দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাফির জিপিএ-৫ অর্জন

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের পটিয়ায় ২০১৬-২০১৭ এস.এস.সি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়ন কৃষি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুদ্দিন রাফি (বাবু) জিপিএ-৫ পেয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সে উজিরপুর গ্রামে অবস্থিত এ স্কুলেরই শিক্ষক মরহুম আজহার উদ্দীনের একমাত্র পুত্র। তার মাতার নাম নাজনিন আক্তার। তিনি একজন গৃহিনী। তার বড় বোন রিফাত আরা আখি চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে এবার। বর্তমানে সে ইউনিয়ন কৃষি স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করে। তার বড় বোনের উপার্জন দিয়েই রাফির লেখাপড়ার ব্যয় চলতো। তার ছোট বোন ইফাত আরা জুই পটিয়া সরকারী কলেজে কমার্স বিভাগ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। এস.এস.সি পরীক্ষায় রাফির শ্রুতি লেখক হিসেবে পটিয়া হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র দীপ্র বড়ুয়া পরীক্ষা দেয়।

রাফি ৪ বছর বয়সে ঘরের ছাদ থেকে তার দাদুর জন্য চুনের ডিব্বা আনতে গেলে ডিব্বাটি মাটিতে পড়ে চুন ছিটকে তার চোখে পড়ে। এর পর থেকে সে তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। তার বাবা প্রয়াত শিক্ষক আজহার উদ্দিন, দেশে ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য রাফিকে নিয়ে গেলেও তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়নি। সে ৫ম শ্রেণী ও ৮ম শ্রেণী থেকে প্রাথমিক ও জে.এস.সি পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেছিল। মেধাবী রাফি ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের সেবা করার স্বপ্ন লালন করেন। তার এই সাফল্যের জন্য তার মা-বোন, শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি সে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ বলে তথ্য দিয়ে বলেন, আজ আমার এ সাফল্যে সবচেয়ে বেশী খুশী হতেন আমার বাবা। তিনি তার জীবদ্দশায় আমার চোখের আলো ফিরানোর জন্য অনেক চেষ্ঠা করেছেন। দেশ ছাড়িয়ে ভারতেও আমাকে নিয়ে গিয়ে অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছেন।

কিন্তু অনেকে আশ^াস দিলেও আমার চোখের আলো আজও ফিরেনি। তবে আশাবাদি মহান সৃষ্টিকর্তা চাইলে হয়তো একদিন পৃথিবীর আলো দেখতেও পারি। এছাড়াও সে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার শ্রুতি লেখক দীপ্ত বড়ুয়া আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি চোখে না দেখলেও সব সময় মনের জানালায় একটি সুন্দর পৃথিবীর ছবি আকিঁ। সুযোগ পেলে আমিও ভবিষ্যতে আমার লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো ইনশাআল্লাহ। আমি আমার আগামীর পথ চলায় সকলের সহযোগিতা চাই। তার গৃহ শিক্ষক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাফি দৃষ্টিহীন হলেও মনের জানালায় সব কিছু যেন তার হাতের মুঠোই। সে সব সময় পড়াশুনার মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকাশে নিয়োজিত থাকে। সে পড়ালেখার পাশাপাশি গান এবং কম্পিউটারও চর্চা করে।
ইউনিয়ন কৃষি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুবল কান্তি চৌধুরী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়েরই শিক্ষক সদ্য প্রয়াত আজহার উদ্দিনের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তান রাফি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে গান এবং কম্পিউটার সহ সব কিছু চালাতে বেশ সিদ্ধহস্ত। এবারের ফলাফলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাফি এতই মেধাবী যে দৃষ্টি হারিয়েও সে তার মেধা-মনন ও প্রজ্ঞায় ইশ্বর প্রদত্ত উপহারে সমৃদ্ধ। সুযোগ পেলে রাফি ভবিষ্যতে নিজে যেমন স্বনির্ভর হবে, তেমনি দেশের জন্যও বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ^াস। আমি তার উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.