রাউজানে বাঁশ-বেতশিল্প বিলুপ্তির পথে

0

 

এম. রমজান আলী, রাউজান :: রাউজানের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। অনেকেই পুঁজির অভাবে, আবার কারও উপকরণের অভাব এবং অনেকেই আছেন নিজেদের তৈরী করা পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কারণ। উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গ্রামের ৫০টি পরিবার অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাবা-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

এক সময়ে নোয়াপাড়া কচুখাইন গ্রামে শতাধিক পরিবার নিপুণ হাতে তৈরি করা বাশেঁর বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন বাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব পণ্যের চাহিদা থাকায় অনেক মানুষ বাড়িতে গিয়ে অর্ডার দিত। এতে তাদের জীবন-যাপন স্বচ্ছন্দময় ছিল। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা না থাকায় এসব পরিবারে অভাব-অনটন নেমে এসেছে। তারপরও রাউজান উপজেলার অনেক অনেক পরিবারের বিরাট একটি অংশ পূর্বপুরুষের পেশাকে এখনো আঁকড়ে পড়ে আছেন।

বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, আগে এলাকায় প্রচুর বেত উৎপাদন হতো। স্বল্পমূল্যে অনায়াসে বেত পাওয়া যেত। এখন বেত নেই বললেই চলে। দূর-দূড়ান্ত থেকে বেত কিনে আনতে হয়। দামও অনেক।

বর্তমানে বেতের তৈরি মাঝারি আকারের একটি ধামার দাম ১০০০ টাকা পড়ে। প্রয়োজন থাকলেও এত বেশি দামে অনেকেই কিনতে চায় না। এ পেশায় জড়িত আরো অনেকে জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও এ অ লে বাঁশ সহজলভ্য ছিল। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় একটি বাঁশ কেনা যেত। এখন একটির দাম দেড়শ থেকে দুইশ টাকা।

বাঁশ দিয়ে একটি খাঁচা তৈরি করতে ৪০ টাকা খরচ পড়ে। অথচ বাজারের তা ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সে অনুপাতে তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। পাশাপাশি প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যাদির কারণে এগুলোর চাহিদাও কমে গেছে।

জানা যায়, এক সময়ে নোয়াপাড়া কচুখাইন গ্রামে শতাধিক পরিবার তলইসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করা জিনিষ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে অনেক পরিবার নিজেদের সংসার চালাতে বাঁশের তলই বানানোর কাজ করে চলেছে। খুবই গরীব অধ্যুশিত এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ঘরে বাহিরে বসে মহিলারা যে যার মত করে তলই বানানোর কাজ করছে যেন কথাবলারও ফুসরত নেই তাদের।

মোহাম্মদ সোহেল জানান এখানেই অনেক পরিবার সংসারের অভাব সামাল দিতে, সেই ভোর থেকে শুরু হয়ে সূর্য ডোবা পর্যন্ত কাজ করে। পাশের বাড়ীর রিজিয়া বেগম জানালেন, সারাদিন তলই বানানোর কাজ করে তা দোকানে দিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়েই চলে সংসার। স্বামী আবু বক্কর অসুস্থ, তার এক ছেলে দুই মেয়ে অভাবের সংসার তাই তলই বানিয়ে তা বিক্রয় করে সংসার চলে ।

সাজু আক্তার এবং রিজিয়া বেগম হতাশার সঙ্গে জানান, বাঁশ দিয়ে একটি তলই তৈরি করতে যে টাকা খরচ পড়ে তার বেশী টাকায় বিক্রি হয় না তাই লাভও কম হয় বলে নিজেদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর দাবি- পরিবার ভিত্তিক সল্প মূল্যে ব্যাংকঋণ প্রদান, এর ব্যবস্থা করে এই শিল্পকর্মে জড়িত পরিবার গুলোকে টিকে রাখা এখনো সম্ভব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.