বন্দরে স্থানীয়রা সব সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত

0

চট্টগ্রাম : আমরা চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর-ইপিজেড-পতেঙ্গা অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া, অর্থাৎ অত্র অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের ভিটেমাটি অধিগ্রহণ করে যে সমস্ত সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ সহ অন্যান্য দাবী আপনাদের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি। চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা ও আধুনিকায়নের ফলে অত্র অঞ্চলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ভিটেমাটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রচুর জমি হুকুম দখল করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্থ নাগরিক অধিকার ফোরাম(বন্দর-ইপিজেড-পতেঙ্গা অঞ্চল) শনিবার ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।

তারা আরো বলেন সে সময় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস প্রদান করেন যে, বন্দরের সকল নিয়োগে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার থাকবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা সব সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত থেকে যায়। আমাদের দাবী হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্দর ও কাস্টমে সকল প্রকার নিয়োগে এবং ব্যবসা বাণিজ্যও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বন্দরের সকল নিয়োগে কোটার বাহিরেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োগের সকল পরীক্ষা চট্টগ্রামেই নিতে হবে। কোন অজুহাতেই চট্টগ্রামের বাহিরে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের সকল নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও কর্ণফুলীর নদীর নাব্যতা রক্ষায় অনতিবিলম্বে কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং কাজ শুরু করতে হবে। অত্র এলাকার দুঃখ বলে খ্যাত মহেশখাল ও মহেশখালের শাখা/সংযোগ খাল সমূহের গভীরতা বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মহেশখালের প্রবেশ মুখে স্থায়ী স্লুইচ গেইট নির্মাণপূর্বক জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণে বাস্তব সম্মত ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে।

কয়েক বছর আগে বন্দর সম্প্রসারণে ৩৯নং ওয়ার্ডস্থ নিউমুরিং এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসিকে ৩৭নং ওয়ার্ডস্থ হালিশহর বড়পুলে স্থানান্তরিত করা হয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের বরাদ্দকৃত জমির রেটিষ্ট্রেশন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করেন নাই। আমরা দাবী জানাচ্ছি কোন সময় ক্ষেপন না করে ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের নিজ নিজ নামে জমি রেজিষ্ট্রেশন ও নাম জারি দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করতে হবে।

আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছি, নিউমুরিং লেবার কলোনী কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং রোড সম্প্রসারণের জন্য ইয়ার্ডের পূর্ব পাশে স্থানীয়দের জমি আরও অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতিপূর্বে যে সমস্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তার বিপরীতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় বন্দর ও এল.এ. শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী বিভিন্ন অজুহাতে উৎকোচ আদায় করে এবং ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা হয়রানির শিকার হয়। আমরা সকল প্রকার অনিয়ম, স্বেচ্ছারিতা ও দূর্নীতি বন্ধে স্বচ্ছতাসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ দিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে স্থানীয় লোকদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি যে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনাল কাজ শুরু করবে।

বন্দর সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করায় আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অত্র অঞ্চলের অনেকের ভূমি হুকুম দখল করা হবে বল আমরা জানতে পেরেছি। আমরা চাই ক্ষতিগ্রস্থ ভূমির মালিক যেন ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায় এবং ভবিষ্যতে বে-টার্র্মিনালের কর্মকা-েও যেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক ও তাদের ছেলে-মেয়েরা সহ স্থানীয় লোকজন চাকুরীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। পতেঙ্গা/বন্দর এলাকার লালদিয়ার চর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের যে সমস্ত প্রকল্প গ্রহণ করেছে বা করবে, সেখানেও ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের যথাযথ পুনর্বাসন ও চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

আমরা আরও জানতে পেরেছি যে, সিডিএ কর্তৃক আউটার রিং রোড সম্প্রসারণের জন্য ৪১নং ওয়ার্ড চরপাড়ায় প্রায় ১৫০ পরিবারকে অধিগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি অধিগ্রহণ করা হয় উল্লেখিত আতঙ্কিত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমরা এ ব্যাপারে সিডিএ’র যথাযথ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বন্দর-ইপিজেড-পতেঙ্গা অঞ্চলের স্থানীয়দের ভিটেমাটি, জমি অধিগ্রহণ করে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অর্থাৎ বন্দর, কাস্টম, বিএসসি, সিইপিজেড, কেইপিজেড, বিভিন্ন তেল সেক্টর-রিফাইনারী, সাইলো, ড্রাইডক, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনীসহ সকল প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি।

বন্দর-ইপিজেড-পতেঙ্গা অঞ্চলে অবস্থিত বন্দরের বিভিন্ন কন্টেইনার ইয়ার্ড, বেসরকারী কন্টেইনার ইয়ার্ডের ভারী যানবাহন, ভারীলম্বা টেইলার নিয়ম বহর্ভিূতভাবে চালানোর কারণে যে যানজট সৃষ্টি হয় তাহা জনসাধারণের যাতায়াতের মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি করে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। কাস্টমস্ মোড় ও অফিসার্স কলোনীর সম্মুখে ফুট ওভার ব্রীজ কার্যত অচল বিধায় জনবহুল ও দূর্ঘটনা প্রবণ এলাকা সল্টগোলা ক্রসিং, বন্দরটিলা ও কেইপিজেড গেইটের পার্শ্বে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি।

অতএব, উপরে উল্লেখিত দাবী ও প্রস্তাব সমূহ বিবেচনা পূর্বক সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সমূহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের মাধ্যমে জোর দাবী জানাচ্ছি। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হারুন অর রশীদ, আবদুল মান্নান, হাসান মুরাদ, হাজী মো: হাসান, ইসকান্দার মিয়া, মো: ইলিয়াছ, শারমিন ফারুক, মো: ইউনুছ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.