বিশিষ্টজনদের ফখরুলের ধন্যবাদ

0

সিটিনিউজ ডেস্ক::নির্বাচন কমিশনের (ইসির) সংলাপে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফখরুল বলেন, সমাজে এখনো ভালো আছেন যারা জনগণের স্বার্থের কথা, মুক্তির কথা চিন্তা করেন। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্য যে, তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, সহায়ক সরকার ছাড়া অর্থাৎ একটা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা বলে এসেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া, তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে হবে এবং তাদের জন্য লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড করতে হবে।

তিনি বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতো একথা আমরা বারবার বলে আসছি, প্রত্যেকটি দলকে নির্বাচনে সমান সুযোগ দিতে হবে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর মুক্তির দাবিতে ‘বরকত উল্লাহ বুলু মুক্তি পরিষদ’এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. বরকত উল্লাহ বুলুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষ নয়। তিনি ছাত্রলীগ করেছেন, জনতার মঞ্চের নেতা ছিলেন। কাজেই তিনি সরকারের আজ্ঞাবহ। তাই তার অধীনে কোনো নির্বাচন মানুষ মেনে নেবে না।’

মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং দেশ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কোনো বিকল্প নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নির্দেশ মেনে বদ্ধ ঘর ছেড়ে নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই আইন বহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়, প্রতি মুহূর্তে আইন লংঘন হয়। প্রধান বিচারপতি স্বয়ং প্রতিদিন তার বক্তব্যে সরকারের মুখোশ উন্মোচন করছেন। কিন্তু সরকার মিথ্যাচার করেই চলেছে।’

বিএনপিকে ছাড়া ফের নির্বাচন আয়োজন করা হলে জনগণ তাতে অংশ নেবে না এমনটা জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চামড়া খুব মোটা। যা বলেন, ওদের কিছু যায় আসে না। তারা হিটলারকে বেশি অনুসরণ করে, তারা হিটলারকে পুরো দেবতা মনে করে, তার যাবতীয় কাজ করে। তার যে তথ্যমন্ত্রী ছিল- গোয়েবলস, উনি বলতেন যে একটি মিথ্যাকে বার বার বলতে থাকো, তা সত্য প্রমাণিত হয়ে যাবে, জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করবে।

তিনি বলেন, ‘এজন্য আওয়ামী লীগ মিথ্যা বলতেই থাকে। নির্বাচন হবেই হবে, আর শেখ হাসিনা একমাত্র নেত্রী তার অধীনে নির্বাচন হবে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ওইরকম নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহন করবে না।’

সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ইউনেস্কোর অবস্থান নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মিথ্যাচার করেছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘ইউনেস্কো প্রতিবেদনে বলেছে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না। সংস্থার প্রতিবেদনে এটা প্রমাণিত হল। আওয়ামী লীগের নেতারা বিশেষ করে দায়িত্বে যে উপদেষ্টা আছেন, তিনি তারপরও মিথ্যা কথা বলছেন। কীভাবে মিথ্যা কথা বললেন, আমি গতকাল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনটা শুনেছি। এদের চেহারা উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন।”

ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে সংস্থাটি উদ্বেগ জানিয়ে এলেও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভার পর তারা ‘আপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে’ বলে দাবি করে সরকার।

তবে সরকারের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সংশয়ের পর গত ৩০ জুন ওই সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, তার সঙ্গে সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি মিলছে না।

ফখরুল বলেন, ‘আমি ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই, মাননীয় উপদেষ্টা আমার শিক্ষক। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নাম ছিল, অত্যন্ত মেধাবী ব্যুরোক্রেট ছিলেন, আমলা ছিলেন এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা নিঃসন্দেহে। আজকে কী ঘটল যে, আপনি আপনার সমস্ত স্বকীয়তা ত্যাগ করে, নিজের বিবেককে বাদ দিয়ে আপনি এদেশকে ধ্বংস করবার একটা কাজে লিপ্ত হয়েছেন।”

সুন্দরবনকে দেশের ‘লাইফ ল্যান্ড’ অভিহিত করে সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আমাদের সুন্দরবন আমাদের লাইফ ল্যান্ড, সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবজ। আমাদের পরিবেশকে রক্ষার জন্যে, আমাদের মাটিকে রক্ষা করবার জন্যে সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই।

দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ভবিষ্যতে আরো হবে। যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদেরকে দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।”

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেয়ালের লিখন পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন আর সত্যটাকে জানার চেষ্টা করুন। জনগণকে বেশিক্ষণ বোকা বানিয়ে রাখা যায় না, কিছুক্ষণের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায়।”

বিচার বিভাগকে সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমাদের মাননীয় প্রধান বিচারপতি এই সরকারের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছেন। পরিষ্কার করে বলেছেন, তারা কী অবস্থায় আছেন, এই সরকার কী চেষ্টা করছেন। গণতন্ত্র ও সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে নিয়ে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।”

বুল মুক্তি পরিষদের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.