চালক থেকে মাদক ব্যবসায়ী ফারুক ক্রসফায়ারে নিহত
নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ: চন্দনাইশ জাফরাবাদের ট্যাক্সি চালক থেকে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি শেষে ফেনীতে ক্রসফায়ারে নিহত । গত ২২ মে (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে ফেনি জেলার চট্টগ্রাম ঢাকা মহাসড়কে দাউদপুর ব্রিজের পাশে কাঁচা রাস্তার ওপর প্রাইভেট কার নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব-৭ এর সাথে ক্রসফায়ারে মোঃ ফারুক নিহত হয়েছে। নিহত ফারুকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামে। তার পিতা অলি আহমদ কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় এক সময় ঠেলাগাড়ি চালাতেন পরে ঠেলাগাড়ি কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে বলে স্থানীয়রা জানান। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। ফারুক অলি আহমদের ২য় স্ত্রীর সন্তান বলে জানা যায়।
গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সড়কের পাশে টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনি দেয়া বাড়ি। বাড়িতে এসময় তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনেরা তার মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্না করতে দেখা যায়। তার বাড়িতে থাকা স্ত্রী ছায়েরা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ২২ মে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাঁর স্বামীকে টিভিতে ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার সংবাদ দেখেন। তিনি বলেন-আমার স্বামী যদি মাদক ব্যবসা করতেন তাহলে বাড়িঘরের এ অবস্থা থাকত কী? তিনি তাঁর স্বামী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
তবে স্থানীয় লোকজন সেই মাদক (ইয়াবা) ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানায়। ফারুক গত ১২ বছর আগে ওমানে গিয়ে সেখানে মাত্র আটমাস থেকে দেশে ফিরে আসেন। ওইখান থেকে এসে ২০০৮ সালের দিকে প্রায় দুই বছর টেম্পো চালাতেন। এরপরে রবি কোম্পানির গাড়ি চালান। গত দুই বছর আগে নিজেই কার ক্রয় করে চালাতে শুরু করে।
স্থানীয়ভাবে আরো জানা যায়, ফারুক কালুরঘাট এলাকায় টেম্পো চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। একসময় নগরীর সামশু নামের এক ব্যাক্তির সাথে পরিচয় ঘটে। যাকে সবাই সামশু মামা নামে ডাকে। ২০১৩ সালে তার পরিচয়ের সূত্র ধরে সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়। পরিবর্তন আসে তার পরিবারে। পার্শ্ববর্তী সফিরচর থেকে ছায়েরাকে বিয়ে করে।
তার আপন দুই বোনকে বিয়ে দেয়। এক ভাই মারুফকে সৌদি আরব ও অপর ভাই জহিরকে ওমানে পাঠায়। বর্তমানে সে দুইটি ট্রাক ও একটি প্রাইভেট কারের মালিক বলে জানা যায়। সে সাথে ব্যাংকে বিপুল অংকের নগদ টাকা আছে বলেও স্থানীয়রা জানান।
ফারুক মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত নগরীর ওয়্যারলেস কলোনী এলাকার একটি ১০ তলা ভবনের ১৭ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস করতেন। সম্প্রতি বাকলিয়া এলাকায় একটি জায়গা ক্রয় করে বলেও জানা যায়। তবে ফারুক এলাকায় তেমন আসতোনা। কোরবান ও রমজানের ঈদে সাধারণ হতদরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন বলেও জানা যায়।
গতকাল ২৩ মে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফারুকের লাশ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফারুকের বুকে হাতে পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখা যায়। রাত সাড়ে ১০টায় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ফারুকের লাশ দাফন করা হয়।