চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মরণফাঁদ ৪৫ বাঁক

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ,সিটিনিউজ : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের দক্ষিণ সীমান্ত শঙ্খনদীর উপর ব্রীজ থেকে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কে ৪৫ বাঁক নয়, যেন মরণফাঁদ। এ সকল বাঁকে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে লাশের মিছিল, পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকে।

টেকনাফ স্থলবন্দর, বান্দরবান, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের যাত্রীদের যাতায়তসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলের পরিমাণ। কিন্তু সে অনুযায়ী এ সড়কের প্রশ্বস্ততা বাড়েনি স্বাধীনতার পর থেকে। ২০০৬ সালে পটিয়ার মনসা বাদামতল থেকে দোহাজারী শঙ্খ ব্রীজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় ৪৫ বাঁক সোজাকরণ ও সড়কের প্রশ্বস্ততার জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও নানা জটিলতায় সেটি করা হয়নি। ফলে এ মহাসড়কে ১শ ৫২টি বাঁক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনার অপর নাম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এ সড়কে দুর্ঘটনায় দিন দিন বাড়ছে লাশের মিছিল। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। বিগত তিনমাসে ১৬ জনের অধিক নিহত হয়েছে, দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। বাঁকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক হচ্ছে চন্দনাইশের দোহাজারী দেওয়ানহাট, বাগিচাহাটে ২টি, বরুমতি ব্রীজ, বিজিসি ট্রাস্টের দুই পাশে ২টি, পটিয়ার জলুয়ার দীঘির পাড়, পটিয়া সদর এলাকায় ২টি, আমজুরহাট, গৈড়ালার টেক, আকবর শাহ মাজার সংলগ্ন ২টি, মনসারটেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়।
সড়ক বিভাগের এক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, পটিয়া মনসা থেকে দোহাজারী শঙ্খ ব্রীজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এ সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সড়কের যাত্রী, ব্যবসায়ী, পর্যটকেরা এতদিন এর সুফল ভোগ করতে পারত বলে মন্তব্য তাদের। এ সড়কে অধিকাংশ ছোট ও অনেক বড় বড় যানবাহন পরিচালনা করছে অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকেরা। এদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে বয়সের শিশু-কিশোরও রয়েছে। জানা যায়, এসব চালকদের অতীতের পেশা ছিল রিক্সা চালানো কিংবা ছোট পরিবহনের হেলপার।

অনভিক্ষ চালক দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে মহাসড়কে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এতে করে অনেক যাত্রী নিহত ও আহত হচ্ছে। হতাহতের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। দুর্ঘটনায় চালকের উপর প্রশাসনের নজরদারী নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সি.এন.জি অটোরিক্সা ও টেম্পু চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এসব যানবাহন চলাচলের কারণে মহাসড়কে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া জলুয়ার দীঘি পাড় এলাকায় সৌদি পরিবহনের বাস চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী মো. পাবেল (২২) নিহত হয়, ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম অভিমুখী মাইক্রোবাসের ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহী মো. আরাফাত (১৪) আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়, একই দিন চন্দনাইশ পাঠানীপুল এলাকায় হানিফ চেয়ার কোচ-যাত্রীবাহী পিকআপ ও মিনি পিকআপের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৬ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়, ১৮ জুন পটিয়ার মুজাফরাবাদ এলাকায় বিআরটিসি বাস ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়, ২৮ জুন পটিয়া শিকলবাহা চৌমুহনী এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সার ধাক্কায় অটোরিক্সা পার্শ্ববর্তী পড়ে ৩ জন নিহত হয়, ৭ জুলাই পটিয়া পাইরোল এলাকায় সৌদি পরিবহনের চাপায় সাথে সিএনজির ২ যাত্রী নিহত ও ১০ জন আহত হয়, ১৫ জুলাই শাহ আমানত ফিলিং ষ্টেশন এলাকায় বিআরটিসি পরিবহন দু’তলা গাড়ী উল্টে ৪০ জন নারী-পুরুষ আহত হয়।

দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা জনিত কারণে ৮টি মামলা হয়, অবৈধ চলাচল ও ফিটনেসবিহীন অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন গাড়ীর বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ৩০ লক্ষ টাকার অধিক জরিমানা আদায় করা হয়। দ্রুতগামী চেয়ার কোচ এবং বাসগুলোর মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। সে সাথে মহাসড়কে সিএনজি চালিত টেক্সী বন্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.