জামাল জাহেদ, কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কর্তৃক দু’জন নারী এনজিও কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাঞ্ছনার শিকার হওয়া দুই নারী কর্মী হলেন আয়েশা আক্তার ও হাসিনা বেগম। তারা ‘অগ্রযাত্রা’ নামক এনজিও’র মাঠ পর্যায়ের কর্মী।
দু’জন নারীকে ইউনিয়ন পরিষদের রুমে আটকে রেখে অশ্লীল গালিগালাজ সহ নানাভাবে হেনস্থ করা হয় বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। তারা জানান, ওই দুই নারীকে পরিষদের রুমে টানা তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন চেয়ারম্যান। এই সময় আটকে পড়া নারীদের আর্তচিৎকারের শব্দ শুনা গেছে বলেও স্থানীয় অনেকে এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এঘটনায় লাঞ্ছিত আয়েশা বেগমের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ‘অগ্রযাত্রা’র রামু উপজেলা ইনচার্জ হেলাল উদ্দীনকে ফোন করা হলে তিনি জানান, লাঞ্ছনার শিকার হয়ে তারা দু’জনই এখন ভেঙে পড়েছেন। তাদের সাথে অনেক সাংবাদিক ফোনে কথা বলেছেন। হয়তো এই মুহূর্তে তারা ক্লান্ত, তাই ফোন ধরতে পারেননি’।
হেলাল উদ্দীন বলেন, চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কর্তৃক তাদের নারী কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা সত্য। চেয়ারম্যান অন্যায়ভাবে তাদেরকে রুমে আটকে রাখে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ নানাভাবে হেনস্থা করেছেন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষযট ফোন স্থানীয় সংসদ ও থানা নির্বাহী অফিসার বরাবর অবহিত করলে ৩ঘণ্টা পর তড়িঘড়ি করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ‘অগ্রযাত্রা’ নামক এনজিও সংস্থাটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষকে নগদ আর্থ সাহায্য প্রদানে কাজ করছে। বিগত কয়েক মাস আগে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়া রামুর বিভিন্ন এলাকায় তারা আশ্রয়হীন এবং অসহায়দের সাহায্যের পরিকল্পনা প্রণয়ন করছিল। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত ২০৫০জনকে ৩হাজার করে ৩কিস্তিতে ৯হাজার অর্থ সাহায্যদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অর্থ প্রদান করার লক্ষ্যে সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৫০জনের একটি তালিকা প্রণয়ন করে প্রথমে জেলা প্রশাসক তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অবহিত করেন। তালিকায় স্থান পাওয়াদের বিকাশ একাউন্টের প্রদান করার প্রয়োজনে তারা প্রত্যেকেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার ফরম পূরণ করার পরামর্শ দেন এবং ফরম পূরণ করার জন্য ইউপি তথ্যসেবা কেন্দ্র ব্যবহার করেন।
এনজিও সূত্র বলছেন, এর আগে তালিকাটি তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দেখান এবং সে তালিকায় কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তখন চেয়ারম্যান তা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।। কিন্তু পরবর্তীতে প্রাথমিক ৪৫০জনকে অর্থপ্রদানে ফরম পূরণ করার জন্য তথ্য সেবা কেন্দ্রে গেলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে দুই নারী কর্মী আয়েশা আকতার ও হাসিনা বেগমের সাথে এমন নোংরা আচরণ করেন বলে জানালেন তারা।
অগ্রযাত্রার হেলাল উদ্দীন আরো অভিযোগ করেন, মূলত চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের চাওয়া নিজের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী অর্থ সাহায্য দেয়া হোক। কিন্তু তার দেয়া তালিকায় দেখা যায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে এলাকার সক্ষম ব্যক্তিবর্গ, প্রভাবশালীদের নাম। অগ্রযাত্রা এমন ব্যক্তিদের সাহায্য দেবে না এটা জানতে পেরে চেয়ারম্যান এধরনের অবাঞ্ছিত ব্যবহার করেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা অস্বীকার করে উল্টো অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, অগ্রযাত্রা অর্থ সাহায্যের নামে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ফরম বাবদ ১হাজার করে নিচ্ছে, এছাড়া তারা সাহায্য প্রদানে কালক্ষেপণ করছে-এমন অভিযোগ পেয়ে তাদের শাস্তি দিতে চেয়েছেন এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান নুরুল আমিন।
চেয়ারম্যানের অভিযোগের কথা হেলাল উদ্দীনকে জানালে তিনি তা তার মনগড়া বক্তব্য বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আসলে চেয়ারম্যান সুবিধা ভোগ করতে না পারায় এসব উল্টো বকছেন’।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনা সত্য। অত্যন্ত দু:খজনক ব্যাপার। চেয়ারম্যান এলাকায় কেউ সাহায্য প্রদান করুক কিংবা অন্য কেউ ইউনিয়নের উন্নয়নে কাজ করুক তা সহ্য করেন না। তিনি নিজেও এলাকার উন্নয়নে এপর্যন্ত তার প্রতিশ্রুতির কিছুই পূরণ করেননি। কিন্তু কেউ উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাইলে তাতেও বাঁধা দেন’।
এপ্রসঙ্গে কচ্ছপিয়া আওয়ামী লীগের এক সদস্য নাম প্রকাশের শর্তে বলেন, চেয়ারম্যান খুব বেপরোয়া আচরণ করছেন। মূলত এঘটনার জন্য তিনিই দায়ী।
তিনি নিজেই এই টাকা সাহায্য দিচ্ছেন-এ কথা প্রচারের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ড মেম্বারদের মাধ্যমে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধ টাকা আদায় করেছেন, তার এসব অপকর্মে নিয়মিত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন নিকট আত্মীয়দের কয়েকজন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভাগনে জামাই মো. হাশেম, বলি নুরুল আলম, মোহাম্মদ সোলতান, প্যানেল চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন মেম্বার, জসিমউদ্দিন মেম্বার সহ অনেকে। যারা মূলত পুরো ইউনিয়নে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সকল অপকর্মে শক্তি প্রয়োগ করে যাচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনেকের অভিযোগ। তারা আরো অভিযোগ করেন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে প্রথমে গর্জনিয়া বাজারে দখলদারিত্ব কায়েম করেন। কালি মন্দিরের জায়গা দখলে নিয়ে তার নিকটাত্মীয়দের দোকান বরাদ্দ দিয়ে ত্রাস শুরু করেন। কিন্তু এবিষয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই নিশ্চুপ বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
এদিকে নারি কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নয় বলে জানান। তিনি বলেন, এধরনের ঘটনার কথা তিনি শুনেননি এবং কেউ তাকে জানায়নি।