আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে সমালোচনা হচ্ছে তা তিনি কেয়ার করেন না। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সংঘাতের পর রোহিঙ্গা সঙ্কট তীব্র হওয়ার পর মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে তিনি একথা বলেন। সু চি বলেন, ‘বেশিরভাগ মুসলিমই রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালায়নি এবং সেখানে সহিংসতা প্রশমিত হয়েছে।’
বিবিসির খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী জাতির ভাষণ দিচ্ছেন, কারণ চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি অংশ নিচ্ছেন না।
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট অন্তত ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র যোদ্ধারা প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করার খবর দিয়েছে। যদিও মিয়ানমার সরকার বলেছে, তাদের অভিযানে ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আর নির্যাতনের মুখে প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত গণহত্যা’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, মিয়ানমার সরকার এসব নাকচ করে রাখাইনের মুসলিম বিতাড়নের অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাবেক নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে।
এর আগে নিজের ফেসবুক পোস্টে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালী সন্ত্রাসী’ অভিহিত করেছিলেন তিনি এবং ইস্যুটি নিয়ে বিশ্ব্যব্যাপী ‘চরম মিথ্যাচার’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
জাতিসংঘের চলমান সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভায় সু চির থাকার কথা ছিল। সেখানে আন্তর্জাতিক মহল তার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার সম্ভাবনা ছিল। এই কারণেই তিনি সভায় অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার নেত্রী বলেন, চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে তার সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা বিশ্বমহলের জানা দরকার।
ভাষণে তিনি রাখাইন রাজ্যে সকল ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা প্রকাশ করেন এবং যারা এর পেছনে দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর বলেন, ‘রাখাইন থেকে মুসলিমরা কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না।’
পরিস্থিতি দেখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন পরিদর্শনে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) এই নেত্রী।
আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তার সরকার কাজ করবে বলেও জানান তিনি।