মিয়ানমারের কসাইখানা থেকে উখিয়ার লঙ্গরখানা

0

গোলাম শরীফ টিটু/ গোলাম সরওয়ার,সিটিনিউজ : মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপিড়ন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে প্রান বাঁচাতে বাংলাদেশের উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কপাল খুব খারাপ! দু:খ-দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না তাদের। খোলা আকাশের নিচে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা যখন ক্ষুধার জ্বালা আর আশ্রয়হীন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তখন আশ্বিনেও বৃষ্টির দাপট যেন বেড়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে তুমুল বৃষ্টিপাত হচ্ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়। পাহাড়ি ঢলের পানিতে চুপসে গেছে আশ্রয়হীন মানুষগুলো। অপরদিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন্য হাতির আক্রমনে দুজন নিহত হয়েছে। হাতির পায়ের তলায় পীষ্ট হয়ে মারা গেছে তারা। বাংলাদেশে যেমন আছে মানবতাবাদী সরকার, দরদী জনগোষ্ঠি।

যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য ও বস্ত্রের সংস্থান নিয়ে কাজ করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজের সচ্ছল ব্যক্তি ও সংগঠন। একই সময়ে উখিয়া ও এলাকার কতিপয় দালালচক্র অসহায় রোহিঙ্গাদের স্বর্ন, টাকা-পয়সা, গবাদি পশু নাম মাত্র মুল্যে গ্রাস করছেন। সরকারী জায়গা দখল করে বিক্রি শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের কাছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আসা

রিলিপ সামগ্রীর উপরও ভাগ বসাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এরই প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কসাইখানা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জরুরী ভিত্তিতে খাবার নিশ্চিতের জন্য কক্সবাবাজারে চালু করা হয়েছে আটটি লঙ্গরখানা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রোহিঙ্গা সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ বিষয়টি জানিয়েছেন।এসব লঙ্গরখানায় রান্না করা খাবার সীমান্ত এলাকায় ১২টি স্থান থেকে বিতরন করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে এপারে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এদিকে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাকিতভাবে যতই চাপ দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নরম হচ্ছে না। রোহিঙ্গা বলে কোন জাতিসত্তা মিয়ানমারে কখনোই ছিল না দাবী করে এ বিষয়ে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হাইং। যিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিঙ্গা নিধযজ্ঞের। তিনি বলেন,’ বিদেশী সংস্থাগুলো যা বলছে তাতে কান দেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের উচিত হবে না। গত ২৫ আগষ্ট থেকে রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর শুরু হওয়া দমন-পীড়ন ও নিধনযজ্ঞের বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরী করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

নানা বিষয়ে বিরোধ থাকলেও মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল এনএলডির, দেশটির সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগরিষ্ট বৌদ্ধরা। রাখাইনে কয়েক শতক ধরে বসবাস করে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে তারা নিজেদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। এই বিদ্বেষ থেকেই যুগের পর যুগ ধরে রোহিঙ্গা নিপীড়ন চলে আসছে যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উপর। গত কয়েক যুগ ধরে পাচ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে বাংলাদেশে নতুন করে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সেনাবাহিনী কিভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কিভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়া হচ্ছে, তার গা শিউরে ওঠা বন্ননা পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের মুখে। রোহিঙ্গাদের উপর যা চলছে তাকে স্পষ্টভাবে জাতিগত নির্মুল অভিযান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার। জাতীসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিবিসিকে সাক্ষাতকারে বলেছেন, মিয়ামার এখনও অনেকখানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে তা বেশ স্পষ্ট। আর রাখাইনে যা ঘটেছে তা সেনাবাহিনীর কারনেই । মিয়ানমারের নেত্রী এখনই সেনা অভিযান বন্ধের উদ্যোগ না নিলে ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.