অসতর্কতার কারণেই ৯টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে: সিভিল সার্জন

0

নিজস্ব প্রতিবেদক:: মূলত অজ্ঞতার কারণেই ৯টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী । একের পর এক শিশু মারা গেলেও তারা ভেবেছিলো এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। এখানকার মানুষ যদি এ বিষয়টি আমাদের আগে জানাতো তাহলে এতগুলো শিশুর প্রাণ যেতো না।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকালে  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে  এ মন্তব্য করেন তিনি।

অজ্ঞাত ওই রোগে একের পর এক শিশু আক্তান্ত হলেও শিশুটির পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে কোনো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাননি। শিশুদের শারীরিক অবস্থার যখন চরম অবনতি হয়েছে তখন চিকিৎসার নামে স্থানীয় কবিরাজ ও বৈদ্যেদের দিয়েই ঝাড়ফুঁক করানো হয়েছে। ফলে ৯টির শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে (চমেকে) ভর্তি করানো হয়েছে ২৬ জন শিশুকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মধ্যম সোনাইছড়ি এলাকায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে ৫৭টি ত্রিপুরা পরিবার। পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার এবং জুম চাষ করে ওই পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। তাই রোগটি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিলো না। তাছাড়া চিকিৎসা সেবাসহ সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ওই এলাকার বাসিন্দারা। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ওই এলাকায় শিশুদের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়।

সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুরুল করিম রাশেদ জানান, গতকাল (বুধবার) দুপুরে জ্বর, বমি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ত্রিপুরা পাড়ার এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে হাসপাতালের বহিঃবিভাগের চিকিৎসক শিশুটির অজ্ঞাত রোগ শনাক্ত করতে না পেরে আমাকে জানান। পরে শিশুটির বাবার কাছ থেকে রোগের বিস্তারিত বর্ণনা ও জ্বরে আক্রান্ত চার শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে আমাদের একটি টিম ত্রিপুরা পাড়ায় ছুটে যায়। তখনই মূলত এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়। তাৎক্ষণিক এই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত ২৮ শিশুকে উদ্ধার করে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এদিকে, এ ঘটনায় আতঙ্কে সীতাকুণ্ডের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমদ জানান, এক সপ্তাহ ধরে এ রোগে আক্রান্ত হলেও বিষয়টি ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা কাউকে জানায়নি। তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করেছিল। একটু সচেতন হলেই আজকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, মূলত অজ্ঞতার কারণেই ৯টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একের পর এক শিশু মারা গেলেও তারা ভেবেছিলো এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। এখানকার মানুষ যদি এ বিষয়টি আমাদের আগে জানাতো তাহলে এতগুলো শিশুর প্রাণ যেতো না।

তিনি বলেন, আর একটি শিশুকেও যেনো প্রাণ হারাতে না হয়। সেজন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমরা সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং স্থানীয় সব কমিউনিটি ক্লিনিকের ডাক্তার ও নার্সদের ছুটি বাতিল করেছি। এছাড়াও রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় আক্রান্তদের রক্তের নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.