উখিয়ার নতুন বস্তিতে ১০হাজার রোহিঙ্গার আহাজারি

0

শহীদুল ইসলাম,উখিয়া,সিটিনিউজ :: মায়ানমারে সহিংসতার ১০ম দিন রাতের আধাঁরে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ঘুমধুমের আম বাগান পয়েন্টে ও  বালুখালীতে বনবিভাগের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়েছে নতুন বস্তি।

পুরোদমে চলছে ছোট -ছোট তাবু স্থাপনের কাজ। কয়েক সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে নতুন বস্তিতে।

কক্সবাজার -টেকনাফ সড়কের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী হয়ে বালুখালীর ছড়া  পর্যন্ত চলছে বস্তি গড়াঁর কাজ।

ওখানে দেখা গেছে অন্তত ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নারী -পুরুষ ও শিশুর ঢল। কেউ মাটি কাটছে, কেউ তাঁবু গেঁড়ে বস্তি নির্মাণে ব্যস্ত।

আবার কোন কোন রোহিঙ্গা পরিবার স্বজন হারানোর বিভীষিকাময় স্মৃতি মনে করে আহাজারি করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এসব চিত্র।

উখিয়ার নতুন বস্তিতে ১০হাজার রোহিঙ্গার আহাজারি

অপরদিকে ঘুমধুমের আম ববাগান পয়েন্টে বিজিবির প্রহরায় আরো ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা জড়ানো হয়ে আহাজারি করতে দেখা গেছে।

ঘুমধুম সীমান্তে জড়ো হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশীর ভাগই কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে।

মিয়ানমারের ওয়াবেং গ্রামের স্বামী হারানো রোহিঙ্গা নারী মমতাজ বেগম (২৮) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন তার স্বামী আবুল ফয়েজ কে মিয়ানমারের মগ সেনারা ধরে নিয়ে গুলি করে মেরেছে। তার শিশু সন্তান নিয়ে অন্যদের সহযোগিতায় টেকনাফের কাঞ্জর পাড়া হয়ে এপারে চলে আসি।

শনিবার দিবাগত রাতে গাড়ী যোগে কুতুপালং আসার পথে বিজিবি আটক করে ঘুমধুমে এ পয়েন্টে জড়ো করে রেখেছে। রাতের সময় দিগ্বিদিক ছুটাছুটিতে দই সন্তান কোথাও হারিয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত সন্ধান পায়নি।

মমতাজের মত শত -সহস্রাধিক নারী ও শিশুর কান্নায় ঘুমধুম সীমান্তের বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ঘুমধুম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন জড়ানো হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অন্তত কয়েক হাজার হবে।

অনুপ্রবেশে ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বিজিবির জোয়ানরা। টহলরত ঘুমধুম বিজিবির নায়েবে সুবেদার রফিকুল ইসলাম বলেন জড়ো হওয়া রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায়, তা দেখা হচ্ছে।

পুশব্যাক করা হবে কিনা জানতে চাইলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় আছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে বালুখালীতে বনভুমির কয়েক শত জায়গায় গড়ে ওঠছে নতুন আরেকটি রোহিঙ্গা বস্তি।

যে বস্তি গড়াঁর পেছনে সাবেক মেম্বার ও পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজল কাদের ভুট্টো, জামায়াত নেতা আকবর আহমদ, থাইংখালীর চেয়ারম্যান সমর্থিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গোপনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অনেকেই জানান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফজল কাদের ভুট্টো বলেন, যেখানে রোহিঙ্গা বস্তি হচ্ছে, সেখানে আমার বহু বেদখলে চলে গেছে। আমি যতদ্রত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চাই। রোহিঙ্গারা চলে গেলে আমি খুশী।

থাইংখালীর ভারপ্রাপ্ত বনবিট  কর্মকর্তা মাসুম সরকার বলেন, বনভুমি দখল করে রোহিঙ্গা বস্তি করতে যাওয়ায় বাধা দিলে স্থানীয় কিছু বখাটে চক্র আমার সাথে তর্কে জড়ায়। বিষয়টি আমি ইউএনও সহ বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করেছি।

তবে নতুন অনুপ্রবেশ করে এপারে আশ্রিত রোহিঙ্গা বলেন, আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিকান্ডে আগুনের লেলিহান শিখা সীমান্ত এলাকা থেকে দেখা যাচ্ছে।

আতংকিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া – টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

উখিয়া সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে দিয়ে কয়েক হাজারের বেশী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। ওই এলাকার জিরো পয়েন্টে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটকা পড়েছে।

সীমান্তে জড়ো হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করতে মিয়ানমার বিজিপি সকালে গুলি ছুঁড়েছে এবং বিজিপির ছোঁড়া গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। শনিবার বিকেলে রোহিঙ্গা স্বামী -স্ত্রীর মরদেহ পাওয়া গেছে জিরো লাইনের অভ্যন্তরে।

তুমব্রু বাজারে এসে পড়েছে আরো রোহিঙ্গা।  দিশেহারা রোহিঙ্গাদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বিজিবি সীমান্তে কড়া পাহারায় রয়েছে এবং অতিরিক্ত টহল জোরদার করেছে।

উখিয়ার পার্শ্ববর্তী ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলীর নুরুল ইসলামের আমবাগান, পশ্চিমকুলের বাশঁ বাগান, উখিয়ার রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, পালংখালী পয়েন্ট দিয়ে দিন -দিন রোহিঙ্গারা জিরো পয়েন্টে জটলা বাধছে।

সীমান্তের পরিস্থিতি দেখতে ২৭ আগস্ট বিকালে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ঘুমধুম জলপাইতলী এলাকা পরিদর্শণ করে গেছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমার অভ্যান্তরে গুলির শব্দ শোনা যায়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চিত্রও দেখা যায়।

এদিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া, লম্বাবিল, খারাইংগ্যা ঘোনা, উখিয়ার পালংখালী এলাকা দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নাফনদী অতিক্রম করে সীমান্তের উপকূলীয় বিভিন্ন কেওড়া বনে লুকিয়ে থাকছে বলে জানা গেছে।

এসব রোহিঙ্গারা রাতের আধারে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, নয়াপাড়া শারণার্থী ক্যাস্প, উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প, কুতুপালং ও বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাস্পে সুযোগ বুঝে আশ্রয় নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহীনি ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পুুরুষদের ধরে গুলি করে হত্যা করছে। মহিলাদের নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গারা আতংকে পাহাড়, ধান ক্ষেতে ও বনজঙ্গলে পালিয়ে লুকিয়ে আছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।

কিন্তু বিজিবি বাধা দেওয়ায় কেউ ঢুকতে পারছেনা। তারা রাতের আধারে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান।

পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ার দিল মোহাম্মদ ও মিনারা বেগম জানান, সেনা বাহিনীরা গ্রামে ঢুকে অত্যাচার করছে। পুরুষদের ধরে নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করছে

গ্রামে অগ্নি সংযোগ করে গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। প্রায় সময় মিয়ানমারের মগ সেনাদের তান্ডব চলছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.