মধ্যরাতে ছাত্রীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে তিন ছাত্রীর অভিভাবক ডেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন বলেছেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

রবিবার (২২ এপ্রিল) সকাল এগারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা কর’ ব্যানারে ঢাবি সচেতন শিক্ষকবৃন্দ আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।

আবুল মকসুদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য তিনি শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষক, তেমনি অভিভাবকও। উপাচার্য বলেছেন, তাদের ছাত্রীদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী নির্যাতিত হলো। সেটা হলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভূখণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সুতরাং এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জার। আমি শুধু এটা বলবো প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা এটাই যেন শেষ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১৮ এপ্রিল যে শিক্ষকবৃন্দ উপাচার্যের নিকট খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তাদের উদ্যেগেই আয়োজিত হয় এ মানববন্ধন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরও বলেন, আজকে কয়েকজন শিক্ষকের নাম অব্যাহতভাবে মনে আসছে। তারা হলেন স্যার পি জে হার্টগ, অধ্যাপক আহমেদ ফয়জুর রহমান, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার। তারা বেঁচে নেই, হয়ত তাদের আত্মা দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাও ছিলেন। এই অধ্যাপকরা কোন শিক্ষার্থীর সামান্য ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা’ হলেও হলে ছুটে যেতেন। এমনও হয়েছে রাত ২/৩ টা পর্যন্ত সাথে থেকেছেন।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ দুটি দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই এবং হলগুলিতে দল নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়োগ করতে হবে।

এম এম আকাশ আরও বলেন, আমরা ‘রঙ’ নির্বিশেষে সাধারন ছাত্রদের জন্য এখানে দাড়িয়েছি। আমরা ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের নিরাপত্তা চাইছি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসলিম সিদ্দিক বলেন, একটা নায্য দাবিকে বিভিন্নভাবে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যুগে যুগে ছাত্ররা নায্য দাবিগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। আশা করি সে ধারা অক্ষুন্ন থাকবে।

ছয়টি দাবি পেশ করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দাবিগুলো হলো:

১) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে হবে; তাদের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

২) ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বিধিসম্মত সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ব্যতীত অন্য কোনভাবে কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

৩) রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা বেসরকারি কোন গোষ্ঠী দ্বারা কোন ছাত্র-ছাত্রী যেন আক্রান্ত না হয় সে জন্য অবিলম্বে একটি বিশেষ সেল গঠন করতে হবে।

৪) ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নয়, আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর সাথে যারা সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫) উপাচার্যের বাসভবনে নারকীয় তাণ্ডব ঘটানোর জন্য যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনসহ সকল আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

৬) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা দিতে হবে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আসিফ নজরুল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হকসহ আরো অনেকে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.