জোট শরীকরা ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটিনিউজ :: দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে বিকল্প শক্তি নামে জোট গড়ার স্বপ্ন দেখছে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। বিষয়টি শাসকদল অবহিত। তবে এ মুহুর্তে তাদের হুমকি হিসেবে ভাবছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বরং তারা কতদুর যেতে পারে সেটিই পর্যবেক্ষন করতে চাইছেন। বিকল্প জোটের উদ্যোক্তা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জোট গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতিপুর্বে জেএসডি সভাপতি আ.স.স আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বৈঠকও অনুষ্টিত হয়। ওই বৈঠকে জেএসডি ছাড়াও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও নাগরিক ঐক্য সহ বেশ কয়েকটি দলের নীতি-নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন। জেএসডি সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক রতন জানিয়েছিলেন, আমাদের জোট গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছেন গণফোরাম ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মত দলও। তবে শেষোক্ত দল দুটির কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তার মতে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এর আগেও জোট গঠনের চেষ্টা করেছিলেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বিকল্প জোট গড়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন। সর্বশেষ আ.স.ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) শীর্ষ নেতারা সম্প্রতি জোট গঠনের জন্য সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।

জানা গেছে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়েএই জোট গড়ে তোলতে চায়। এটি হবে আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে বিকল্প শক্তির জোট। এদিকে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর একত্রিত হওয়া বা জোট গঠন করার প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেখছেন দলগুলোর ছলচাতুরি হিসেবে। তারা বলছেন, আমাদের দেশে কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা মাঝে মাঝেই বিকল্প শক্তি বা জোট গঠনের আওয়াজ তুলে আলোচনায় থাকতে চায়। এর আগেও ছোট ছোট দলের অনেক বড় নেতা এসব আওয়াজ তুলেছিলেন।

দেখা যায়, কিছুদিন পরে আওয়াজ তো থাকেই না, এসব নেতাও পাড়ি জমান দেশের বাইরে। এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা রয়েছেন এসব আওয়াজ তুলে নিজেদের কদর বাড়াতে চান। পত্র পত্রিকায় আলোচনায় থাকতে চান। এদের এসব উদ্যোগের মর্মার্থ শুধু এটুকুই। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নুহ-উল আলম লেনিন বলেছেন, বহুবার এসব জোট, বিকল্প শক্তি গড়ে উঠার কথা শুনেছি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাস, বছর পার হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে তাদের কার্যক্রমও হারিয়ে যায়। জেডিসি এর সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে একটি বিকল্প জোট গঠন এখন সময়ের দাবী। আমরা মনে করি, বড় দুটি দল ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের মাধ্যমে সন্ত্রাস, জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সে জন্য আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি’।

জাতীয় রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর জোট বা বিকল্প শক্তি গঠনের তোড়জোড় মাঝেমধ্যে শোনা গেলেও চট্টগ্রামের ছোট দলের বড় নেতারা নিরবে খোয়াব দেখছেন ক্ষমতার। কোন পথে গেলে এমপি-মন্ত্রী হওয়া যায়, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা যায় সে পথে হাঁটছেন তারা। যোগাযোগ রাখছেন ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপুর্ন নেতা ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গেও। অনেকে ইতিমধ্যে সরকারী এবং বিরোধী জোটের ঢুকে পড়েছেন। থেমে নেই এসব দলের স্থানীয় নেতারাও। কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে কষছেন অংক।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশ বাকি থাকলেও নানা সমীকরন নিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জোট-মহাজোটভুক্ত চট্টগ্রামের ছোট দলগুলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত এলডিপি’র নেতৃত্বে রয়েছেন কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম। তিনি ইতিপুর্বে বিএনপির টিকিটে এমপি-মন্ত্রী হয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে মুখরোচক উক্তি করে দলে ছাড়েন। বিএনপি থেকে আরো কয়েকজনকে নিয়ে এসে গঠন করেন এলডিপি। শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটেই আছেন। একই জোটের কল্যান পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রামের আরেক নেতা মে.জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।

আবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে আছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি ও জাসদ (একাংশ) নেতা মইনউদ্দিন খান বাদল এমপি। মহাজোটের জাতীয় পার্টির অন্যতম দুই নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি এবং সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপিও চট্টগ্রামের। জোট মহাজোটের এ নেতারা আসন্ন নির্বাচনেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। চট্টগ্রাম থেকে একাধিক আসনে নির্বাচন করতে নানা কৌশলে এগুচ্ছেন তারা।

মাঝখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫৮ দল নিয়ে নতুন জোট গঠন করার খবর শোনা যায়। দলে দলটির শীর্ষ নেতাদের মুল লক্ষ্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচন করা। কারন নতুন জোটের অধিকাংশ দলই নামসর্বস্ব। ভোটের মাঠে তাদের তেমন প্রভাবও নেই। দলীয় ফোরামে তাই হিসাব নিকাশ হচ্ছে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে। যে প্রক্রিয়ায় গেলে সবচেয়ে বেশি আসন নিশ্চিত করা যাবে সে পথেই হাঁটবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, ’জাতীয় পার্টি নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন জোট ঘোষনা করেছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এ জোট নিয়ে করবে নাকি আগের মতো মহাজোটের অধীনেই করবে তা চুড়ান্ত করবেন দলের চেয়ারম্যান। তবে ৫৮ দল নিয়ে জাতীয় পার্টির নতুন জোট অপর দুটি বড় জোটের কাছে নতুন বার্তা দিচ্ছে’’। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন করতে চান বাঁশখালী থেকে। সেখানে তিনি ইতিপুর্বে একই দলের উপজেলা চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রামের মেয়র হয়েছিলেন।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে একাধিকবার এমপি হয়েছেন কর্ণেল অব: অলি আহমদ। বিএনপির আমলে মন্ত্রী হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করায় তৈরী হয়েছে তাঁর স্বতন্ত্র ব্যক্তি ইমেজ। বিএনপি ছেড়ে এসে এলডিপি গড়ে তোলার পর চন্দনাইশ সহ দক্ষিন চট্টগ্রামে দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। তাঁর দলের শীর্ষ পদধারী নেতাদের বেশিরভাগও চট্টগ্রাম বিভাগের। এলডিপির যুগ্ন মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম তাদের একজন। তিনি নির্বাচন করতে চান লক্ষীপুর-১ আসন থেকে।

তাঁর মতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নিলে একাধিক আসন চাইবে এলডিপি। কর্নেল অলির সারাদেশে স্বতন্ত্র একটি ইমেজ রয়েছে। আন্দোলনে সংগ্রামেও বিএনপির পাশে ছিল এলডিপি। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে কর্নেল অব: অলি আহমদ চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া এবং এডভোটেক কফিল উদ্দিনকে বাঁশখালীতে প্রার্থী করতে পারেন বলে জানা গেছে। এর আগেও তিনি চন্দনাইশ এবং সাতকানিয়ায় নির্বাচন করেন। অপরদিকে হাটহাজারী আসন নিয়ে জোট মহাজোট বেশ বেকায়দায় পড়েছে।

এখানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে এমপি হয়েছেন জাতীয় পার্টির ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পেয়েছেন মন্ত্রীত্ব। তবে ব্যরিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভুত হতে চাইছেন কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মে.জে.(অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে হাটহাজারী আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হয়েছেন জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল।

তার ঘনিষ্টজনদের ধারনা আগামী নির্বাচনেও মহাজোটের মনোনয়নে এ আসন থেকে প্রার্থী হবেন তিনি। তবে জাসদে সম্প্রতি ভাঙ্গন ধরায় নিতে হতে পারে নতুন সমীকরন। এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মইনউদ্দিন খান বাদল যৌথভাবে নেতৃত্ব দেওয়ায় আওয়ামী লীগের কাছে তাদের গুরুত্বও বেশি ছিল। দল ভাঙ্গনের পর এখন সে অবস্থা আর নেই। তবে বেশ ভাল অবস্থায় আছেন মইন উদ্দিন খান বাদল। কারন দলের প্রতীক মশাল তিনি পেয়েছেন। জাসন (ইনু) থেকে জসিম উদ্দিন বাবুল নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনে অনেক আগে থেকে প্রচারনা চালাচ্ছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের এমপি ফটিকছড়ির নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর তরীকত ফেড়ারেশন অনেক আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। মহাজোট থেকে পুনরায় নির্বাচন করার আগাম ঘোষনাও দিয়ে রেখেছেন তরীকতের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর এমপি। ইতিপুর্বে তিনি বিএনপির টিকিটেও এমপি হয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট বিএনএফ চেয়ারম্যান ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের তেমন কোন তৎপরতা চট্টগ্রামে নেই। দলটির ভবিষ্যত কোন দিকে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.