মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ::উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি, দোহাজারী, হাশিমপুর পাহাড়ী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করে। নতুনভাবে আরও অর্ধ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।ধোপাছড়ি ইউনিয়ন যেন বাংলাদেশের একখন্ড রাখাইন রাজ্য। দোহাজারী সদরে বার্মা পাড়া নামে একটি বসতি গড়ে উঠেছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য (সাবেক আরকান) থেকে অবৈধ পথে এদেশে ইতিমধ্যে প্রবেশ করেছে অনেক রোহিঙ্গা। ধোপাছড়ি, দোহাজারী, হাশিমপুর পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। সে সাথে সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করার কারণে প্রবেশ করছে আরও অর্ধ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নতুনভাবে চন্দনাইশে প্রবেশ করেছে। এদের অনেকেই চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ও দোহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেছে।
নতুনভাবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গারা আত্মীয়তার পরিচয়ে চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, দোহাজারী বার্মা পাড়া, জামিজুরী,হাশিমপুর, সৈয়দাবাদ,লট এলাহাবাদ এসে বসবাস শুরু করেছে। ধোপাছড়িতে এ সকল রোহিঙ্গা বসতী গড়ে তোলার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা এখন রোহিঙ্গারা। গত চার দশকে মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইস্যু তুলে এসব রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করে। চন্দনাইশের পাহাড়ি জনপদের ইউনিয়ন ধোপাছড়ি, দোহাজারী, হাশিমপুরে খাসজমি দখল করে বসতী গড়ে তোলার কারণে ধোপাছড়ি এলাকা অনেকটা রাখাইন রাজ্যে পরিনত হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অনেকেই বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নামও লিপিবদ্ধ করে নিয়েছে।
তাছাড়া এ সকল রোহিঙ্গারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিএফ কার্ডের চালও পাচ্ছে অনেক পরিবার। ধোপাছড়ি ইউনিয়নের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনও রয়েছে অনেক রোহিঙ্গা। এদের অবৈধ সব সুযোগ সুবিধা দিতে সহায়তা করছে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত হওয়া এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। অসাধু এসব জনপ্রতিনিধিদের নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বানিয়ে অনেকে ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা সাজিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
একটি প্রভাবশালী মহল তাদের নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ধোপাছড়ির প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থায়ী বাড়ীঘর বানিয়ে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। অনেকে জমিজমা কিনে নিয়ে স্থায়ী বাড়ীভিটা তৈরি করে নিয়েছে। যে সকল রোহিঙ্গারা এখানে স্থায়ী বসতী গড়ে তুলেছে তারা রাখাইন রাজ্যে আত্মীয়স্বজনদের খবর দিয়ে এখানে চলে আসার উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতি বছর ধোপাছড়িতে রোহিঙ্গাদের আগমন আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার এ বিষয়ে স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবৈধভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে না পারলে এক সময় ধোপাছড়ির পুরো ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের তথা রাখাইন রাজ্যে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিজ্ঞ মহল।
স্থানীয় একজন মেম্বার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা সত্ত্বে বলেছেন, একজন চৌকিদার, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জেন থেকে শুরু করে স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছে এ সকল রোহিঙ্গারা। যে সকল রোহিঙ্গারা স্থায়ী আয়ের উৎস গড়ে তুলতে পারেনি, তারা পাহাড়ের গাছপালা কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে, পাহাড় কেটে জমি তৈরি করে চাষাবাদ করছে। দিনের পর দিন যেন অপ্রতিরোধ হয়ে উঠেছে এ সকল রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধাচরণ করলে তারা হত্যার হুমকি, হামলা, মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন-বন বিভাগের জায়গা দখল করে ভিলেইজার, সেটেলার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে নানা রকম অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা।
এ সকল রোহিঙ্গারা সরকারি খাসজমি, বনভূমি দখল করে বসতী স্থাপন, চাষাবাদ করলেও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অজুহাতে ধোপাছড়িতে রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে । দোহাজারী সদর এলাকায় বার্মা পাড়া নামে একটি পাড়াও গড়ে উঠেছে। এখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে চলেছে। বর্তমানে মিয়ানমারে নিসংশভাবে হত্যা করার কারণে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করছে। এদের মধ্য থেকে চন্দনাইশে থাকা রোহিঙ্গাদের আত্মীয় স্বজনরা পরিচয়ে সুবাদে চন্দনাইশের দোহাজারী ও ধোপাছড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় এসে অবস্থান নিয়েছে। অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের বসতী গড়ে তোলার ব্যাপারে স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এই ব্যাপারে ধোপাছড়ি চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম বলেছেন, ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনের পরিচয় সুবাদে ধোপাছড়ির বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এবং প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ চৌধুরী বলেছেন ৯ সেপ্টেম্বর দোহাজারি হয়ে ৩নং ওয়ার্ডের চর পাড়া ও ৬নং ওয়ার্ডের টেম্পু পাড়ায় একই দিনে অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গাসহ শতাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।
একই ভাবে দোহাজারি বার্মা পাড়া এলাকায় অর্ধ শতাধিক এবং শঙ্খ নদীর দক্ষিণ পাড়ে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয়রা জানান। একই ভাবে হাশিমপুর এলাকায় কিছু কিছু রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী। থানা অফিসার ইনচার্জ ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেছেন, ইতিমধ্যে চন্দনাইশে বিভিন্ন এলাকায় ২/৩ শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান বলেছেন তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধোপাছড়িতে আড়াই’শ থেকে তিন’শ এবং দোহাজারীতে শতাধিক সহ অর্ধ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তবে হাশিমপুর ছৈয়দাবাদ, লর্ড এলাহাবাদ, কাঞ্চননগর পাহাড়ী এলাকার তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানান।