রাঙামাটিতে মানুষের দুর্যোগ মোকাবেলা প্রশংসার দাবিদার

0

সাইফুল বিন হাসান, রাঙামাটি প্রতিনিধি,সিটিনিউজ :  আনসার ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন বলেছেন, রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনায় এখানকার মানুষ যেভাবে দুর্গতদের পাশে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এখানকার প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের পাশাপাশি আনসার ভিডিপিও দুর্গত মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিলেন।

বুধবার সকালে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনস্টিটিউিটে আয়োজিত পাহাড়ধসে মৃত ও আনসার ভিডিপি পরিবার ও অন্যান্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখে ৬১ লক্ষের বিশাল বাহিনী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে এই বাহিনী। তিনি আনসার ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেভাবে বাল্যবিবাহ, মাদক ও জঙ্গিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন তা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে হবে। আগামীতেও গ্রাম বাংলার নিরাপত্তা ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে এই বাহিনী কাজ করে যাবে।

পাহাড়ধসে মৃত ও আনসার ভিডিপি পরিবার ও অন্যান্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ । ছবি- সাইফুল

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি সেনা সদর জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ রিদওয়ানুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। এই দিনটি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ যারা দায়িত্বের খাতিরে আছি সবার জন্য একটি ভয়াবহ দিন ছিল। বিশেষ করে এই দিনটি আমার জন্য সবচেয়ে বেশি বেদনার কারণ এই ঘটনায় আমার দুই চৌকষ সেনা অফিসারসহ মোট চার সদস্যকে হারিয়েছি। যাদের সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। এটি একজন অধিনায়কের জন্য সবচেয়ে দুঃখ ও কষ্টের। এই কষ্ট আমি ভুলতে পারছি না এবং আজীবন ভুলতেও পারবো না। স্বজন হারানো এমন কঠিন বেদনার মাঝেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং দুর্যোগ কবলিত অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এতটুকু পিছপা হয়নি। তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, এই হতাহতের ঘটনার পর আর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো লোক মারা যায়নি। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বিপদগ্রস্ত লোকজনদের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ উল্লাহ আনসার ভিডিপি’র সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন আপনার যেমন পাহাড় কেটে বসবাস করবেন না। তেমনি লোকজনকেও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণেও নিরুৎসাহিত করবেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আনসার ভিডিপি’র রাঙামাটি কমান্ডার আবদুল আউয়াল। এসময় বক্তব্য রাখেন আনসার ভিডিপি চট্টগ্রাম অঞ্চল কমান্ডার নির্মলেন্দু বিশ্বাস, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল পারভেজ মান্নান, সেনা জোন অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ রিদওয়ানুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ উল্লাহ।

এই দুর্যোগে আনসার ভিডিপি’র দুই পরিবারের মোট পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং একশত পরিবারের মত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আনসার সদস্য হাবিলদার জিয়ার পরিবারে তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তান ছাড়া অন্য সবাই পাহাড়ধসে মৃত্যুবরণ করেন। নিহত হাবিলদার জিয়ার বেঁচে যাওয়া ছেলে জিয়ানের পড়ালেখাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ প্রতি মাসে আনসার ভিডিপি থেকে তিন হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে। এছাড়াও জিয়ানের এসএসসি পাশের পর তাঁকে আনসার ভিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে মহাপরিচালক ঘোষণা দেন। পাহাড়ধসের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত আনসার ভিডিপি’র ১০০ পরিারের মাঝে নগদ টাকা ও চালসহ অন্যান্য সামগ্রি বিতরণ করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.