সিটিনিউজ ডেস্ক::বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে নাটক করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি হচ্ছে জঙ্গিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। হলি আর্টিজানে হামলার পর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গি দমনে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছিলেন।’
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন।
গত বছরের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি।
পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ছয়জন নিহত হয়। আইএস এর পক্ষ থেকে এদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে, তারা হামলার দায় নেয়।
হামলার কিছুদিন পর জঙ্গিদের কেন জীবিত ধরা হচ্ছে না প্রশ্ন তুলে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন ‘তারা (অপারেশনে নিহত জঙ্গিরা) যদি জঙ্গিই হবে, তাহলে তাদের জীবিত ধরা হচ্ছে না কেন?’
গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান হামলার বর্ষপূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের রিজভী বলেছিলেন, ‘আমাদের আবহমান বাংলার যে সম্প্রীতির বন্ধন, তাতে কালিমার তিলক দিয়েছে এই হামলা। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যখনই বলা হয় উগ্রবাদ নির্মূল করা হয়েছে, তখনই দেশের কোথাও না কোথাও উগ্রবাদের হিংসাত্মক থাবা পড়ছে।’
জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে আলোচনা সভায় হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থান শুধু বাংলাদেশেই নয় মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও হচ্ছে। তবে সেখানকার রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এটাই। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে, আর বাংলাদেশে জঙ্গিদের পাশে দাঁড়ায় বিএনপি।’
জঙ্গিদের যারা পৃষ্ঠপোষক তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘জঙ্গি দমনে আওয়ামী লীগসহ সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। বাংলাদেশের মানুষ গুটি কয়েক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ আছে। একটি জোট জঙ্গিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তাদের সম্পর্কে মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। আর বিএনপিকে অনুরোধ জানাব জঙ্গিদের তোষণ, পোষণ, মদদদাতার ভুমিকা পরিহার করুন। জোট থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে বের করে দিন।’
২০ দলীয় জোটের অনেক নেতাই আফগান ফেরত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তারা অনেকেই স্লোগান দিয়েছিলেন আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান।’
বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কানাডার আদালতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছে। প্রথমে নিম্ন আদালতে, পরে ফেডারেল কোর্টেও তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে রায় বহাল রাখল। তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী সংগঠন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জঙ্গিদের লাশ তাদের পরিবার নেয়নি, এটাই জঙ্গি দমনে আমাদের সাহস যুগিয়েছে। যেখানে জঙ্গিদের লাশ তার পরিবার নেয় না, সেখানে বিএনপি জঙ্গিদের পাশে দাঁড়ায়। বেগম খালেদা জিয়া বলেছে জঙ্গিদের কেন হত্যা করা হচ্ছে। হলি আর্টিজানে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে, সেই হলি আর্টিজান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এনকাউন্টারে জঙ্গিরা মারা গেলেও বিএনপি প্রশ্ন তুলছে। যেখানে জঙ্গি দমন করতে গিয়ে আট দশজন পুলিশ অফিসার মৃত্যুবরণ করেছে। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জীবনবাজি রেখে জঙ্গি দমন করছে। সেখানে বিএনপি প্রশ্ন তোলে জঙ্গি দমন নিয়ে।’
যেখানে উন্নত বিশ্ব জঙ্গি দমনে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে সফল উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিনসহ পৃথিবীর উন্নত দেশ জঙ্গি দমন করতে পারে নাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দঙ্গি দমনে সাফল্য দেখিয়েছে। তাতে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী, ইউরোপের নিরাপত্তা বাহিনী এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।’ আজ সারা বিশ্বই জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতার প্রশংসা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।