বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক সম্পূর্ণ  – ১৫৫ অভিবাসীকে ফেরত

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার)  :  দীর্ঘ দুই মাস পর স্বদেশে ফিরে এসেছেন মিয়ানমার সমুদ্র উপকূল থেকে ভাসমান অবস্হায় উদ্ধারকৃত ১৫৫ বাংলাদেশি নাগরিক। ২২ জুলাই বুধবার দুপুর ২টার দিকে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করে মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগ। এরপর অভিবাসীদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় বিজিবি। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এদেশে পৌঁছেন।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেকুবনিয়া বিজিপি ক্যাম্পে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে এক ‘পতাকা বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি’র ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ রবিউল ইসলাম। অপরদিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমার বিজিপির ১নং সেক্টরের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ক্যাই তুই য্যা। এ দিকে পতাকা বৈঠক শেষে ১৫৫ বাংলাদেশীকে নিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় পৌঁছে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং করেন ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ রবিউল ইসলাম। জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রেস ব্রিফিং কালে অধিনায়ক বলেন মিয়ানমারে আরও বহু অভিবাসী রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ব্যাপক যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। শনাক্ত হলে পর্যায়ক্রমে অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনা হবে। ফিরিয়ে আনা অভিবাসীদেরকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ বৈঠক শেষে বাংলাদেশীকে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার। আগামীতেও দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। মংডু ইমিগ্রেশন বিভাগের উপ-পরিচালক সু নাই বলেন, বাংলাদেশে অভিবাসী প্রত্যাশীদের ফেরত দেবার এটি ৩য় পর্যায়। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে ফেরত দেয়া হবে। এদিকে ফিরিয়ে আসা অভিবাসীরা স্বদেশে ফেরৎ আসতে পারায় তাদের চোখে মুখে হাসির ঝলক দেখা গেছে। ২১ মে সমুদ্র উপকূলে ভাসমান অবস্হায় ২০৮ অভিবাসীকে উদ্ধার করে মিয়ানমার। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশী হিসেবে শনাক্ত ১৫০ জনকে ৮ জুন এবং ৩৭ জনকে ১৯ জুন ফেরত আনা হয়। এরপর ২৯ মে আরও ৭২৭ অভিবাসীকে উদ্ধার করে মিয়ানমার। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশী বলে তারা দাবি করে বিজিবি। যার মধ্য থেকে বুধবার ১৫৫ জনকে স্বদেশে ফেরত আনা হয়। ফেরৎ আসা ১৫৫ জন অধিবাসীদের মধ্যে নারায়নগঞ্জ ৪০ জন, ঝিনাইদহ ১৩ জন, মাদারীপুর ১৫ জন, কুমিল্লা ৬ জন, মাগুরা ৪ জন, পাবনা ১২ জন, যশোর ৮, সিরাজগঞ্জ ২৬, চুয়াডাঙ্গা ১১ জন, কুষ্টিয়া ৪, জয়পুর হাট ৫, সুনামগঞ্জ ৮ ও সাতক্ষীরার ২ জন। আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংখ্যা ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মনির বলেন, তাদের হাতে ৫ শ ২৮ জনের ১ টি তালিকা রয়েছে। সবাইকে অভিবাসন সংখ্যা পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমদ বলেন, ১৫৫ জন অভিবাসীকে পুলিশী হেফাজতে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে তাদেরকে আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্ব-স্ব বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী কবির বলেন, ফেরৎ আসা অভিবাসীদের মধ্যে কেউ দালাল আছে কিনা যাচাই বাছাই করা হবে। এ সময় উপস্হিত ছিলেন, কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এসএম আনিসুর রহমান, ১৭ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইমরান উল্লাহ, মেজর মাহবুব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেল জসিম উদ্দিন মজুমদার, উখিয়া থানার তদন্ত ওসি হাবিবুর রহমান, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, অভিবাসন সংখ্যার প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন প্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন প্রতিনিধি সহ বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ উপস্হিত ছিলেন। বিকেলে ১৫৫ জন অভিবাসীকে ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ৬ টি বাস যোগে বিকাল ৪ টার দিকে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.