চন্দনাইশে শিক্ষার হার-মান বাড়ছে

সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল :  উর্বর, আলোকিত ও বিপ্লবতীর্থ হিসেবে চন্দনাইশের খ্যাতি রয়েছে। চন্দনাইশে সংঘাত-সহিংসতার পরিবর্তে সহাবস্থান ও সহনশীলতা উপমাযোগ্য। এই চন্দনাইশের অধিবাসীরা বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-উপদেষ্টা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। জাতীয় অধ্যাপকসহ দেশ-বিদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা, গবেষণা ও উন্নয়নের কাজসহ এ এলাকার লোকদ্বারা হয়েছে। উপমহাদেশের বড় বড় দলগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, প্রশাসন, উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজে এ এলাকার লোকের নেতৃত্ব ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় চন্দনাইশে শিক্ষার হার ও মান বেড়েই চলছে। একদিন প্রকৃত অর্থে আলোকিত চন্দনাইশে পরিণত হবে।

নাগরিকের মৌলিক অধিকার শিক্ষার জন্য সরকারগুলো জাতীয় বাজেট বরাদ্দ ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সুপরিকল্পিত কাজ করে। আমাদের সমাজে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসা, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি এবং উচ্চশিক্ষার শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য জাতিসত্তা, আর্থ-সামাজিক, শারীরিক-মানসিক সীমাবদ্ধতা ও ভৌগলিক অবস্থান। নিবিশেষে সকলের শিক্ষার সমান সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে চন্দনাইশে শিক্ষার উন্নয়নে সমন্বিত কাজ চলছে।

সমাজে যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে স্থান করে নেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। যুগোপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের জন্য চলছে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রতিযোগিতা। চন্দনাইশেও সরকার, সাংসদ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, এসএমসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় চন্দনাইশে হার ও মান বাড়ছে। ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন, ৫৬টি গ্রামের ২০১.৯১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চন্দনাইশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ), প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১টি (বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়), মেডিকেল কলেজ ১টি, নার্সিং কলেজ ১টি, হেলথ ও মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ১টি, ২টি ডিগ্রি কলেজ (বরমা ডিগ্রি কলেজ ও আমানত ছফা-বদরুননেছা মহিলা কলেজ), ২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (সাতবাড়িয়া অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডভূক্ত দোহাজারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুল এন্ড কলেজ), ১টি সংস্কৃত কলেজ (সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ডভুক্ত), উচ্চ বিদ্যালয় ২৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (এমই) ২টি, ফাজিল মাদরাসা ৬টি, আলিম মাদরাসা ৩টি, মহিলা মাদরাসা ১টি, দাখিল মাদরাসা ৬টি, এবতেদায়ী মাদরাসা ৮টি, কওমী মাদরাসা ৫টি, নুরানী মাদরাসা ২০টি, কেজি স্কুল ২২টি, পিপিএসসহ এনজিও পরিচালিত প্রাকপ্রাথমিক বিদ্যালয় ২৫টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি, শিশু বিদ্যালয় ১০টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬টি (তৎমধ্যে ২টি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও ফোরকানিয়া মাদরাসাসহ মসজিদ, মন্দির ও বৌদ্ধবিহার সমূহে ধর্মীয় বিদ্যালয় রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের মাধ্যমে বছরের ১ম দিন থেকেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়ে আসছে। নিয়মিত পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সাহিত্য-সংস্কৃতি-ক্রীড়া-শিক্ষা সফরসহ কো-কারিকুলাম চলে যথা নিয়ম ও সময়ে। তবে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ২ জন কর্মচারী, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ২ জন কর্মচারী, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে ২৬ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী, ৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, ৩টি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহু শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যার কারণে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে।

চন্দনাইশে বর্তমানে শিক্ষার হার ৫২.৫৫%, যা ১৯৯১ সালে ছিল ৩৪% (আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী)। এভাবে চন্দনাইশ শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে আলোকিত এলাকায় পরিণত হতে পারে। তবে এজন্য সকল দলমতের শীর্ষ ব্যক্তি, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এসএমসি, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক হতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই প্রকৃত অর্থে মানবসম্পদে রূপান্তর হবে। তারাই একদিন বিশ্বনায়ক হবে। এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে খ্যাতিমান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, জজ, ব্যারিস্টার, প্রশাসক, দেশনায়ক ইত্যাদি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ওয়েভ পোর্টাল বা জাতীয় তথ্য বাতায়নে চন্দনাইশের সমস্ত তথ্যাদি উপস্থাপন আপলোড করেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.