শেখ হাসিনার অবদান-বদলে যাবে চট্টগ্রাম
গোলাম শরীফ টিটু/কবির আহমদঃ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। অনেকগুলো ফ্লাইওভার করা হয়েছে। নগরী ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রসস্ত ও উচুঁ করে সংস্কার করা হয়েছে। চলমান রয়েছে অসংখ্য প্রকল্পের কাজ। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দ্রুত চলমান এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে যা সম্পন্ন হলে গোটা চট্টগ্রামের চেহারা বদলে যাবে।
বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র টানেল নির্মাণের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরে কর্নফুলী তলদেশে ৩৫ ফুট চওড়া বিশিষ্ট দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেন। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। বর্তমানে এর কাজ প্রায় ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের এক প্রান্ত শুরু হবে নেভাল একাডেমি পয়েন্টে এবং অপর প্রান্ত গিয়ে উঠবে কাফকো ও সিইউএফএল এর মাঝামাঝিতে। ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ টানেলটি নদীর তলদেশের সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট (১২ মিটার) এবং সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট (৩৬ মিটার) গভীরে স্থাপন করা দুটি স্কেল বসানো থাকবে। সেই স্কেল দিয়ে দুই লেইনে গাড়ি চলবে। এটি নির্মান করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী (সিসিসিসি)। চীনের সাংহাই শহরের আদলে ’ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষে এ টানেল নির্মান করা হচ্ছে।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। এর মধ্যে ২৫ টি আলাদা জোন হবে। ৩০ হাজার একর জমির উপর এই ইকোনমিক জোন স্থাপন হচ্ছেন। চরের জমির মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক তৈরী করা হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে। চার লেনের এ সড়কের নামকরন করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ সড়ক যেটা কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে সেটিও এই জোনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে।
সমুদ্রের জোয়ারের পানি থেকে এ শিল্পশহর রক্ষার জন্য ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে জোন ঘেঁষে যে সমুদ্র উপকুল আছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড়, নেভি ও চায়না হারবারকে দিয়ে সাড়ে ১৮ কিলোমিটারের আরেকটি মেরিন ড্রাইভ নির্মান করা হচ্ছে। চায়না হারবার কোম্পানী দ্রুত কাজ করছে। এ বাঁধ তৈরীতে ব্যবস্থাপনার কাজ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোড়। মিরসরাইয়ে জমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের কাজ চলছে। সেখানে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র এক ঘন্টার দুরত্বে প্রকল্পের অবস্থানের কারনে বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি।
সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা ধরে রাখতে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বে-টার্মিনাল। পন্য ডেলিভারী নেয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ট্রাক জেটিতে প্রবেশ করে। বে টার্মিনাল এলাকা থেকে এলসিএল পন্য ডেলিভারী শুরু হলে অন্তত ৫ হাজার ট্রাকের আর জেটিতে প্রবেশ প্রয়োজন হবে না। চট্টগ্রাম ইপিজেড এর পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলীর রাশমনি ঘাট পর্যন্ত উপকুলের প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে নির্মিত হবে টার্মিনাল। জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ারের প্রয়োজন হবে না। রাতদিন আসা যাওয়া করতে পারবে জাহাজ। বর্তমানে ৯.৫ মিটারের বেশী গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে আসতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৯টি জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে-টার্মিনালে একই সময়ে বার্থিং নিতে পারবে ৩৫টি জাহাজ। এ টার্মিানেলর বর্তমান সুবিধার ৬ গুন বেশি সুবিধা থাকবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মান। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কক্সবাজার ঘিরে রেলের যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ রুটে রেলপথ নির্মান তারই অংশ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত এ রুটে মোট ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন ছিল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সে অনুযায়ী দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান করছে সরকার। ২০১৭ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। রেলপথ নির্মানের জন্য প্রথম লটে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চুক্তির মুল্য ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাক। দ্বিতীয় লট চকরিয়া রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০২ কোটি ৫ হাজার টাকা। এ রেলপথ প্রকল্পটির দায়িত্বে আছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্টান সিওটি এবং বাকী অংশের দায়িত্ব পেয়েছে সিসিইসিসি ও ম্যাক্স। এ রেলপথের উদ্দেশ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা ও ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারন।
এ বছরের ২৮ জানুয়ারী মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান বাংলাদেশ সাহায্য সংস্থা (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরন হবে।
চট্টগ্রাম জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ সন্দ্বীপ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ৪ লাখ মানুষের এ জনপদ। দেশের প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্তমান সরকার ’ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সুবিধার আওতায় জাতীয় গ্রীড থেকে সন্দ্বীপ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির জন্য ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সন্দ্বীপবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত এ সাবমেরিন প্রকল্পের প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন অপবিক কেবলের মাধ্যমে সীতাকুন্ডের বাকখালী থেকে সন্দ্বীপের বাউরিয়া পর্যন্ত টানা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল। এর মাধ্যমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল থেকে খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারন করা হচ্ছে। নতুন করে ড্রেন নির্মান করা হবে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রেটেনিং ওয়াল নির্মান করা হবে। খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৫ কিলোমিটারের রাস্তা হবে। প্রকল্পের আওতাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে যেসব খাল আরএস জরিপ অনুযায়ী চওড়া কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্রিজ চওড়া নেই এ ধরনের ৪৮টি গার্ড়ার ব্রিজ ও কালভার্ট পুন:স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
বোয়ালখালী বাসীর দীর্ঘদিনের দাবী কর্নফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতু পুন: নির্মান। তাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে শুরু হবে কর্নফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতুর পুন: নির্মান কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এ সেতু নির্মান অর্থের যোগান দিবে। এ জন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্নফুলী নদীর কালুরঘাট বোয়ালখালী অংশে রেললাইন কাম সেতু নির্মান করা হবে।
জিটুজি ভিত্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বেলচুড়া, হাজীগাঁও ও শোলকাটা এলাকায় প্রায় ৭৭৪ একর জমিতে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) হচ্ছে তাতে যাতায়াতের দুটি সংযোগ সড়কের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে সীমানা বেষ্টনি তৈরির কাজ। জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া সহ আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ হলেও চীনা কর্তৃপক্ষ ভুমি উন্নয়নের মুল কাজ এখনও শুরু করেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থকে চীনের কাছে ২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার একটি ঋন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা মিললেই গতি পাবে প্রকল্পটি।
আনোয়ারার পারকি সৈকতে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে ৪’শ শতক (৫একর) জমিতে হোটেল-মোটেল সহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা। দুই বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। এর বাইরে ৮ একর জমি উন্নয়নের পর ভবিষ্যতের জন্য রাখা হবে।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে গড়ে উঠা কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্মসংস্থানে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখছে। সেখানে এখন ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বমানের জুতা, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ফ্যাক্টরী। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৪৯২ একর আয়তনের এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। কেইপিজেডে প্রাপ্ত জমির মধ্যে ২২৯২ একর জমির উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ আসবে ১২০ কোটি ডলারের। সেখান থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পন্য রপ্তানী সম্ভব হবে। বর্তমানে ২৩টি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনোয়ারা উপজেলার পর শঙ্খনদীর ওপারে বাঁশখালী। উপজেলার গন্ডামারায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। যেটি পুরোদমে চালু হলে কর্মসংস্থান সহ এ অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখবে। চায়না সেবকো এইচটিজি এবং এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত এস.এস পাওয়ার প্লান্ট’ নামে এ প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।২০২১ সালের মধ্যে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীড়ে যুক্ত হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। এখানেই শেষ নয়।
কর্ণফুলীর ওপাড়ে চলামান মেরিন ড্রাইভ কর্নফুলী টানেলে যুক্ত হওয়ার পর আনোয়ারা মেরিন একাডেমি থেকে বার আওয়লিয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আর বাঁশখালী অংশের খানখানাবাদ থেকে ছনুয়া-রাজাখালী-পেকুয়া ৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে।
তার সাথে যদি বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর মোহনায় আনোয়ারা-বাঁশখালী অংশে একটি, বাঁশখালীর বড়ঘোনা-গন্ডামার অংশে একটি ও ছনুয়া-রাজাখালী (পেকুয়া) অংশে একটি সহ মোট ৩টি ব্রিজ নির্মান করে আনোয়ারা বাঁশখালীর ৪৯ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ মেরিন ড্রাইভে যুক্ত করা হলে কক্সবাজারের সঙ্গে দুরত্ব অনেক কমে যাবে।
শেখ হাসিনার অবদান স্বপ্নের সব প্রকল্প ঃ বদলে যাবে চট্টগ্রামের চেহারা
গোলাম শরীফ টিটু ঃ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। অনেকগুলো ফ্লাইওভার করা হয়েছে। নগরী ও জেলার গুরুত্বপুর্ন সড়কগুলো প্রসস্ত ও উচুঁ করে সংস্কার করা হয়েছে। চলমান রয়েছে অসংখ্য প্রকল্পের কাজ। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দ্রুত চলমান এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে যা সম্পন্ন হলে গোটা চট্টগ্রামের চেহারা বদলে যাবে।
বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র টানেল নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরে কর্নফুলী তলদেশে ৩৫ ফুট চওড়া বিশিষ্ট দুই টিউবের এই টানেল নির্মান কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেন। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের এ´িম ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। বর্তমানে এর কাজ প্রায় ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের এক প্রান্ত শুরু হবে নেভাল একাডেমি পয়েন্টে এবং অপর প্রান্ত গিয়ে উঠবে কাফকো ও সিইউএফএল এর মাঝামাঝিতে। ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ টানেলটি নদীর তলদেশের সর্বনি¤œ ৩৬ ফুট (১২ মিটার) এবং সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট (৩৬ মিটার) গভীরে স্থাপন করা দুটি স্কেল বসানো থাকবে। সেই স্কেল দিয়ে দুই লেইনে গাড়ি চলবে। এটি নির্মান করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী (সিসিসিসি)। চীনের সাংহাই শহরের আদলে ’ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষে এ টানেল নির্মান করা হচ্ছে।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। এর মধ্যে ২৫ টি আলাদা জোন হবে। ৩০ হাজার একর জমির উপর এই ইকোনমিক জোন স্থাপন হচ্ছেন। চরের জমির মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক তৈরী করা হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে। চার লেনের এ সড়কের নামকরন করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ সড়ক যেটা কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে সেটিও এই জোনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। সমুদ্রের জোয়ারের পানি থেকে এ শিল্পশহর রক্ষার জন্য ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে জোন ঘেঁষে যে সমুদ্র উপকুল আছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড়, নেভি ও চায়না হারবারকে দিয়ে সাড়ে ১৮ কিলোমিটারের আরেকটি মেরিন ড্রাইভ নির্মান করা হচ্ছে। চায়না হারবার কোম্পানী দ্রুত কাজ করছে। এ বাঁধ তৈরীতে ব্যবস্থাপনার কাজ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোড়। মিরসরাইয়ে জমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের কাজ চলছে। সেখানে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র এক ঘন্টার দুরত্বে প্রকল্পের অবস্থানের কারনে বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি।
সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা ধরে রাখতে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বে-টার্মিনাল। পন্য ডেলিভারী নেয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ট্রাক জেটিতে প্রবেশ করে। বে টার্মিনাল এলাকা থেকে এলসিএল পন্য ডেলিভারী শুরু হলে অন্তত ৫ হাজার ট্রাকের আর জেটিতে প্রবেশ প্রয়োজন হবে না। চট্টগ্রাম ইপিজেড এর পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলীর রাশমনি ঘাট পর্যন্ত উপকুলের প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে নির্মিত হবে টার্মিনাল। জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ারের প্রয়োজন হবে না। রাতদিন আসা যাওয়া করতে পারবে জাহাজ। বর্তমানে ৯.৫ মিটারের বেশী গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে আসতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৯টি জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে-টার্মিনালে একই সময়ে বার্থিং নিতে পারবে ৩৫টি জাহাজ। এ টার্মিানেলর বর্তমান সুবিধার ৬ গুন বেশি সুবিধা থাকবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মান। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কক্সবাজার ঘিরে রেলের যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ রুটে রেলপথ নির্মান তারই অংশ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত এ রুটে মোট ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন ছিল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সে অনুযায়ী দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান করছে সরকার। ২০১৭ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। রেলপথ নির্মানের জন্য প্রথম লটে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চুক্তির মুল্য ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাক। দ্বিতীয় লট চকরিয়া রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০২ কোটি ৫ হাজার টাকা। এ রেলপথ প্রকল্পটির দায়িত্বে আছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্টান সিওটি এবং বাকী অংশের দায়িত্ব পেয়েছে সিসিইসিসি ও ম্যাক্স। এ রেলপথের উদ্দেশ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা ও ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারন।
এ বছরের ২৮ জানুয়ারী মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান বাংলাদেশ সাহায্য সংস্থা (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরন হবে।
চট্টগ্রাম জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ সন্দ্বীপ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ৪ লাখ মানুষের এ জনপদ। দেশের প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্তমান সরকার ’ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সুবিধার আওতায় জাতীয় গ্রীড থেকে সন্দ্বীপ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির জন্য ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সন্দ্বীপবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত এ সাবমেরিন প্রকল্পের প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন অপবিক কেবলের মাধ্যমে সীতাকুন্ডের বাকখালী থেকে সন্দ্বীপের বাউরিয়া পর্যন্ত টানা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল। এর মাধ্যমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল থেকে খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারন করা হচ্ছে। নতুন করে ড্রেন নির্মান করা হবে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রেটেনিং ওয়াল নির্মান করা হবে। খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৫ কিলোমিটারের রাস্তা হবে। প্রকল্পের আওতাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে যেসব খাল আরএস জরিপ অনুযায়ী চওড়া কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্রিজ চওড়া নেই এ ধরনের ৪৮টি গার্ড়ার ব্রিজ ও কালভার্ট পুন:স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
বোয়ালখালী বাসীর দীর্ঘদিনের দাবী কর্নফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতু পুন: নির্মান। তাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে শুরু হবে কর্নফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতুর পুন: নির্মান কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এ সেতু নির্মান অর্থের যোগান দিবে। এ জন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্নফুলী নদীর কালুরঘাট বোয়ালখালী অংশে রেললাইন কাম সেতু নির্মান করা হবে।
জিটুজি ভিত্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বেলচুড়া, হাজীগাঁও ও শোলকাটা এলাকায় প্রায় ৭৭৪ একর জমিতে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) হচ্ছে তাতে যাতায়াতের দুটি সংযোগ সড়কের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে সীমানা বেষ্টনি তৈরির কাজ। জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া সহ আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ হলেও চীনা কর্তৃপক্ষ ভুমি উন্নয়নের মুল কাজ এখনও শুরু করেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থকে চীনের কাছে ২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার একটি ঋন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা মিললেই গতি পাবে প্রকল্পটি।
আনোয়ারার পারকি সৈকতে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে ৪’শ শতক (৫একর) জমিতে হোটেল-মোটেল সহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা। দুই বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। এর বাইরে ৮ একর জমি উন্নয়নের পর ভবিষ্যতের জন্য রাখা হবে।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে গড়ে উঠা কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্মসংস্থানে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখছে। সেখানে এখন ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বমানের জুতা, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ফ্যাক্টরী। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৪৯২ একর আয়তনের এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। কেইপিজেডে প্রাপ্ত জমির মধ্যে ২২৯২ একর জমির উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ আসবে ১২০ কোটি ডলারের। সেখান থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পন্য রপ্তানী সম্ভব হবে। বর্তমানে ২৩টি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনোয়ারা উপজেলার পর শঙ্খনদীর ওপারে বাঁশখালী। উপজেলার গন্ডামারায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। যেটি পুরোদমে চালু হলে কর্মসংস্থান সহ এ অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখবে। চায়না সেবকো এইচটিজি এবং এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত এস.এস পাওয়ার প্লান্ট’ নামে এ প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীড়ে যুক্ত হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। এখানেই শেষ নয়। কর্ণফুলীর ওপাড়ে চলামান মেরিন ড্রাইভ কর্নফুলী টানেলে যুক্ত হওয়ার পর আনোয়ারা মেরিন একাডেমি থেকে বার আওয়লিয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আর বাঁশখালী অংশের খানখানাবাদ থেকে ছনুয়া-রাজাখালী -পেকুয়া ৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। তার সাথে যদি বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর মোহনায় আনোয়ারা-বাঁশখালী অংশে একটি, বাঁশখালীর বড়ঘোনা-গন্ডামার অংশে একটি ও ছনুয়া-রাজাখালী (পেকুয়া) অংশে একটি সহ মোট ৩টি ব্রিজ নির্মান করে আনোয়ারা বাঁশখালীর ৪৯ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ মেরিন ড্রাইভে যুক্ত করা হলে কক্সবাজারের সঙ্গে দুরত্ব অনেক কমে যাবে।