প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অর্থ ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

0

অর্থবাণিজ্য ডেস্ক : পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে বিশ্বব্যাংক। বাঁধ নির্মাণ-সংক্রান্ত এ প্রকল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাকেজে পরস্পর যোগসাজশে অযোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় বলে বিশ্বব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রকল্পটি থেকে তিন কোটি টাকার বেশি অর্থ ফেরত চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। জানা গেছে, অবৈধভাবে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমানে পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদারের স্ত্রীর ।

পাউবো ২০০৭ সালে পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটিতে ১০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা বিশ্বব্যাংকের। এর আওতায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২০০৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটির কাজ দেওয়া হয় গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজকে। দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মাহবুবুর রহমান তালুকদারের স্ত্রী প্রীতি রহমান। বিশ্বব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, বিশ্বব্যাংকের কাজ পাওয়ার যে শর্ত এবং অভিজ্ঞতা দরকার গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের কোনোটাই না থাকার পরও বাঁধ নির্মাণসহ একটি বড় প্যাকেজের কাজ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে এ ঘটনা
ঘটে।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সঠিক বলে জানান বর্তমান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি বড় প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগে ব্যাপক ত্রুটি বেরিয়ে এসেছে। প্রকল্পের মূল অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের তদন্তে যোগসাজশে কাজ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সরকারি ক্রয় আইন লঙ্ঘন করে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারকে অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। অনিয়মের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তৎকালীন পিডি এবং পাউবো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম।

এ বিষয়ে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন। প্রথমে তিনি স্বীকার করেন, গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের মালিক তার স্ত্রী। তবে তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে কোনো কাজ নেয়নি। তিনি জানান, স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে বিদেশে থাকেন। সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রশ্নই আসে না। তিনি জানান, গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটির নাম তিনি শুনেছেন। এর মালিকানা ভাগাভাগি হয়ে গেছে।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্যাকেজের তিন কোটি পাঁচ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় দুটি হিসাবের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দিতে ইআরডির অনাপত্তি চেয়েছে। এ অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে মেটানো হবে। এর আগে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন কয়েকটি প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়ে। মূলত একই দরদাতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন নামে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে আর্থিক প্রস্তাব দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এ কারণে গত জুনে কিছু টাকা ফেরতও দিতে হয় সরকারকে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.