‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন ও সম্ভাবনা-সংকট’ মতবিনিময় সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটিনিউজ :: চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার কলামিস্ট ফিচার ও উপ সম্পাদকীয় লেখকদের সাথে ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন ও সম্ভাবনা-সংকট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট সমাজসেবক ফরিদ মাহমুদ বলেন, আমাদের মধ্যে সমঝোতা করে চলার একটা মানসিকতা গড়ে ওঠেছে। এর ফলে আমরা অনেক অন্যায়, অনেক ভুল মুখ বুজে সহ্য করি।
বিতর্ক এড়াতে অনেক সত্যকে আমরা পাশ কাটাতে চেষ্টা করি। সকল পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে আমরা নিরাপদ, বিতর্কমুক্ত বিষয় নির্বাচন করে লেখার চেষ্টা করি। প্রকৃত লেখক কখনো সত্য, অন্যায় কাজকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে নিঝঞ্জাট রাখার চেষ্টা করতে পারে না। এতে লেখনির স্বার্থকতা থাকেনা।
একটা কথা মনে রাখতে হবে অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ না কেউ করবে। সত্যের পক্ষে কেউ না কেউ অবস্থান নেবে। হতে পারে সে সংস্কৃতি কর্মী, হতে পারে সে কলাম সৈনিক, হতে পারে সে সমাজকর্মী, হতে পারে সে রাজনীতিবিদ।
চট্টগ্রামে একমাত্র মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন এর ব্যাতিক্রম। তিনি জনকণ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা, সংকট, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তবে চট্টগ্রামের স্বার্থের ব্যাপারে সমন্বিত কণ্ঠে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটের টিউটর হলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে এই সভায় আলোচনায় অংশ নেন কলামিস্ট মোস্তফা কামাল পাশা, জোবায়ের সিদ্দিকী, আফসার মাহফুজ, চিত্রনায়ক পঙ্কজ বৈদ্য সুজন, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ, মোশারফ রাসেল, আজহার মাহমুদ, গীতিকার ফারুক হাসান, নাছির হোসাইন জীবন, ওসমান জাহাঙ্গীর, আরিফ চৌধুরী, গোলাম সরওয়ার, এস.এম. সরওয়ার, সাইদুল ইসলাম মাসুম, বরুণ কুমার আচার্য বলাই।
এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার জ্যাঁ নেসার ওসমান, কবি সাইদুল আরেফিন, সংগঠক এস.এম. সাঈদ সুমন, নেছার আহমেদ, শেখ নাছির আহমেদ, আফসার উদ্দিন অলি, ইকবাল ভূঁইয়া, সোহেল মো: ফখরুদ্দিন, এ.কে.এম আবু ইউসুফ, সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজান, এস.এম. হোসাইন, দিলিপ তালুকদার, অধ্যক্ষ ইউনুস কুতুবী, মোহাম্মদ হানিফ, সমিরণ পাল, এস.ডি জীবন, দেলোয়ার হোসেন দেলু, হোসেন সরওয়ারদী, ইয়াছিন ভূঁইয়া প্রমুখ।
এ সময় লেখক মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, কর্পোরেট দুনিয়ায় চাইলেও এখন অনেক কিছুই লেখা যায় না। বাণিজ্যকরণের ফলে অনেক কিছুই এখন নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের এই দুনিয়ায় ভার্চ্যুয়াল আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত, নিয়ন্ত্রনবিহীন। যা এই সময়ে খুব কার্যকর।
সাংবাদিক আফসার মাহফুজ বলেন, চট্টগ্রাম শহরে রাস্তাঘাট উন্নয়ন কাজের কারণে শহরের কিছু কিছু রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম লেগে থাকে। সারাশহরময় ধুলো বালি। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ১৫ নম্বর জেটি হতে মদুনাঘাট পর্যন্ত নৌপথ চালু করার কথা অনেকে বলেন, কিন্তু কর্ণফুলী নদীর দূষণ, নাব্যতা নষ্ট হওয়ার ফলে সে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
স্বাধীনতার পর থেকে চট্টগ্রাম বার বার উপেক্ষিত হয়েছে। চট্টগ্রামের আয় দিয়ে দেশ চললেও চট্টগ্রামের ছেলে-মেয়েরা, বন্দরে, রেলওয়েতে চাকুরির সুযোগ পায় না। উন্নয়ন কাজ দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কর্নফুলী নদী দখল ও দুষনমুক্ত করতে হবে। পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থা পরিকল্পিত না থাকায় আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর এলাকা বছরের পর বছর পানির নিচে থাকতে হয়।
সাংবাদিক জোবায়ের সিদ্দিকী বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সতেরো বছর মেয়র থাকাকালে যে উন্নয়ন হয়েছে এরপরে আর চোখে পরার মতো, বলার মতো উন্নয়ন হয়নি। পোর্ট কানেকটিং রোড, এক্সেস রোড, আরাকান রোড, বহাদ্দারহাট রোড থেকে কল্পলোক আবাসিক অবস্থা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তার কারণে কিছুদিন আগে লরি গর্তে পড়ে তিনজন মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং নানা উন্নয়নে যাদের ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছিল সে সব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার থেকে কেউ চাকুরি পায়নি। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সকল সংস্থাগুলোর সমন্বয়।
সাংবাদিক মোশারফ রাসেল বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনার অভাব দেখা যায়। অনেক সময় নেতার ইচ্ছেয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আদৌ এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেটা বিবেচনা করা হয় না। ব্যক্তির ইচ্ছের প্রতিফলনে প্রকল্প গ্রহনে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাজে আসে না। সাংবাদিক আজহার মাহমুদ বলেন, আমাদের নিজেদেরকে শোধরিয়ে সচেতন করতে হবে। আমি নিজে পরিচ্ছন্ন কিনা এটা ভাবতে হবে। পরিচ্ছন্নতার কথা আমরা বলি অথচ আমরাই আবর্জনা ময়লার বাক্সে না ফেলে রাস্তায় ছুড়ে মারি।
রাস্তা প্রশস্ত হবে কি করে? রাস্তার সিংহভাগই নানা সামগ্রি কিংবা গাড়ী পার্কিং করে আমরা দখল করে রাখি। আগে রাস্তা দখল মুক্ত করতে হবে। মতবিনিময় সভায় বক্তাগন বলেন, প্রসাশন ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ডিসিহিল হল আমাদের চাঁটগার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। এ নিয়ে কারো প্রতিবাদ কিংবা মাথাব্যথা নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও দুটি স্কুল সরকারীকরন করবে। সব স্কুল খুব কাছাকাছি হতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। হালিশহরের বিশাল অঞ্চলে কোন সরকারী স্কুল নেই। সারা চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় সারাদিন গ্যাস থাকে না। অথচ গ্রাহকরা প্রতিমাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে। অনেক আবাসিক এলাকায় দিনের পর দিন পানি থাকে না। পানির জন্য চারিদিকে হাহাকার। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। জনদূর্ভোগের বিষয়টি আমাদেরকে বিবেচনায় নিতে হবে।