বিশ্বজনীন মানবাধিকার মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন

0

চট্টগ্রাম : জাতিসংঘ ঘোষিত ৬৯ তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস রবিবার ১০ ডিসেম্বর । ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ সনদ “সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা” গৃহিত হয়।

চট্টগ্রামে দিবসটি উদ্যাপনকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি অবহিতকরণ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অদ্য ৯ ডিসেম্বর’১৭ দুপুরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের বিশেষ প্রতিনিধি ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি, মানবাধিকার কর্মী আমিনুল হক বাবু।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কার্যনির্বাহী সভাপতি সাগর দোভাষ, সহ-সভাপতিবৃন্দ আসাদুজ্জামান খান, তানভীর শাহরিয়ার রিমন, মঞ্জুরুল হক, নওশাদ চৌধুরী মিটু, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী কে.এন এম রিয়াদ, নোমান উল্লাহ বাহার, অর্থ সম্পাদক শেখ ওয়ালিদ হাসান, ডা. দীপক কান্তি বড়ুয়া, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, আবদুর রউফ, আদনানুল ইসলাম, হাজী চান্দু মিয়া, কাইয়ুমুর রশীদ বাবু প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে আমিনুল হক বাবু বলেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যে সকল অধিকার দরকার তাই মানবাধিকার। মানবাধিকার মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এবং সামাজিক জীব হিসেবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অপরিহার্য। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মানবাধিকার বিষয়টি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ কিন্তু বাস্তবায়নের চিত্র ভিন্ন। দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, ন্যায় বিচারের সংকট, সুশাসনের অভাব, বিভিন্নমূখী অত্যাচার নিপীড়ন চলছে পৃথিবীজুড়ে। মানবাধিকার লংঘন চলছে প্রতিনিয়ত।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলদারের সুযোগ্য নেতৃত্বে মানবাধিকার উন্নয়ন, সংরক্ষণ, সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন বাস্তবায়নে নিবেদিত একটি অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গিকারবদ্ধ সংগঠন “বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন” এর যাত্রা শুরু করে। আমরা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বৃৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল এতদঞ্চলে মানবাধিকার সুরক্ষায় অসহায় মানুষদের বিনা মুল্যে আইনগত সহায়তা, প্রশাসনের মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘন রোধ, দূর্যোগকালীন সময়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো, শরণার্থীদের সহায়তা, শিক্ষার্থী নির্যাতন প্রতিরোধে ভূমিকা, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে বিভিন্ন পদক্ষেপ, স্বাবলম্বীতা আনয়নে কার্যকর সহায়তাসহ মানবাধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকান্ডের কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি।

সাড়া জাগানো ৬ বছরের শেকলবন্দী মাধবীর নির্মমতার চিত্র ও মুক্তির আকাঙ্খা এবং পরিবারের অসহায়ত্ব থেকে পরিত্রাণে আমাদের সক্রিয় প্রচেষ্টায় তার শেকলবন্দীত্ব থেকে মুক্তি, তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা প্রদান, পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনয়নে রিক্সা প্রদান সহ বিভিন্ন সহায়তায় মাধবী সুস্থ ও মুক্ত জীবনে পদার্পণ করে। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানা এলাকার মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী বিলকিসকে আমরা দুই বছরাধীন শেকলবন্দীত্ব থেকে মুক্তি প্রদান সহ সুুুুচিকিৎসার ব্যবস্থার ফলে সে আজ সুস্থ ও সবল জীবন যাপন করছে।

বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে শিশু গৃহকর্মী রিমাকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে মুক্তিপূর্বক মানবিক সহায়তা সমেত তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও, পটিয়ায় ধর্ষণের শিকার অসহায় নারীকে আইনি সহায়তা প্রদান, আনোয়ারায় খোকন কান্তি দাশের শিশু কন্যাকে ধর্ষণের আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিতে আইনি সহায়তা প্রদান। ফটিকছড়ির ক্যান্সার আক্রান্ত ৪ বছর বয়সী ফাহমিদার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে প্রতিবাদ সহ নানামূখী মানবাধিকার কর্মযজ্ঞ পালন করেছি।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যতম মানবাধিকার সংকট রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা, পরবর্তীতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ফ্রি ঔষধসহ মেডিকেল ক্যাম্প, পুষ্টিকর খাদ্য বিতরণ সহ নানাবিধ মানবিক কর্মকান্ড পরিচালনা করি। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ মানবাধিকার দিবস উদযাপনে কয়েকটি কর্মসূচির ঘোষণা করেন।

কর্মসূচি সমূহ হচ্ছে-
১০ ডিসেম্বর বিকাল ৩.০০ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন শাখার সম্মিলিত উদ্যোগে মানবাধিকার সমাবেশ ও শোভাযাত্রা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে, ১২ ডিসেম্বর ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং নির্ণয় ও রক্ত দান কর্মসূচী। ১৪ ডিসেম্বর অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ১৬ ডিসেম্বর হতে পর্যায়ক্রমে ৫০ জন অসহায় ছানি রোগীদের ফ্রি অপারেশনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.