চট্টগ্রাম ১০ আসনে আওয়ামীলীগ বিএনপির প্রর্থীদের দৌড়ঝাপ

0

দিলীপ তালুকদার/গোলাম সরওয়ার,সিটিনিউজ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী আরো প্রায় বছর দেড়েক বাকী।এরই মধ্যে দেশের সর্বত্র নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ইতিমধ্যে নেতা, পাতি নেতা, হাফনেতা, চামচা নেতারা মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে।চট্টগ্রামের সর্বত্র ব্যানার, ফ্যাষ্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এলাকাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর উছিলায় আগাম নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। চট্টগ্রামের ১৬ টি আসনের মাঠ পর্যায়ের সংসদ সদস্য প্রার্থীতার রির্পোট কেন্দ্রে চলে গেছে। দলীয় সভানেত্রী ৩শ আসনের মাঠ পর্যায়ের একাধিক রির্পোট নিয়ে সময় দিচ্ছেন। চুলছেরা বিশ্লেষন করছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দলীয়ভাবে সংগৃহীত রির্পোট সংগ্রহ করেছেন। তবে দলীয় হাই কমান্ড সূত্র জানায়, তৃণমূলের মতামতই প্রাধান্য পাবে দলীয় মনোনয়নে।

তৃণমূলের সাথে সম্পর্কহীণ কোন নেতাকে কোনভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবে না। পাশাপাশি যে সমস্ত নেতা দলীয় কোন্দলে জড়িত, দুর্নীতে জড়িত, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত তারা এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। সে যত বড় নেতা হোকনাকেন।পাশাপাশি বিএনপিও সারাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের রির্পোট সংগ্রহ করেছেন। দলের অনেক নেতাই মামলার বেড়াজারে জড়িত হয়ে বর্তমানে এলাকা ছাড়া। মামলা হামলা মাথায় নিয়েই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে হচ্ছে।

আজকের সূর্যোদয় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনী আসনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথমে চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনী চালচিত্র তুলে ধরা হলো। এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে কার গ্রহনযোগ্যতা বেশী তা তুলে ধরা হলো। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর)নির্বাচনী এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডবলমুরিং হালিশহর এলাকাটি চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত।

২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ (ডবলমুরিং) আসনটি ভেঙে দুটি আসন করা হয়েছিল। একটি চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসন। অপরটি চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)। চট্টগ্রাম-১০ আসন গঠিত হওয়ার পর দুই মেয়াদে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. আফছারুল আমীন। প্রথম মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর তাকে নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী করা হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন ডাঃ আফছারুল আমীন। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও সরকারী দল থেকে ডাঃ আফসারুল আমিন ছাড়াও আরও কয়েকজন নেতা মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে গিয়ে সিটি মেয়র হওয়া এবং পরে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে এম মনজুর আলম আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইছেন।আরো আছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর প্রয়াত এমএ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার য, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ মাহমুদুল হক, শহিদ পরিবারের সন্তান যুবলীগের ফরিদ মাহমুদ। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা এরশাদা উল্লাহ এবার মনোনয়ন চাইবেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট প্রার্থীদের রয়েছে রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজ। ফলে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়বে দলের হাই কমান্ড।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের আফছারুল আমীনের সঙ্গে নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যান বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী নোমান। সে সময় আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মনজুর আলম।

বড় ব্যবধানে জয়লাভের পর আফছারুল আমীনকে প্রথমে নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং পরে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সংসদ সদস্য হন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আফছারুল আমীন। অন্যদিকে মনজুর আলমও ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় ওই আসন থেকে তিনি আর নির্বাচন করেননি। মেয়র নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের অন্যতম হ্যাভিয়েট প্রার্থী ও তার রাজনৈতিক গুরু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।এবার ডাঃ আফছারুল আমীন এখন অনেকটাই নীরব। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয় ফ্লাইওভার নির্মাণ ও রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে। বলতে গেলে দলীয় পর্যায়ে বর্তমানে তিনি এক কোনঠাসা হয়ে আছেন।
এরপরেও ডাঃ আফছারুল আমীন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকেই চাইতে পারেন। এ অধিকার সবার আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই হবেন নৌকার কান্ডারি। আশা করি আমার ওপর সভানেত্রীর আস্থা রয়েছে।’

এব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে এম মনজুর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এলাকায় সামাজিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি দীর্ঘদিন থেকে। মাঝখানে অভিমান থেকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সিটি মেয়র হয়েছিলাম। নগরীর মানুষ আমাকে ৫ বছর তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। রাজনীতির নোংরা খেলায় টিকতে না পেরে নীরব হয়ে গেছি। এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করব। তবে আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়, তিনি যদি আওয়ামীলীগে যোগ দেন তবে তার মনোনয়ন বিবেচনা করা হবে।এর আগে তিনি একবার আওয়ামীলীগে যোগ দেবেন বলে ঘোষনা দিলেও পরে সরে এসেছেন।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। পরে তিনি যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনের বর্তমান এমপির সঙ্গে জনগণের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন পেলে সৃষ্ট বিভাজন ঘুচাব। এলাকার উন্নয়নে মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।’

এদিকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে চট্টগ্রামের রাজপথ কাপানো লড়াকু সৈনিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট সংগঠক, দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ ইতিমধ্যে এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন।দলীয় কর্মসূচীর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন।ছাত্র অবস্থায় সমাজসেবায় নিয়োজিত থাকার পাশািপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে তার যাত্রা শুরু হয়। ইতিমধ্যে তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি শহীদ পরিবারের সন্তান। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু। নগর যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটিতে ছিলাম। নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। এ আসনে অনেক ত্যাগী নেতারা উপেক্ষিত ছিল। আমি ত্যাগী ও উপেক্ষিত নেতাকর্মীসহ সকলকে নিয়ে কাজ করতে চায়। দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নেত্রী যদি আমাকে মাঠ পর্যায়ে যোগ্য হিসেবে মনোনয়ন দেন আরও ব্যাপকভাবে জনগণের সেবা করতে পারব । এ কারণে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

অন্যদিকে চট্টগ্রামরে নাভী বলে খ্যাত চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দুই মেয়াদে মন্ত্রী হন। কিন্তু ২০০৮ সালে আসন ভাগ হওয়ার পর চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নোমান হেরে যান। চট্টগ্রাম-১০ আসনে আব্দুল্লাহ আল নোমান বিএনপির একক প্রার্থী, এটা নিশ্চিত হলেও আর এক বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এরশাদ উল্লাহ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় কাজ করছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.