বেশির ভাগই সেনা মোতায়েনের পক্ষে

0

সিটিনিউজ ডেস্ক::অংশগ্রহণমূলক একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। সোয়া দুই ঘণ্টার আলোচনায় উঠে আসা সুপারিশগুলো লিপিবদ্ধ করেছে তারা। এগুলো পরে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে অংশীজনদের এবং সরকারকে দেয়া হবে। তবে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছন তারা পরে লিখিত আকারে আরও বিস্তারিত পরামর্শ দিতে পারবেন।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় প্রতিষ্ঠিত মোট ৬০ জনকে আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে এদের মধ্যে বিশিষ্ট কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আাবুল মকসুদ সংলাপে অংশ না নিয়ে একট চিঠি দেন নির্বাচন কমিশনের সচিবকে।

বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই সংলাপ চলে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত। সংলাপে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে এনে আস্থার সম্পর্ক তৈরি, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনী আইন সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের আইনি ক্ষমতার প্রয়োগ, না ভোট ফিরিয়ে আনা, ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নিরাধারণসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন অংশীজনেরা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কোনো কমিশনার এ সময় কোনো কথা বলেননি।

সংলাপ থেকে বের হওয়ার পর পরামর্শ দাতারা তারা কী বলেছেন, সেটা গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানান। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা করে। এই পথনকশার অংশ হিসেবে সোমবার নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে সংলাপে বসে তারা। এরপর রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে নির্বাচন কমিশন।

সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, সংলাপে আসা বিশিষ্টজনরা তাদের নানা বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তবে সেখানে কোনো বিতর্ক  হয়নি।

এর আগে সংলাপ থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, সংলাপে গুরুত্ব পেয়েছে নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গ। বেশিরভাগ অংশীজন বলেছেন, নির্বাচনে যদি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা না হয় তাহলে নির্বাচনটা হয়ত সুষ্ঠু হবে না। এর বাইরে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচন কমিশনের আস্থার সম্পর্ক তৈরি করাসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে।

তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘একটা জিনিস আমি দেখলাম যে সিইসি কোনো বিষয়ই খণ্ডন করেননি। কোনো আর্গুমেন্ট তিনি খণ্ডন করেননি। নির্বাচন কমিশনাররাও কোনো আর্গুমেন্ট খণ্ডন করেননি। প্রতিটি আর্গুমেন্ট তারা নোট করেছেন এবং তারা যেটা বলার চেষ্টা করেছেন যে, আমরা প্রতিটি সাজেশন লিপিবদ্ধ করব, এবং লিপিবদ্ধ করে আমরা বুকলেট আকারে প্রয়োজনে আপনাদের কাছে দেব, প্রয়োজনে সরকারের কাছে আমরা দেব।’

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘এই সংলাপের মূল বিষয় সেটা বেরিয়ে এসেছে, কয়েকটি পয়েন্ট, সেগুলো তারা নোটডাউন করেছেন এবং কগনিজ্যান্সিতে নেবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। এখন দেখা যাক ভবিষ্যতে তারা কোন পর্যায়ে যেতে পারে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আজকে যে আলোচনাটা হয়েছে, সবচেয়ে বড় যে বার্তাটা এসেছে, সেটা হলো নির্বাচন কমিশনকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। আর সে জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে যেসব আইনি ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে, সেগুলোকে কার্যকর ব্যবহার করার কথা হয়েছে।’

হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের তেমন কিছু করার নেই- সিইসির আগের এমন বক্তব্য তারা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, করার জন্য এখনই তাদের করার অনেক কিছু আছে প্রস্তুতি হিসেবে। সেটার ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বেশ কিছু গেছে। কিছু আইন কার্যকর করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। কিছু আইন সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে এবং কিছু কিছু নতুন আইনও করার কথা বলা হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের মনে যে ভয়ভীতি আছে, সেটা দূর করতে হবে। এ জন্য তিনি ভোটের সময় সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন কোনো ইস্যু রেইজ করেনি। তারা ওপেনলি বলতে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওনাদের (নির্বাচন কমিশন) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সুপারিশগুলো এসেছে, সেগুলো ওনারা লিপিবদ্ধ করবেন এবং ফাইনালি সবার কাছে আমাদের পাঠাবেন। ইলেকশন কমিশন একটা কথা বলেছেন, যেটা আমাদের ভালো লেগেছে, ওনারা বলেছেন, আমাদের প্রস্তাবগুলো যেন আমরা লিখিতভাবে দেই। লিখিতভাবে আমরা যেন ডিটেইল কথা বলি, সে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছেন।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান জানান, তিনি নির্বাচনে সময় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এই ক্ষমতা দিলে সেটা দিতে হবে ডিসি বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। তারাই এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ বিলোপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, যদি সংসদ বহাল তাকে এবং তিনশ জন সংসদ দায়িত্বে তাকেন, তাহলে তারা সরকারি সহযোগিতা নেবেন। নির্বাচনকালীন সরকারের এই ব্যবস্থাটা রিভিউ করা দরকার।

নির্বাচনকালীন সময়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন দিলারা চৌধুরী।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদও সংলাপে অংশ নেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.