রাজধানীতে আ’লীগের দু’পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৩ জনকে আটক করেছে লালবাগ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আজিমপুর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ বিষয়ে লালবাগ থানার ডিউটি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষের ঝামেলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের টিম থানায় আসলে তাদের নাম-পরিচয় বিস্তারিত জানা যাবে।

তবে আটককৃতদের অধিকাংশই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের অনুসারী বলে জানা গেছে।

এদিকে লালবাগ থানার ওসি মনিরুজ্জামান  বলেন, ওরা দুই পক্ষ একটু ঝামেলা করছিল। পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে আমরা কয়েকজনকে আটক করি।

দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি ইব্রাহিম খান  বলেন, তারা ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এজন্য পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, গত মেয়র নির্বাচনের সময় থেকেই বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। দুইজনই বর্তমান দায়িত্বে এসে বলয় শক্তিশালী করার পর তা আরও বেড়েছে।

দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে এ বিরোধ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে, যা গত ২৫ অক্টোবর মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময়ে প্রকাশ্যে চলে আসে। সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কনফারেন্সে রেখেই দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়ায়। এর জের ধরে পরবর্তীতে গত ১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেও দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই দুই ঘটনায় লাঞ্ছিত হন ৩৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি।

এদিকে বৃহস্পতিবার আজিমপুরের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে এক সভার আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচীতে অংশ নিতে এসে সকালে কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় ময়লার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখেন নেতাকর্মীরা। আর স্থানীয়রা  জানিয়েছেন, ভোরেই তারা ময়লার স্তুপ দেখেছেন, রাতে তা ফেলা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।

শাহে আলম মুরাদের অনুসারীরা বলছেন, কর্মসূচী বাধাগ্রস্ত করতেই সিটি কর্পোরেশনের ৩-৪ গাড়ি ময়লা কর্মসূচীস্থলে ফেলা হয়েছে। এর পিছনে সাঈদ খোকন জড়িত বলে তাদের দাবি।

এ বিষয়ে শাহে আলম মুরাদ  বলেন, এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ-কারবার। আওয়ামী লীগের কর্মসূচীকে বাধাগ্রস্ত করতেই তারা এভাবে ময়লা ফেলেছে।

পরে ময়লা সরিয়েই সভায় অংশ নেয় মুরাদের অনুসারীরা। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিপু মনির অংশগ্রহণের কথা থাকলেও তিনি অংশ নেননি। এ বিষয়ে তার সাথে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে সভায় অংশ নেওয়া খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের অনৈক্য থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে আবু আহমেদ মুন্নাফীকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিক কমিটির’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাঈদ খোকনের অনুসারীরা। মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ এনে তারা মুরাদের পদত্যগ চেয়ে পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের দিকে যেতে চান।

পরে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় তারা বাসস্ট্যান্ডেই অবস্থান নেন। এ খবর পেয়ে বেলা ১টার দিকে মুরাদের অনুসারীরাও পাল্টা মিছিল নিয়ে আজিমপুরের দিক আসেন।

তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। তারা মুরাদের পদত্যাগ চায়। কিন্তু মুরাদ পুলিশের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধাদের ব্যানার কেড়ে নিয়েছে। তাদের প্রতি গুলি করিয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও।

এ বিষয়ে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পিযুজ কান্তি ভট্টচার্য  বলেন, এগুলো খুবই দৃষ্টিকটু, শোভনীয় নয়। এ ধরণের অনৈক্য দূর করতে হবে। তা না হলে দলের ক্ষতি হবে।

এসময় পুলিশ সাঈদ খোকনের অনুসারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ৩টি মোটরসাইকেলে (ঢাকা মেট্রো ল-১১-১২৬৮, ঢাকা মেট্রো ছ- ৪৯-৭৯১০, ঢাকা মেট্রো ল- ১৪-৬৭৬৭) আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া ভাংচুর করে বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল।

এসময় উভয় পক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে। এছাড়া আটক করে ১৩ জনকে।

এ বিষয়ে সাঈদ খোকনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

তবে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত আবু আহমেদ মুন্নাফী নিজেদের দিকে আসা ময়লার স্তুপ রাস্তায় ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.