সমন্বয়হীন উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেনা নগরবাসী, ফের জলাবদ্ধ নগরী

0

নিজস্ব প্রতিবেদক:: ভোরের ভারী বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক বাসা-বাড়ির নিচতলা, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। বৃষ্টির সাথে বাড়ছে জলজটের উচ্চতাও। ফলে দুর্ভোগের শঙ্কায় ভুগছে নগরবাসী।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আশঙ্কা করছে, বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে গত মাসের মত আবারও পাহাড় ধস হতে পারে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে সবে। তবে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে।

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে এক রাতের প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। রাঙ্গামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বেশ কয়েকদিন।

সোমবার বোর তিন টার পর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। দুপুর ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টানা ঝরছে বৃষ্টি। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণের পূর্ভাবাস গতকাল রোববারই জানিয়ে দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিত চৌধুরী জানান, ‘রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এ বৃষ্টিতে বন্দরনগরীর নিচু এলাকা ও সড়ক ডুবে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাগ্য ভালো, ভোরের দিকে সাগরে ভাটার টান ছিল। তা নাহলে এতক্ষণে নগরীর বহু উঁচু এলাকাও ডুবে যেত।’

বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নিষ্কাষণের নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া আর দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি সরে যেতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগই নগরবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারছে না। এ জন্য বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

নগরবাসীর অভিযোগ চসিক, সিডিএ ও ওয়াসার কাজের সমন্বয়হীনতার অভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

চট্টগ্রাম নগরীর মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আলমগীর জানান, নগরীর মুরাদপুর থেকে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হওয়ায় পানি নামতে পারছে না। তাই খালের আশপাশের সব নিচু এলাকায় পানি জমে থই-থই করছে। সড়ক বাসা-বাড়ির নিচতলা, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে নানা দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

একই অবস্থা হয়েছে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকার। এ এলাকার চশমা খালের সংস্কার না হওয়ায় পানি জমে জলজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

বৃষ্টিতে নগরীর কাপাসগোলা, বাদুঁরতলা, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, মোহরা, হালিশহর, পতেঙ্গা, বন্দর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, চকবাজার, নাসিরাবাদসহ সবকটি এলাকায় পানি থই-থই করছে এখন। বৃষ্টির সাথে এসব এলাকায় ক্রমেই বাড়ছে জলজটের উচ্চতা।

বিশেষ করে নগরীর প্রধান সড়কের মধ্যে কালুরঘাট পতেঙ্গা সড়কের বাহির সিগনেল, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ এলাকায় ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। একইভাবে বাঁদুরতলা, কাপাসগোলা সড়ক, বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক ডুবে গিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এসব সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পানি মাড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ছুটছে। বিশেষ করে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ভারী বৃষ্টির মাঝেও সকাল থেকে কর্মস্থলের দিকে ছুটতে গিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিতে বাজারের অলি-গলি ডুবে গেছে। দোকানপাটে পানি ঢুকে বিভিন্ন পণ্য ভিজে নষ্ট হয়েছে।’

বহদ্দারহাট হক মার্কেটের ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন জানান, মার্কেটের নিচতলার সবকটি দোকানে পানি থই-থই করছে। এ মার্কেটের নিচে ১০-১২টি ওষুধের দোকানে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.