এম এ মজিদ:: কেউ চাকুরীজীবি, কেউ ব্যবসায়ী।সমাজের উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের মানুষ। সবাই মিলিত হয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর ঐহতহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। উদ্দেশ্য একটাই সব ভোদাভেদ ভুলে একপাতে সারবেন প্রথম রোজার ইফতার।
রোববার (২৮ মে) রোজার প্রথম দিনেই আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ভীড় জমে ধর্ম প্রাণ মুসল্লিদের। পবিত্র রমজানের প্রথমদিন নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে গিয়ে দেখা যায় ইফতারির বর্ণাঢ্য আয়োজন।আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানির তত্ত্বাবধানে ও মুসল্লি পরিষদের পরিচালনায় এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের শুভ উদ্বোধনে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে আপনারা প্রতিদিন অত্র মসজিদে এসে ইফতার করবেন।ইফতারের আগে তিনি েবিশেষ মুনাজাত করেন।
মাগরিবের আযানের আগে শয়ে শয়ে মানুষ ইফতারির প্লেট নিয়ে বসে আছেন। অপেক্ষার পালা শেষে মাগরিবের আজানের আগে সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য। হাজারো রোজাদারের এক সঙ্গে ইফতার যেমন ভ্রাতৃবন্ধন জোরদার করছে তেমনি নিজেদের মধ্যে নির্ভরতাও বেড়ে গেছে।
আন্দরকিলা শাহী জামে মসজিদে ইফতার বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত মাসুদ কামাল নামে একজন জানালেন, মসজিদে একসাথে ইফতারির আয়োজন বহু পুরোনো। তবে ব্যাপক আকারে আয়োজন হয়ে আসছে ২০০৪ সাল থেকে। এই আয়োজনে ধনী–গরিব ও তরুণ–বৃদ্ধরা একসঙ্গে বসে ইফতার করছেন। তিনি বললেন, ইফতারে এমনিতেই আল্লাহ তায়ালার রহমত, তার ওপর একসাথে ইফতারিতে সওয়াব অনেকগুণ বেশি। ইফতার মসজিদ কমিটির আয়োজনে হলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ইফতার আসে। আসরের পর থেকেই মুসল্লীদের আসা শুরু হয়। জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায় করে অনেকেই চলে যান। অনেকে থেকে যান তারাবিহ’র জন্য।
মুসল্লিরা জানান, মসজিদে ইফতার করতে জমায়েত হওয়া রোজাদারদের উদ্দেশে প্রতিদিনই রমজানের সময় পবিত্র কুরআনের তাফসির করা হয়। তাফসির শেষে মোনাজাত শেষে রোজাদাররা ইফতারে শরিক হন।
ইফতার মেন্যুতে মুড়ি, ছোলা, খেজুর, জিলাপি, আলুর চপ, সমুচা ও শরবত, বেগুনি, পেঁয়াজু, সেমাই থেকে শুরু করে নানা পদের খাবার থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী লোকজন নানা ধরণের খাবার নিয়ে আসে। মসজিদের কর্মচারী ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী ইফতারি সরবরাহে সহযোগিতা করেন।
মসজিদে কথা হয় ভিক্ষুক রশিদ মিয়ার সাথে। সারা দিন রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করলেও সন্ধ্যা হলেই চলে আসেন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। তিনি বলেন, হারা দিন রোজা রাইখ্যা একটু ভালা–মন্দ খাইতে মসজিদে আই। তাঁর মতো আরও অনেকের ইফতারের একমাত্র ভরসা হলো মসজিদ। এই মসজিদে প্রতিদিন ইফতার করেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ। এর মধ্যে হতদরিদ্ররাই শুধু নন, ইফতার করেন অনেক ভদ্রলোকও। ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত মসজিদের একজন খাদেম জানালেন, প্রতিদিন কমবেশি হাজার খানেক লোক এখানে ইফতার করতে আসেন। রোজা বাড়তে থাকলে লোকজন কমতে থাকে। কারণ, অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে যান।