শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী
এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান :: বর্ণাঢ্য ও বিপুল উৎসবের আমেজে শুরু হওয়া রাউজানের কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের ৫০ বছর পূর্তির দুইদিনব্যাপী সুবর্ণ জয়ন্তী’র দ্বিতীয়দিন মূল পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেছেন বর্তমান সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর সরকার প্রত্যক শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথমদিন বই দিয়ে পৃথিবীতে একটি নজির স্থাপন করেছে। দুনিয়ার আর কোথাও এভাবে বই দেয়ার নিয়ম নেই। আমরাও এখন অন্য দেশের কাছে অনুকরণীয়, অনুসরণীয় হচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়েছে। আমাদের দেশ দরিদ্র হতে পারে, আমাদের নতুন প্রজন্ম মেধার দিক দিয়ে দরিদ্র নয়। তবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে গুণগত, আধুনিক, প্রযুক্তিগত, মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এজন্য দেশে শিক্ষানীতি করা হচ্ছে। সেটা এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন দেশে একজন মানুষও যাতে নিরক্ষর না থাকে, সেজন্য মেধাবৃত্তির পাশাপাশি ১ কোটি ৬২ লক্ষ উপবৃত্তি দিচ্ছি। ২০১২ সালে আমরা ৯৯শতাং শিশুকে স্কুলে নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও ঝড়ে পড়া রোধ হচ্ছেনা। আমাদেরকে এ ঝড়ে পড়া রোধ করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্রমুক্ত, দুঃখ, দুর্দশা, অভাব অনটনের অবসান ঘটাতে চান। বঙ্গন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য তিনি ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্য ভিশন ঘোষণা করেছেন। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবাই পাচ্ছেন।
একসময় ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করেছেন। এখন আমরা ৩০ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করে ফেলেছি। ই-ফাইল চালু হয়ে গেছে। শিক্ষার সবকিছু আধুনিক প্রযুক্তিতে নিয়ে আসছি।
মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বিতীয় দিন বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা, সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি বিশ্বজিত ভট্টাচার্য্য’র স ালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু এমপি, মাধ্যমিক ও শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম. এ সালাম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিলুর রহমান চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, কদলপুর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন তিনি বলেন আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলা। বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা আছে, সেটা দিয়ে হবেনা, আমরা চাই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। আমরা নতুন প্রজন্মকে বর্তমান যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে চাই।
আমাদেরকে ভালো মানুষ, মূল্যেবোধ সম্পন্ন, সততা, নিষ্টাবান মানুষ গড়ে তোলতে হবে। এ জন্য দরকার গুনগত মান সম্পন্ন শিক্ষক। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষক আছে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে, ক্লাস করেনা। বাইরে পড়ান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্যোশে বলেন সাধারন শিক্ষা নিয়ে কর্মসংস্থান হবেনা। আধুনিক, প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষত হতে হবে।
আমাদের দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সহজে উন্নত শিক্ষা লাভ করতে পারে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নতুন শিক্ষা সর্ম্পকে গবেষণা করতে হবে। আমরা আর জ্ঞান, প্রযুক্তি আমদানি করতে চাইনা। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে লক্ষ্য এগুচ্ছে সেটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাকে আগে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন রাউজান এখন পিংক, গ্রীণ, ক্লিণ উপজেলা। এটি বাংলাদেশের বুকে একটি ব্যতিক্রম উপজেলা। এখানে কোনদিন হরতাল পালন হয়না। তিনি বলেন আজকের দিনটি রাউজান ও কদলপুরবাসীর জন্য আকেটি স্মরণীয় দিন। মন্ত্রীকে পেয়ে রাউজানের মানুষ আনন্দিত হয়েছে।
বিশেষ অতিথি সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু এমপি বলেন শিক্ষা মানুষকে সর্বোচ্চ শিকরে নিয়ে যায়। তবে প্রকৃত শিক্ষা অর্জণ করতে হবে। শিক্ষাকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। যাতে শতভাগ শিক্ষিত হয় দেশ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি ক্ষুদা, দারিদ্রমুক্ত দেশ চেয়েছিলেন। আমার বিশ্বাস স্বপ্ন, বিশ্বাস থাকলে এদেশ দারিদ্রমুক্ত, নিরক্ষরমুক্ত, ক্ষুদামুক্ত হবে এদেশ। তিনি বলেন আমি এই কদলপুরের সন্তান, এই গ্রামেই আমাকে সবসময় ফিরে আসতে হবে নাড়ির টানে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন আমার আজ আনন্দের সময়। আমি মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, যিনি প্রত্যন্ত অ লের এই স্কুলে এসে সময় দিয়েছেন। কদলপুরের মানুষ আজ গর্ভবোধ করতে পারে। তিনি বলেন মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি কদলপুর স্কুলে চারতলা ভবনসহ অনেক উন্নয়নের কথা আশ্বাস দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিলুর রহমান চৌধুরী বলেন ‘রাউজান অন্য যেকোন উপজেলার চেয়ে ভিন্ন ও সুন্দর উপজেলা। কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ আজ যে বর্ণিল আয়োজন করেছে, সেটি তারপ্রমাণ। অনুষ্ঠানে চার গুণীজনকে সংবর্ধণা প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বীমাবিদ এস. এম ইউসুফ। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত শিল্পীরা পরিবেশন করেন। এছাড়া রাতে র্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রথমদিন ছিল প্রাক্তণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র’র কূপন বিক্রি ও কিটস বিতরণের উদ্বোধন। এছাড়াও হালদা, কর্ণফুলী, মাতামহুরি, পদ্মা, যুমনা, শঙ্খসহ বিভিন্ন স্টলের উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো কদলপুরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। নিজ নিজ কর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অনেকে পুরনো বন্ধু-বান্ধবীদের দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন। বিশাল প্যান্ডেল, বর্ণিল ও চোখ ধাঁধানো আলোসজ্জার টানে পুরো কদলপুরের মানুষ যেন কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে ছুটে আসেন।