরা অবস্থান নিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। তাছাড়া গাছ কেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে দেয়া যাবে না। যে জায়গায় গুচ্ছ গ্রাম স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন, সেখানে মালিকানাধীন অনেক জমি রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মালিকানায় থেকে ভোগদখলে ছিলেন। সেখানে গুচ্ছগ্রাম করা আইনগত যথাযথ নয়। যেকোন কিছুর বিনিময়ে এটা প্রতিহত করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.