চুরি-ডাকাতির ভয়ে কমে গেছে গরু মোটাতাজাকরণ

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ : সম্প্রতি চন্দনাইশে গরু চুরি ও ডাকাতি অনেক কমে গেছে। কিন্তু লোকজনের মনে এখনো আতংক রয়ে গেছে। ফলে আগামী কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে চন্দনাইশে কৃষকেরা গরু মোটাতাজাকরণ করছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

চোর-ডাকাতের খপ্পরে পুঁজি হারানোর ভয়ে চলতি কোরবানীর ঈদ মৌসুমে গরু মোটাতাজা করার সাহস পাচ্ছে না কৃষক, গৃহস্থী ও খামারীরা। অন্যান্য বছর এ সময়ে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অনেক খামারী ও গৃহস্থী গরু ক্রয় করে রাখতেন। কিন্তু চলতি বছর সে রকম চোখে পড়ছে না। সখ করে যারা গরু মোটাতাজাকরণ করতেন তারাও ঝুঁকি মনে করছেন। যারা গরু মোটাতাজা করছেন তারা অনেকেই গরুর সাথে গোয়াল ঘরে রাত কাটাচ্ছেন। গোয়াল ঘরে নির্ঘুম রাত যাপন করে গরু পাহারা দিচ্ছেন অনেকেই। চুরির ভয়ে লোকজন গরু মোটাতাজা করনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় আগামী কোরবানী ঈদের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে হঠাৎ করে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরের দল গরু চুরি ও ডাকাতি করতে থাকে। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করার পর বর্তমানে অনেকটা গরু চুরি ও ডাকাতি কমেছে। খামারী, কৃষক, গরু ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে অর্ধ লক্ষাধিক গরু মোটাতাজা করা হতো। এসব গরু স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পাইকারী ব্যবসায়ীরা ঘরে ঘরে গিয়ে গরু ক্রয় করে শহরে নিয়ে যেত। চন্দনাইশের এ সকল লোকেরা কোরবানী ঈদকে টার্গেট করে গরু মোটাতাজা করতেন। গরু মোটাতাজা করে তারা আর্থিকভাবে অনেকে বেশ লাভবান হতেন। গরু পালনকারীদের মধ্যে কার গরু কত বড়, কোনটি বেশি সুন্দর, কারটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে এসব বিষয় নিয়ে রীতিমত এলাকায় প্রতিযোগিতা চলতো।

বিশেষ করে শঙ্খনদীর তীরবর্তী এলাকায় ঘরে ঘরে কেউ নিজেরা কিনে, কেউবা বর্গায় গরু মোটাতাজকরণ করত। কিন্তু এ বছর লোকজন সেভাবে গরু মোটাতাজা করছে না। চলতি বছরের প্রথম দিকে গরু চুরি ও লুটের ঘটনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ঐ সময়ে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক গরু চুরি ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন গৃহকর্তা গুলিবিদ্ধও হয়েছেন। গরু পালন করতে গিয়ে চোর-ডাকাতের কবলে পড়ে পুঁজি হারানোর ভয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করার সাহস পাচ্ছে না অনেকে। ফলে আসন্ন কোরবানীর ঈদের বাজারে চরমভাবে প্রভাব পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞ মহল। হারলার কৃষক মো. সুলতান জানান, আগে গরু চুরি হওয়ার ঘটনা শুনেছি। এখন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু-ডাকাতি করা হচ্ছে।

ডাকাতেরা ঘরবাড়ী ছেড়ে যেভাবে গোয়াল ঘরের দিকে ঝুঁকেছে তাতে গরু মোটাতাজা করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চন্দনাইশ পৌরসদর এলাকার রাজীব ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী রাজিব দেবনাথ বলেন, তিনি অনেক ভয়ে অর্ধ শতধিক গরু মোটাতাজা করছেন। সে সাথে রাতভর গরু পাহারা দেয়ার জন্য লোক নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে গরু চুরি বেড়ে গিয়েছিল। অনেক জায়গায় লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু চুরি করে নিয়েছে, অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাতে মনে ভয় রয়েছে।

তবুও খামার খালি না রেখে এ গরুগুলো তিনি পালন করে যাচ্ছেন বলে জানান। পাহারাদার দিয়েও আতংকের মধ্যে রাত কাটে। থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফরিদ উদ্দিন বলেছেন, কিছুদিন গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন গরু চোরকে আটক করার পর গরু চুরি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চোর-ডাকাতেরা হঠাৎ করে বসতঘর ছেড়ে গোয়াল ঘরের দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এলাকার অধিকাংশ গোয়াল ঘর জরাজীর্ণ, অনেক গোয়াল ঘরের দরজাও নেই। ফলে গরু গুলো চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.