আজ চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবসঃ বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে নিবৃতে

0

দিলীপ তালুকদার, সিটি নিউজঃ আজ চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। ২৪ জানুয়ারী ১৯৮৮ সালের এদিনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের নির্দেশে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে চট্টগ্রামের মাটি রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল ২৪জন, আহত হয়েছিল প্রায় দু’শতাধিক মানুষ।

সেই গণহত্যার আজ ৩০ বছর পার হলো। কিন্তু বিচারের বাণী নীরবে নিবৃতে কাঁদছে। আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে এ গণহত্যা চালানো হলেও সেই আওয়মীলীগ ঘটনার পর ৩ দফায় ক্ষমতায় কিন্তু এখনো বিচার পায়নি হতাহতের পরিবার পরিজন।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদিঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক। তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে তারই আজ্ঞাবহ পিআই জেসি মন্ডল গুলি করেন শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে।

পুলিশের গুলিতে নিহতরা হলেন, হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।

সেদিন চট্টগ্রামের রাজপথে বিক্ষু্ব্ধ জনতা
সেদিন চট্টগ্রামের রাজপথে প্রাণভয়ে ছুটছেন  জনতা

সেদিন আম জনতা মানব ঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়মীলীগ সভানেত্রীকে পুলিশের গুলি থেকে রক্ষা করলে রক্ষা পায়নি ২৪ জন মানুষ। গুরুতর আহত হয়েছিল প্রায় দু’শতাধিক মানুষ। আহতরা অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখনো। অনেকেই পঙ্গুত্ব নিয়েই চলে গেছেন পরপারে।

স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর ঘটনার চার বছর পরে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় হত্যাকান্ডের নির্দেশ দাতা তৎকালীন সিএমপি কমিশনার, মির্জা রকিবুল হুদাকে। তখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মির্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালী জোনের তৎকালীন পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মন্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো.আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। এরপর বিভিন্ন দল ক্ষমতায় আসে যায় কিন্তু এই মামলার অগ্রগতি হয়নি।রাজনৈতিক সমীকরনের কারনে খোদ আওয়ামীলীগ সরকারও দেখিয়েছে দায়ছাড়া ভাব।

 অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভ

                                      অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভ

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ থেকে ২০০০সাল সাক্ষ্য গ্রহণ হয় মোট ১৯জনের। ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাক্ষ্যগ্রহণ হয় মাত্র ২ জনের।

সেনাসমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সাল থেকে ২০০৮ সাল ১বছরে সাক্ষ্যগহণ হয় ১৩ জনের। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন এ মামলায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল এই ৬ বছরে ১জন সাক্ষী ছাড়া আর কোন সাক্ষীকে বিচারিক আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্মরণে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভটিও পড়ে রয়েছে অযত্ন অবহেলায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.