চিকিৎসার নামে অমানবিক ব্যবসা চলছে

0

 আবছার উদ্দিন অলি  :   ইদানিং সময়ে চিকিৎসার নামে অমানবিক ব্যবসা চালু হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সে সব ক্লিনিকে কি ন্যূনতম নিয়মনীতিও অনুসরণ করছে না? ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাসেবার ন্যূনতম মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয দায় এড়াতে পারে না। মানবিকতা, মূল্যবোধ কিংবা সেবার মনোবৃত্তি না থাকলে এ পেশার মান ক্রমাগত নিচেই নামতে থাকবে। আমরা আশা করি, সরকার জরুরি ভিত্তিতে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি যে কোনো অনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে শাস্তির বিধান করতে হবে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে কোন মানুষের চিকিৎসা সেবা নিয়ে গাফেলতি আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে।

তাই চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন ভাবেই অবহেলা কাম্য নয়। সেই সাথে বাণিজ্যিক মনভাব পরিহার করা জরুরী। আমাদের আয়ের ৫০% চিকিৎসা সেবায় ব্যয় হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় এনে ভালো চিকিৎসা সেবা ও ভালো ঔষধ বাজারে বিক্রি একজন দেশের নাগরিক হিসাবে প্রত্যাশা করতে পারি।

বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। অস্বাভাবিক ফি আদায়, অপ্রয়োজনীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ব্যয় বৃদ্ধি, অদক্ষ-অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নামের আগে নানা ধরনের বিশেষজ্ঞ খেতাব বসিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, পাস করা নার্সের বদলে আনাড়ি লোকজন দিয়ে সেবিকার দায়িত্ব পালন করা, প্রায়ই রোগীদের ভুল ওষুধ সেবন করানো, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু-এমনি আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিক গুলোর বিরুদ্ধে।

এর সঙ্গে রয়েছে পাওনা মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ে অনৈতিক ও অমানবিক পন্থা অবলম্বন করা। অভিযোগ আছে, প্রয়োজন না থাকলেও সেখানে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। ভুল ওষুধ সেবন করানোর কারণে অনেকেই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া কারো কারো অঙ্গহানি কিংবা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান। ফরমালিনযুক্ত বিষাক্ত খাওয়ার খেয়ে আমাদের রোগ ব্যাধি প্রতিদিন বাড়ছে। ক্যান্সার, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। এতে করে প্রতিটি ঘরে ঘরে যেমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তেমনি ঔষধের চাহিদাও বাড়ছে। আর এই সুবাধে অধিক দামে ঔষধ বিক্রী হচ্ছে দেদারসে। নিয়ন্ত্রণ করার যেন কোন ব্যবস্থাই নেই। নকল ঔষধে সয়লাভ হয়ে গেছে পুরো বাজার।

চিকিৎসা পেশা আর দশটা পেশার মতো নয়। এ পেশাকে দুনিয়াব্যাপী মহৎ পেশা হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। যেখানে রোগীর বাঁচা-মরা তথা জীবন নিয়ে কাজ করা হয়, সেখানে রোগীর গলায় ছুরি ধরে অর্থ আদায় করা কিংবা অনৈতিক ভাবে স্বজনদের পকেট কাটার কোনো অবকাশ নেই। ইতিমধ্যে নগরীর এক ব্যক্তির একই চোখে দু’বার ইনকেজশান পুশ করার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও অপারেশন করে পেটের মধ্যে গজ, সুঁই রেখে দেওয়ারও নজির রয়েছে।

যত্রতত্র অনুমোদিতহীন বাহারি নামে আধুনিক সাজ সজ্জায় গড়ে উঠেছে ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার। আর এদের অধিকাংশরই চিন্তা থাকে রোগীর কাছ থেকে কিভাবে টেস্টের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়। প্রয়োজন পড়–ক আর না পড়–ক। অধিকাংশ ডাক্তাররাই লিখে দেন টেস্ট করানোর জন্য। এতে করে ডাক্তার আর্থিক ভাবে লাভবান হলেও রোগীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা বারটা বাজে। বিষয়টি নজরদারী করার খুব বেশি প্রয়োজন।

চিকিৎসা সেবার নামে নগরীতে যে নৈরাজ্য চলছে তা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সিরিয়াল নিতে ঘুষ দিতে হয়। আবার কারো কারো কাছে অগ্রিম ফি দিতে হয়। কোন ভাবেই এ অনৈতিক নিয়ম রোধ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা বন্ধ হোক। চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমাদের মনে অনীহা সৃষ্টি হলে তাতে আমাদের দেশের ক্ষতি হবে। ক্ষতি হবে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.