ব্যবসায়ীরা জিম্মি অসাধু কর্মকর্তাদের হাতে

0

সিটিনিউজবিডি : রাজস্ব প্রশাসনকে করদাতাবান্ধব করতে নানামুখি উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও মাঠ পর্যায়ে এর সুফল মিলছে না। রাজস্ব আদায়ের নামে মাঠ পর্যায়ে করদাতা এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানির বিস্তর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে অবৈধ অর্থ। ছোট-খাট ত্রুটি পেলে আইনের মারপ্যাঁচে হেনস্তার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে অর্থ। ব্যবসায়ী কিংবা করদাতারা কোথায় গিয়ে এর প্রতিকার চাইবেন অনেক সময় তাও জানেন না। আবার প্রতিকার চাইতে গিয়ে পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের বড় রোষের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও অনেকে প্রতিকার চাইতে যান না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে একদিকে রাজস্ব অফিসের সঙ্গে করদাতাদের দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। অন্যদিকে সরকারের বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

রাজধানী ছাড়াও দেশের বাইরের বেশকিছু এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তাদের হয়রানির বেশকিছু চিত্র পাওয়া গেছে। মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে বড় অংকের ‘উপরি’ প্রদানের আবদার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, আইনের মারপ্যাঁচে ব্যবসায়ীদের নানান দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে এভাবে দেদারসে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট অফিসারদের উৎকোচ না দিয়ে ব্যবসা করতে পারছেন না।

আয়কর ও ভ্যাট আদায় কার্যক্রমকে জেলা থেকে উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সম্প্রতি সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে, আয়কর কিংবা ভ্যাট বিষয়ে এসব এলাকার মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে কাঙ্খিত রাজস্ব সরকারের ঘরে আনা। এ লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের উপজেলা ও গ্রামে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এই সুযোগ নিয়ে অসাধু কর্মকর্তারা নিজের পকেট ভারি করছেন।

অনুরূপ অভিযোগ পাওয়া গেছে লক্ষীপুরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ভ্যাটের অফিসাররা আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে।’ ভ্যাট পরিশোধের কোন রশিদ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন রশিদ দেয়নি। এভাবে ওই অঞ্চলেই আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায় করা হলেও ভ্যাট প্রাপ্তির কোন কাগজপত্র দেয়নি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, অনেক ছোট ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে, যাদের উপর ভ্যাট প্রযোজ্য হয় না। পরবর্তীতে বড় হয়রানির আশঙ্কায় এসব ব্যবসায়ীরাও তাদের নাম প্রকাশ হোক – তা চান না।

ব্যবসায়ী নেতারাও বিভিন্ন সময় আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন। তারা বলেন, যারা ভ্যাট কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে অর্থ দিতে না চান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রেইড দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীরা সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন হন। ঝামেলা এড়ানোর জন্য তারা অফিসারদের অর্থ দিতে বাধ্য হন। তারা বলছেন, এ চিত্র সারা দেশের।

প্যাকেজ ভ্যাটের দাবিতে ও নতুন ভ্যাট আইনের নানা অসঙ্গতি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত ‘ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’। ফোরামের কাছেও রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ অভিযোগ আসছে বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা, তাদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায়ের বিস্তর অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। খুলনা, যশোর থেকে অভিযোগ আসছে। এ ধরনের অর্থ না দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের বলছি। তবে অনেকেই হয়রানি ও ঝমেলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অর্থ দিচ্ছেন। আমরা এটি এনবিআরকেও জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন সুরাহা হয় নি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.