আসন সীমিত ”উৎকণ্ঠায় মেধাবীরা”

0

সিটিনিউজবিডি ::   শুধু ভালো ফল করলেই হবে না, অভিভাবকের প্রত্যাশা ও নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য পড়তে হবে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় মেধার সর্বোচ্চ স্বাক্ষর রেখেও স্বস্তিতে নেই সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পাওয়াসহ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এখন মনে শুধু উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা।এজন্য শিগগিরই নামতে হবে ভর্তিযুদ্ধে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত আসন সংখ্যাই শিক্ষার্থীদের মনে এমন আশঙ্কার মূল কারণ।

জানা গেছে, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে দেশের ৩২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে প্রায় ৫১ হাজার (ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স ছাড়া)। আর গতকাল প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় শুধু জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। এর মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ছাড়া অন্য আট বোর্ডে জিপিএ-৫ রয়েছে ৩৪ হাজার ৭২১টি। এই জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৬ হাজার ৫৫৬, মানবিক বিভাগে ২ হাজার ৪৪৩ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে রয়েছে ৫ হাজার ৭২২ জন।

একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসন আছে ৩ হাজার ১৭৬ এবং বুয়েটে রয়েছে মাত্র ৯৯৬টি। ফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখেও প্রায় ২১ হাজার মেধাবী পছন্দের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না।

মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬ হাজার ৫৮২টি আসনের মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় আড়াই হাজার এবং বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে মাত্র এক হাজারের মতো।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ সব বিভাগ মিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র নয় হাজার। আর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে প্রায় এক হাজার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫শ’ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার আসন।

জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই যখন হিসাবটি এমন তখন এবারের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৪ থেকে ৫ প্রাপ্ত ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮০ পরীক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আবার এর সঙ্গে যোগ হবে গত বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি অংশও। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে আসন আছে দেড় লক্ষাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশতে শিক্ষার চেয়ে বাণিজ্য প্রাধান্য পাওয়ায় এবং সরকারের সঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বছর বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফি বাড়ে। ফলে আর্থিক সামর্থ্যহীন পরিবারের শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে আবার ফিরে যেতে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো একই অবস্থা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতেও। এই কলেজগুলোতে আসন আছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। কিন্তু উচ্চ ভর্তি ও সেমিস্টার ফি’র কলেজগুলো মধ্যবিত্তদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দুনিয়ার কোনো দেশেই সবাই উচ্চ শিক্ষা নেয় না। শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে কোনো লাভ নেই, এজন্য আমাদের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে জোর দিতে হবে। তারপরও যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তারা সবাই ভর্তির সুযোগ পাবে, আসনের জন্য কেউ পড়তে পাড়বে না-এমন হওয়ার সুযোগ নেই। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে হয়তো সবাই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাবে না।

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু সেশনজট (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) ও শিক্ষার মান নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.