কিডনি সুরক্ষায় পায়ে হেঁটে প্রচারণা চালাচ্ছেন সন্দ্বীপের ছিদ্দিক

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ::সন্দ্বীপের আবু বকর ছিদ্দিক নিজের কিডনি হারিয়ে অন্যদেরকে সুস্থ রাখার লক্ষ্যে কিডনি সুরক্ষায় দেশব্যাপী সচেতনতার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন। পায়ে হেঁটে ইতিমধ্যে তিনি টেকনাফে থেকে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে পটিয়া উপজেলায় রয়েছেন বলে জানা যায়।
আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, নিজের একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। অপারেশন করে সেটি বাদ দিতে হয়েছে। আরেকটি কিডনি নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছেন তিনি। কিডনি হারিয়ে উপলব্ধি হয়েছে ঠিক সময়ে। সচেতন হলে তার এতবড় ক্ষতি হত না। সচেতনতার অভাবে আর যাতে কারো এ ধরনের ক্ষতি না হয়, সে জন্য তিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পায়ে হেঁটে কিডনি সুরক্ষায় প্রচারণা শুরু করেছেন।

গত ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ইতিমধ্যে তিনি টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ এসব উপজেলা শেষ করে বর্তমানে পটিয়ায় রয়েছেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সাধারণ মানুষ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করে নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নেন। চন্দনাইশে ৭ মে থেকে গতকাল ১০ মে পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন এলাকায় তার সে প্রচারণার হ্যান্ডবিলটি বিতরণ করে পটিয়া উপজেলায় পার হয়েছেন।

“বাঁচব শত বছর, কিডনি রাখব নিরাপদ”-এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে চলতি বছর ১৪ এপ্রিল সকাল ১০ টায় টেকনাফের জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণ শুরু করেন সন্দ্বীপের আবু বকর ছিদ্দিক। দীর্ঘ অভিযাত্রায় তিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া যাবেন বলে জানান। এক মেয়ে, দুই ছেলের পিতা ছিদ্দিকের চট্টগ্রামে হাঁস-মুরগির খামার আছে বলে জানান। পায়ে হেঁটে সারা দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে, তিনি বলেন, তার বাম পাশের কিডনিটি নষ্ট হয়েছে দুই বছর। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে নষ্ট হয় তার কিডনি। পরে তা অপসারণ করা হয়। এখন ডান পাশের কিডনি নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন ছিদ্দিক। তার মত আর কারো যাতে কিডনি নষ্ট না হয়, পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণের কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি।
যাত্রা শুরুতেই তিনি টেকনাফের নির্বাহী কর্মকর্তা (অ:দা:) তুষার আহমদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সুমন বড়–য়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। যাত্রাপথে তিনি প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন পয়েন্টে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক প্রচারপত্র বিলি করে যাচ্ছেন। তার প্রচারপত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি ঘন্টা ৫ জন রোগী মারা যাচ্ছে বলে বলা হয়েছে। বিশ্বের প্রতি ১০ জনের ১ জন কিডনি রোগী রয়েছে। সে সাথে কিডনি রোগের ৮টি সমস্যা, কিডনি সুস্থ ও নিরাপদ রাখার ১১টি উপায় সে প্রচারপত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিডনি রোগীর লক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সব সময় কোমরে ব্যথা, প্রস্রাব করতে ব্যথা, প্রস্রাবের বেগ কম হওয়া, রং হলুদ, পুঁজ পড়া, জ্বর ও বমিভাব, মাথা ঘুরানো, খাবারে অরুচি।

তিনি বলেন, কিডনি রোগ এড়াতে দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করা, ধূমপান ও পানীয় এ্যালকোহল জাতীয় খাবার পরিহার, কোমরে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার থেকে দূর করা, ফরমালিন ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাবার পরিহার করা, স্বাস্থ্যসম্মত শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন। সে সাথে প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রমের পাশাপাশি খেলাধূলা ও ব্যায়াম করা

তিনি বলেন, চলার পথে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলেও পিছপা হবেন না। যাত্রাপথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রচারপত্র দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকদের মতে আবু বকরের একটি কিডনি না থাকায় তিনি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছেন। নিজেকে সুস্থ রেখে তাকে হাঁটতে হবে। পাশাপাশি কয়েকদিন পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে পারবেন তিনি। গতকাল ১০ মে তার সাথে কথা হলে তিনি পটিয়ায় রয়েছেন এবং সুস্থ আছেন বলে জানান। তার এ পথযাত্রা সফল করতে সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.