রাউজানে আমনের বাম্পার ফলন!

0

এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান :: রাউজান উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন ফলেছে। পাকা ধানের লালচে রঙে কৃষকের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এতে বেশ আনন্দিত কৃষকেরা। মাঠে সোনলী ধানের দোলায় ফুটেছে কৃষকের মুখের হাসি।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। আগমী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু ফসলের কাঙ্খিত দাম পাওয়া ও শেষ মুহুর্তের অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১১৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশি ১১১৫০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ২০০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ২.৮৯ মেট্রিক টন।

প্রথম দিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্টি বন্যার ফলে বীজ তলার ক্ষতি হলেও পরবর্তী পর্যায়ে আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আমানের বাম্পার ফলন ফলেছে। কৃষকেরা প্রযুক্তিগত সেবা গ্রহণ করায় এবছর ফসলে রোগবালাই কম হয়েছে।

উপজেলার পাহাড়তলী, বাগোয়ান, কদলপুর, নোয়াপাড়া, সুলতানপুর, হলদিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কোথাও মাঠে সোনালী ধান, কোথাও হালকা হলদে- সবুজের সংমিশ্রণে অপূর্ব দৃশ্য। কৃষকেরা কামলা (দিন মজুর) নিয়ে কাটছে ফসল।

অনেকেই প্রযুক্তিগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক মাড়াই যন্ত্র দিয়ে ফসলের মাঠের ধান মাড়াই করে চটের বস্তায় ভরে ধান ঘরে তুলছেন। আকাশে একটু মেঘ করলেই কৃষকের মুখ যেন সেই কালো মেঘেই ঢাকা পড়ে যায়। অনেক স্থানে কামলার সংকটে পাকা ফসল ঘরে তোলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

বাজারে ভোলা,সন্দ্বীপ,ময়মনসিংহ,নেত্রকোনা,বাশঁখালীসহ বিভিন্ন স্থানের কাজের লোক দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ধান কাটা লোকদের দৈনিক মজুরীও বেশ চওড়া। একেকজন কাজের লোকের দৈনিক মুজুরি ৫শ থেকে ৬শ টাকা। যা অতিরিক্ত মজুরি বলে মনে করেন কৃষকেরা। মাড়াই যন্ত্রে ধান মাড়াই করতে খানি (৪০ শতক) প্রতি একহাজার থেকে-১২শ টাকা। তবুও সব সমস্যাকে আলিঙ্গন করে ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দাবন এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি পাঁচ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। পাকা আমন ধান কেটে ঘরে নিয়োছি। বসত ঘরের উঠানে ধান মাড়াই যন্ত্র দিয়ে কাজ করছি।

পাহাড়তলী ইউনিয়নের কৃষক শেখ ইয়াছিন বলেন, এবারের আমন মৌসুমে প্রায় ৯ একর জমি চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৫২ জাতের ধানের চাষ করে ভাল ফলন হয়েছে। একর প্রতি ৬০-৬২ মণ ধান ঘরে ঊঠবে বলে আশা করছি। এই ফসল উৎপাদনে কানি (৪০ শতক) প্রতি খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। তবে কোন ধরণের দূর্যোগ না হলে এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে লাভবান হব।

তিনি অভিযোগ করেন, দায়িত্ব প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ে তিনি তেমন কোন সহযোগীতা পান নি। বারবার যোগাযোগ করা গেলেও কোন ধরণের সাড়া পাননি। কৃষিকর্মকর্তারা পাহাড়তলী বাজারে একটি দোকানে বসে ফোনে তালিকাভুক্ত কৃষকদের তথ্য নিয়ে চলে যায়। মাঠ পর্যায়ে আসে না।

এই ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন,আমরা উপজেলার ৩৪৫৪০ টি কৃষি পরিবারকে কারিগরি সহযোগীতা দিয়ে থাকি। এদের মধ্যে ২৭০০০ কৃষকদের কৃষি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১২শ জন কৃষকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। ৬০ জন কৃষককে বীজ সংরক্ষণ প্রদর্শনীর জন্য ১০ কেজি করে আমন ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন,এই মৌসুমে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১১হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে উফশীজাতের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কয়েক দফায় প্রবল বর্ষণ ও বন্যার কারণে ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে দুই মেট্রিক টন ৮৫ কেজি চাল উৎপাদিত হবে। এ হিসেবে এ উপজেলায় ৩১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। আমরা কৃষকদের প্রযুক্তিগত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর ফলস্বরূপ এবার ভাল ফলন হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.