ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের সংসদে বিতর্ক

0

সিটিনিউজবিডি  :   ১৬তম মাস অতিক্রম ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের। এই স্বল্প সময়ে নানা সফলতা ধরা দিলেও কিছু বিতর্ক যেন সব আলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের তিন প্রভাবশালী নেতার পদত্যাগের দাবিতে সংসদে আন্দোলন-বিক্ষোভে মুখর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

সোমবার (০৩ আগস্ট) এ আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

ঘটনার শুরু ‘ললিত কেলেঙ্কারি’তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নাম উঠে আসার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের এ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসায় বেশ বেকায়দায় পড়ে যায় মোদির সরকার।তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনায় পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) খলনায়ক ললিত মোদির যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ও অভিবাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনৈতিকভাবে তদবির করেছিলেন তিনি। আর এ তদবিরের বিনিময়ে ললিতের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজের স্বামী।

এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুষমার পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে নামে কংগ্রেস। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (এএপি), জনতা দল (ইউনাইটেড), তৃণমূল কংগ্রেস ও বামপন্থিরা।

এর পরপরই সামনে চলে আসে, শুধু সুষমা স্বরাজই নন, ‘ললিত কেলেঙ্কারি’তে জড়িত ছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেও। ললিতের অভিবাসন সংক্রান্ত আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, সরকার যেন এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে।

কিন্তু সরকার জানার আগেই দলিল গিয়ে পড়ে কংগ্রেসের হাতে। আর এরপর থেকে কংগ্রেসের আন্দোলন আরও জোরদার হয়। দুই হেভিওয়েট নেত্রীকে নিয়ে  বিতর্ক চলার পাশাপাশি নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

স্মৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে গড়বড় রয়েছে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন, ১৯৯৬ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বিএ পাশ করেন তিনি। অথচ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগ দিয়ে কমিশনকে জানান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওপেন লার্নিং থেকে বি.কম পাশ করেছেন তিনি। ২০১১ সালেও স্মৃতি কমিশনকে তার বিকম পাশের কথা জানিয়েছিলেন।

স্মৃতির বিতর্ক সামনে চলে আসলে আরও জোরেশোরে মাঠে নামে এএপি। কারণ কিছুদিন আগে একই অভিযোগে কারাগারে ঢুকতে হয়েছে দিল্লির আইনমন্ত্রী জিতেন্দর সিং তোমারকে। আর সে সময় দিল্লির বিজেপি ছিল আন্দোলনে মুখর। তাহলে স্মৃতি কেন রক্ষা পাবেন?

সংসদ অধিবেশনের বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই কংগ্রেস হুমকি দিয়ে রেখেছিল, দাবি না মানলে সংসদ অচল করে দেওয়া হবে। কথা অনুযায়ী অধিবেশনের শুরু থেকেই তারা কালো ব্যাজ ধারণ করে ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

এরই ধারায় সোমবার (০৩ আগস্ট) লোকসভার (নিম্নকক্ষ) স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ‘বিশৃঙ্খলা’র অভিযোগে ২৫ কংগ্রেস সদস্যকে ৫ দিনের জন্য বহিষ্কার করেন। এ আদেশের ব্যাপারে স্পিকার জানিয়েছেন, সংসদে প্ল্যাকার্ড বহন ও কালো ব্যাজ ধারণের ব্যাপারে বারবার নিষেধ সত্ত্বেও তারা তা মানছিলেন না।

এদিকে, এ আদেশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) পার্লামেন্ট ভবনে ‘গান্ধী মূর্তি’র সামনে বিক্ষোভ শুরু করে কংগ্রেস। এর আগে সংসদ সদস্যদের বহিষ্কারাদেশ ‘গণতন্ত্র হত্যার সামিল’ বলে আদেশ পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সেই সঙ্গে ওই তিন নেতাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে বলেও নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি।

মুখে স্বীকার না করলেও বিজেপি’র মঙ্গলবারের বিবৃতিই বলে দিচ্ছে, তারা কতোটা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিরোধীরা দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, লোকসভায় (নিম্নকক্ষ) বিজেপি সদস্যের সংখ্যা বেশি হলেও রাজ্যসভায় (উচ্চকক্ষ) তারা সংখ্যালঘিষ্ঠ। ফলে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে বিরোধীদের, বিশেষ করে কংগ্রেসের সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দাবি না মেনে নিলে সহায়তা কতোটুকু পাওয়া যাবে, তাও যথেষ্ট চিন্তার দাবি রাখে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.