জীবন যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন

0

জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ, ফটিকছড়ি : কাটের পাশেই ঔষধের কৌঠা। টেবিলে পড়ে আছে চশমা। উত্তরে মুখ করে বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। দেখা মাত্রই কাউকে চিনতে পারছেন না। কি যেন ভাবছেন মনে মনে। শরীরের অবস্থা ভালো নয়। দু’মাস হলো হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে নিজের বিছানায় শুয়ে-বসে দিন কাটছে তাঁর। একসময় যখন ঠগবগে যুবক ছিলেন; দেশমাতৃকার ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এনে দিয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা। আজ জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি নানান বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছেন। হ্যাঁ।

যার গল্প বলছিলাম, তিনি রণাঙ্গনের সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন। হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মন্দাকিনী (নাজিরহাট) এলাকার বাসিন্দা মরহুম আবুল হোসেন এর পুত্র তিনি। স¤প্রতি দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে এই বীরের সংগ্রামী জীবনের নানা কথা। তিনি মুক্তিযোদ্ধে এক নম্বর সেক্টরের অধীনে দেশের হয়ে লড়েছিলেন। একাত্তরের ৭ সেপ্টেম্বর বিভীষিকাময় দিনে পাক-হানাদার বাহিনীদের বিরোদ্ধে হালদার পাড়ে ঘটে যাওয়া সম্মুখযুদ্ধে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। বলছিলেন, মুক্তিযোদ্ধে রাজাকার-আলবদরদের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার কথা। তাঁর চোখের সামনেই কত মা-বোনের সম্ভ্রমহানী ঘটতে দেখেছেন তিনি। ভাবতেই তার মন বিষাদময়তায় ভরে উঠে। কত সহযোদ্ধাদের দেখেছেন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েও মা-মাটির জন্য অকাঁতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে। একবার পাকবাহিনীরা তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন হত্যা করতে। অনেক নির্যাতন সহ্য করে কোন রকম প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। সেদিনের সে স্মৃতি মনে পড়লে আজও তাঁর গা শিউরে উঠে।

যুদ্ধচলাকালীন সময়ে নিজ হাতে ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে দক্ষিণের আলবদর কমান্ডার ফজলুল হককে হত্যা করেছিলেন। একে একে আরো অনেক স্বাধীনতা বিরোধী দুসরদের হত্যা করেছিলেন সহযোদ্ধারা। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দীর্ঘ বিশ বৎসর যাবৎ তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকার প্রতিনিধিত্বও করেছেন।

তার ছেলে মিজান বলেন, ‘বাবার মুখে প্রায়ই স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা শুনতাম। বাংলার ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধ এক অনন্য অর্জনের নাম।’

স্বাধীনতার পয়তাল্লিশ পূর্ণ হলো। এ সময়ে এসে তাঁর কোন ক্ষোভ কিংবা না পাওয়ার বেদনা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রাণপ্রাচুর্যেভরা এই বীর বলেন, ‘ইতিহাসের কুলাঙ্গার যোদ্ধাপরীদের বিচার দেখে যেতে ছেয়েছিলাম। দেখেছি। আরও যারা আছে তাদের বিচারও হবে। আমার কোন ক্ষোভ নেই; অপ্রাপ্তির বেদনাও নেই। কারো গোলামী করে বাঁচতে চাইনি বলেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। আজ মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলছি। বুক উঁচিয়ে বলছি এ দেশ আমার, এ মাটি আমার। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে!

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.