অবৈধ দখলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী খাল

0

বাঁশখালী প্রতিনিধি, সিটি নিউজ :: বাঁশখালীর বুক ছিড়ে যে খালটি প্রবাহিত সেটা হল জলকদর খাল। এই জলকদর খালটি সুদূর কাল থেকে বাঁশখালীর যাতায়াত ও ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়ার অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রেখে আসছিল।

কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই জলকদর খালটি দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের দখলে এবং সংস্কার না করায় সরু হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পূর্বা লের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার ঢল এবং বন্যার পানি নিস্কাশন হতে না পারায় সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়। এবং সাধারণ জনগণের নানাভাবে মালামালের ক্ষতিসাধন হয়।

এক সময় বাঁশখালীর সকল ব্যবসায়ীগণ নৌকা এবং সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে এই জলকদর খাল হয়ে সকল ধরনের মালামাল নিয়ে আসতো শঙ্খ নদী হয়ে। কিন্তু এখনো সেই ধারা অব্যাহত থাকলেও জলকদর খালের অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পূর্বের সেই সুবিধা থেকে বি ত হচ্ছে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ।

অপরদিকে জলকদর খালের সাথে বাঁশখালীর পূর্বা লের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ স্লুইচ গেইট গুলো নানা ভাবে দখল এবং বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বা লের এলাকা গুলোতে।

জলকদর খালটি শঙ্খ নদী হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে আবারো দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে পড়েছে।

এই জলকদর খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানা ভাবে দখলে থাকায় বর্তমানে পানি নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্থ হয়ে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সম্প্রতি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার উপস্থিতিতে বাঁশখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় সভায় বাঁশখালীর এই ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালটি সংস্কারের জন্য সকলের পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয়।

বাঁশখালীর ৮টি পাহাড়ি ছড়া, পুঁইছড়ির ছড়া, নাপোড়া ছড়া, চাম্বলের ছড়া, শীলকূপের ছড়া, জলদী ছড়া, পাইরাংয়ের ছড়া, কালীপুরের ছড়া ও সাধনপুরের ছড়া হয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি গুলো পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পানি গুলো নানা ভাবে জলকদর খালে গিয়ে পৌঁছতে না পারলে সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়।

বিগত দিনে এই জলকদর খালে পানি নিস্কাশন সহজ হলেও সম্প্রতি সময় গুলোতে দুই পাশে অসংখ্য অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়াতে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা দূরহ হয়ে পড়ে। অপরদিকে খালটি সরু হয়ে যাওয়াতে পূর্বের মত ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে বোট অথবা সাম্পানের মাধ্যমে আগের মত মালামাল পরিবহন করতে পারে না।

সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা পাহাড়ি পানি নিস্কাশনে ছড়া গুলো সংস্কার এবং জলকদর খালের স্লুইচ গেইট গুলো সংস্কার করে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।

এ ব্যাপারে বাহারছড়ার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অভ্যন্তরে প্রবাহিত এই খালটি সংস্কার করা হলে বর্ষা মৌসুমে সাধারণ জনগণ বন্যার হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। তাছাড়া স্লুইচ গেইট গুলো যথাযথ সংস্কার করা প্রয়োজন।

একই কথা বললেন শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াছিন ও ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হারুন।

তারা বলেন, আমাদের এলাকার দুর্ভোগ হচ্ছে এই জলকদর খালটি। দুই পাশে অবৈধ ভরাট হওয়ায় ও জবর দখল হওয়ায় পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না। তাছাড়া স্লুইচ গেইট গুলো নানা ভাবে দখলে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে সেগুলো সংস্কার করতে পারে না।

সমন্বয় সভায় মন্ত্রী জলকদর খাল সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে আহবান জানান। বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী এই জলকদর খালটি সংস্কার ও অবৈধ দখলদার মুক্ত করার দাবী সর্বস্তরের জনগণের।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.