বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী দিনে দারিদ্র্য, বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়তে আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনে রানী এলিজাবেথ কনফারেন্স সেন্টার-২ এ কমনওয়েলথ ওমেনস ফোরামের একটি প্লানারি সেশনে তিনি এই আহ্বান জানান।

কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের আমন্ত্রণে কমনওয়েলথ ওমেন্স ফোরাম আয়োজিত ‘ক্ষমতায়নে শিক্ষা: কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারীর জন্য ‘গুণগত মানের প্রাথমিক শিক্ষা ও বাস্তবভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সমতা আনয়ন শীর্ষক’ প্ল্যানারি সেশনে মূল বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষার উন্নয়নের তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বলেন, আমাদের দর্শণ হবে মানবিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ হাতে হাত ধরে কাজ করবে। আমি বিশ্বাস করি উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। বালিকাদের শিক্ষার জন্য আমাদের সরকার একগুচ্ছ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও গ্রামীণ নারীদের জীবনমান উন্নয়নে নারী শিক্ষা ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে পারিবারিক নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা বহুলাংশে কমেছে। নারী শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্যবিবাহ কমাতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

নারী শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শতভাগ শিশু স্কুলে যায়। ২০০৯ সালে যেখানে স্কুলগামী মেয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫৩ শতাংশ। শিক্ষার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অধিকাংশ পদ নারীদের সংরক্ষিত। ২০০৯ সাল থেকে ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও তিনি অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, সামজিক ও মানবিক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো আমাদের সরকার এক বছরের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ তরুণ। তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সরকার কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান আরও বলেন, নারীর সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অগ্রপথিক। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। বাংলাদেশেই সম্ভবত বিশে^র জাতীয় সংসদের মধ্যে একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা; চারজনই নারী।

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে সরকারি-সেবসরকারি ও আধাসরকারি খাতে নারীদের অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্নভাবে সাবলম্বী করার ক্ষেত্রে সরকারের নানা উদ্যোগ ও সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। তারা বিনা জামানতে মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ সুবিধায় ঋণ নিতে পারে। দেশের প্রতিটি জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ‘আমার ইন্টারনেট আমার আয়’ প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের সাবলম্বী করতে ও চাকরি বাজারে তাদের প্রবেশ বাড়াতে খাতভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাবলম্বী হচ্ছে।

এছাড়াও তিনি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ও জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি নারীরা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেটাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৫তম কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে (সিএইচওজিএম) যোগ দিতে ছয় দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার ভোরে যুক্তরাজ্য পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সৌদি সরকারের একটি বিশেষ বিমান স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৪০ মিনিট) লুটোন বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এসময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র প্রতিনিধি নেইল হল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার নাজমুল কাওনাইন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বর্নাঢ্য মোটর শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে ক্লারিজে’স হোটেল লিমিটেড লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা আছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.