আড়ং দুধ নিয়ে সাবেক কর্মীর গুরুতর অভিযোগ

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: ব্র্যাকে ২৬ বছর কাজ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটির ডেইরি প্রকল্প আড়ং দুধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। তার দাবি, এই জালিয়াতি জানে বলে ব্র্যাকের কোনো কর্মী আড়ং দুধ বিনা পয়সাতেও খায় না। তার দাবি, দুধ ঘন করার জন্য আড়ং দুধে ‘দুই নম্বর’ গুড়া দুধ মেশায়।

ব্র্যাকের ডেইরি প্রোডাক্টের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপন খলিলুর রহমান অবশ্য এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, তারা পুরোপুরি মান বজায় রেখেই পণ্য বাজারজাত করেন।

যিনি এই অভিযোগ করেছেন, তার নাম শরিফ তাসলিম রেজা। তিনি ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে ছিলেন। সম্প্রতি তার চাকরির মেয়াদ ২৬ বছর পূর্তির পর তাকে অবসরে পাঠানো হয় হঠাৎ করেই।

আর ব্র্যাকের চাকরি খুইয়ে শরিফ তাসলিম রেজা ফেসবুকে তার চাকরি গ্রহণ, বিদেশে ব্র্যাকের টাকায় প্রশিক্ষণ এবং ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিস্তর কথা বলেছেন।

দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শেষে শরিফ তাসলিম রেজা আড়ং এর ডেইরি প্রকল্পে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। তার দাবি, এই জালিয়াতি তিনি নিজ চোখে দেখেছেন এবং গাজীপুরে আড়ং ডেইরির কারখানায় তিনি তা ধরিয়েও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বন্ধু জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে যাওয়ায় তিনি তা করতে পারেননি।

ঘটনাটি তিনি কবে দেখেছেন ব্র্যাকের এই সাবেক কর্মকর্তা অবশ্য তা উল্লেখ করেননি। তবে ঘটনাটি যে সাম্প্রতিক তিনি তা উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘কিছদিন আগে আমি নিজে দেখেছি, ঘন করার জন্য আড়ং দুধে বস্তাভরা দুই নাম্বার গুড়া দুধ মিশায়। এজন্য ব্র্যাকের কোন কর্মী আড়ং দুধ বিনা পয়সায়ও খায় না।’

শরিফ তাসলিম রেজা লেখেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল গাজীপুরের আমার দোস্ত ডিসি এসএ আলমকে দিয়ে হাতে নাতে ধরাব। ও আবার বদলি হয়ে গেল। এটা ধরুন।’

তবে এই ঘটনাটি মাস দুয়েক আগের হতে পারে। কারণ, জীপুরের জেলা প্রশাসক এস এ আলম গত ১০ মে এই জেলা থেকে বদলি হয়ে সেতু বিভাগে কাজ করছেন।

ব্র্যাকের সাবেক এই কর্মীর এমন স্ট্যাটাসে তোলপাড় পড়ে গেছে। বলতে গেলে ভাইরাল হয়ে গেছে তার এই লেখাটি। বিপুল সংখ্যক মানুষ তার এই বক্তব্যের নিচে কমেন্ট করে অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, ব্র্যাকে চাকরি খুইয়ে তিনি এতদিনে কেন এই অভিযোগ করেছেন।

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের ডেইরি প্রকল্প আড়ং ডেইরির প্রকল্প ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান  বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’

আপনারা কোত্থেকে দুধ সংগ্রহ করেন এবং সেটি কীভাবে প্যাকেটজাত করেন- জানতে চাইলে ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সরাসরি খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করি। উত্তরবঙ্গের পাবনা, নাটোর, বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ দুধ সংগ্রহ করি। গাজীপুরে সেগুলো এনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়। এর পর তা প্যাকেট করা হয়। কোন গুড়ো দুধ মেশানো হয় না।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমার রাইটস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘জানি না ওই কর্মকর্তা চাকরি চলে যাওয়ার কারণে এমন অভিযোগ করেছেন কি না, তবে যদি ঘটনা সত্য হয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পণ্য ও খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক নজির আহমেদ  বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে সে দুধই মেশিনে মিল্ক পাউডার করে আড়ং। অতিরিক্ত চাহিদা দেখা দিলে লিকুইড করে তা বাজারে ছাড়ে। না হলে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। এটা ক্ষতিকর নয়। এটা অনুমোদিত।’ তবে সাবান, শোডাসহ ক্ষতিকর কোনো কিছু মেশানো হলে সেগুলো ভেজাল হিসেবে গণ্য হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

পৃথিবীর বৃহত্তম এনজিও আড়ং তার ডেইরি প্রকল্প চালু করে ১৯৯৮ সালে। ৫০ হাজার নিবন্ধিত খামারির কাছ থেকে তারা দুধ সংগ্রহ করে বলে জানানো হয়েছে ওয়েবসাইটে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০১টি চিলিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। শুরুতে প্রতিদিন এই প্রকল্প থেকে এক লাখ ৪০ হাজার লিটার দুধ প্রতিদিন বাজারজাত করা হলেও এখন দিনে আড়াই লাখ লিটার দুধ বাজারে পাঠানো হয়।

সাধারণ দুধ ছাড়াও চকলেটসহ বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত দুধ, মিষ্টি ও টক দই, মাখন, ঘি, লাবাং (মাঠা জাতীয় তরল) বাজারজাত করে আড়ং ডেইরি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.