ফিটনেসহীন ট্রলারে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে ঈদে ঝুঁকিপুর্ন যাতায়াত

0

নিজস্ব প্রতিনিধি,সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে বর্ষায় ঈদে যাত্রীরা পাড় হবে ঝুঁকি নিয়ে। সীতাকুণ্ড- সন্দ্বীপ ৭টি ফেরীঘাটে ১৪ টি ট্রলারের কোনটিতেই ফিটনেস নেই। যার ফলে ঈদে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হবে। প্রতিবছরই ঈদের সময় এসব ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ট্রলার ডুবে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্যদিকে ফিটনেস বিহীন ট্রলারে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার আতংকে আছে যাত্রীরা।

সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রী উঠা-নামা করার জন্য সীতাকুন্ড এলাকায় ৭টি ফেরী ঘাট রয়েছে। ঘাটগুলো হলো, সৈয়দপুরে বাঁকখালী ঘাট, মুরাদপুরে আমির মোহাম্মদ ফেরী ঘাট ও ফকিরহাট ফেরী ঘাট, বাড়বকুণ্ড ফেরী ঘাট, বাঁশবাড়িয়া ফেরী ঘাট, কুমিরা ফেরী ঘাট ও ভাটিয়ারী টোবাকো ঘাট। এই ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রী উঠানামা করছে। জেলা পরিষদ কর্তৃক ইজারা দেয়ার সময় শর্ত থাকে যে, যাত্রীবাহী ট্রলারে মালামাল আনা-নেয়া যাবে না। প্রত্যেক ট্রলারে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে হবে।

ফেরী ঘাট কর্তৃৃপক্ষ এবং ট্রলারের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সীতাকু- থেকে ৭টি ঘাটে সন্দ্বীপে প্রতিদিন যাতায়াত করে প্রায় দুই হাজার যাত্রী। ঈদের সময় এ সংখ্যা বেড়ে তিন থেকে আড়াই হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে। প্রতিটি ঘাটে প্রতিদিন সকাল-দুপুর দুটি ট্রলার সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এগুলোর একটিরই ফিটনেস নেই। ট্রলার মালিকরা ফিটনেস কোন কর্তৃপক্ষ থেকে নেবে তাও তারা জানে না। অথচ এসব ট্রলালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রী আসা-যাওয়া করছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ নৌপথে নিয়মিত চারটি যাত্রীবাহী জাহাজ থাকলেও বর্তমানে একটি মাত্র সচল আছে। এবারের ঈদে এই জাহাজের উপর ভরসা করে যাত্রীদের চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যেতে হচ্ছে। যার কারণে ঈদে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারেই সন্দ্বীপে যাতায়াত করছে।

কুমিরা ফেরী ঘাট ও ভাটিয়ারী টোবাকো ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ট্রলারে ৭০জন যাত্রী উঠার ক্ষমতা থাকলে সেখানে ১২০-১৫০ জন যাত্রী উঠছে। পাশাপাশি মালামালও বহন করা হচ্ছে। ঘাট ইজারাদার তাতে বাঁধা না দিয়ে বরং যাত্রীদের ট্রলারে উঠতে উৎসাহ দিতে দেখা গেছে।

যাত্রীরা জানান, সমুদ্রগামী ট্রলারে জীবনরক্ষাকারী বয়া ও জ্যাকেট, রেডিও, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অতিরিক্ত আরও লাইফ জ্যাকেট, দিক নির্ণয়ক যন্ত্র থাকার কথা থাকলে কোনটিই নেই।

দমকা হাওয়া ও ঝড়- বৃষ্টিতে নাজুক এসব ট্রলার ডুবে প্রাণহানির ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাটিয়ারী টোবাকো ঘাটের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, ‘ট্রলার স্বল্পতার কারণে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী ট্রলারে না উঠার জন্য বললেও তারা শুনে না। বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’ এদিকে নৌপথে সন্দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ‘আমরা সন্দ্বীপবাসী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

ঈদ উপলক্ষে অন্তত সমুদর পারাপারের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা থাকলেও তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঈদে সন্দ্বীপবাসীর জন্য নৌ যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে অভিযোগ আছে, অধিক মুনাফার লোভে জেলা পরিষদের ইজারারাদার স্টিমারের পরিবর্তে অবৈধ মালবাহী বোট ও ঝুঁকিপুণ স্পিড বোডে যাত্রী পারাপার করছে। যার ফলে প্রায় সময় যাত্রীদের সমুদ্র পড়ে যাওয়া, যাত্রী নিয়ে মাঢপথে নৌযান অচল হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটছে। এসময় সমুদ্র উত্তাল থাকে।

তাই এসময়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। যাত্রীদের অভিযোগ, স্পিডবোটের ভাড়া ৪০০ টাকা হলেও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়। তাই অবৈধ নৌযানে যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গত ঈদেও আগে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্টিমার সার্ভিসের ১৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত হয়।

কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার সাথে ইজারাদাররা দুই তীরে নিরাপদে উঠানামার নামে যাত্রী পতি ১০টাকা করে অতিরিক্ত ২০ টাকা নেন। কিন্তু ঘাটের ইজারাদার উঠানামার জন্য পর্যাপ্ত ছোট নৌকা রাখেন না। যার ফলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অন্য নৌকা করে জাহাজ থেকে তীরে নেমে আসতে হয়। এছাড়াও মালের ভাড়ার নামে রীতিমত নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন নৌযানে যাত্রীর সাথে থাকা ৩০ থেকে ৪০ কেজি পযর্ন্ত মালামালের জন্য ভাড়া দিতে হয়না। কিন্তু কুমিরা -গুপ্তছরা ঘাটে পনের কেজির অতিরিক্ত মালামালের জন্য কেজি প্রতি তিন টাকা হারে মাশুল আদায় করা হয়। তারপরও যাত্রীরা সময় সাশ্রয় এবং দ্রুত পারাপারের জন্য অনেক সময় স্পিড বোটে যাতায়াত করে থাকেন।

সন্দ্বীপবাসীর অভিযোগ, কুমিরা-গ্রপ্তাছরা ঘাট থেকে জেলা পরিষদ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপদ উঠানামার জন্য কোনো উদ্যোগই তারা নেয়নি। দীর্ঘদিন জেলা পরিষদ দুই তীরে কোন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেনি।

যার ফলে রোদ কিংবা বৃষ্টিতে যাত্রীদের খোলা আকাশের নীচেই অপেক্ষা করতে হয়। বড় নৌযান থেকে নেমে কখনো কোমর, কখনো বুক সমান পানি ডিঙিয়ে জীবন বাজি রেখে সন্দ্বীপের যাত্রীদেরকে কুলে উঠতে হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.