গোলাম শরীফ টিটুঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর নিম্নাঞ্চল আগ্রাবাদ, হালিশহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর ও বাকলিয়া এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের অভাবে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভুগছে মানুষ।
এসব এলাকার লোকজনকে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে বসবাস করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। দিন যায় বছর যায়, সরকার আসে সরকার যায়। এসব এলাকার বানভাসী মানুষের কষ্ট যায় না। নির্বাচন আসলে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন জলাবদ্ধতা দুর করার। কেউ কথা রাখেনি।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলের ৯ বছর শেষ হয়েছে। মানুষের দু:খ শেষ হয়নি। এলাকার সংসদ সদস্যরাও খবর রাখেন না জলাবদ্ধ মানুষের। বৃষ্টি ও জোয়ারের তান্ডবে কয়েকদিন পর্যন্ত গড়ায় জলাবদ্ধতা। এক সময় পানি নেমে যায়, সঙ্গী হয় ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ।
জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত এলাকা আগ্রাবাদ বেপারী পাড়া, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ, মুহুরী পাড়া, হালিশহর হাউজিং এষ্টেট, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ, চকবাজার, বাকলিয়া এলাকা ঘুরে লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার অন্যতম দায়ী দুটি সেবা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ণ কতৃপক্ষ (সিডিএ)।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নগরীর নালা-নর্দমা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানি- নিষ্কাশন ও অভ্যন্তরীন সড়ক মেরামতের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে বানভাসী মানুষ কোন আশার বানী পাচ্ছেন না।
উপরন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পত্রিকায় জরুরী গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়,’’২০১৭ সালের ৯ আগষ্ট চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুকুলে ’চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন কল্পে খাল পুন:খনন, সম্প্রসারন, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫৬১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়’।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় খাল হতে মাটি উত্তোলন ও অপসারন, রিটেইনিং ওয়াল নির্মান, টাইডাল রেগুলেটর ও সিল্টট্রেপ স্থাপন, খাল পাড়ের রাস্তা নির্মান, নতুন রোড সাইড ড্রেন নির্মান, রোড সাইড ড্রেন পরিস্কার মেরামতের কাজ নির্ধারিত রয়েছে।
বর্নিত প্রকল্প অনুমোদনের পর থেকে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের যাবাতীয় সকল দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)র’’। এ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,’এ বিজ্ঞপ্তিতে সিটি কর্পোরেশনের অপরাগতার বিষয়টি সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়’। বিষয়টি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ ভাইরাল হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত সিডিএ চেয়ারম্যান ও বোর্ডকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে।
এদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ণ কতৃপক্ষও (সিডিএ) এবার বেছে নিয়েছে’ পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি’ প্রচারের পন্থা! গত ২৪ জুন পত্রিকায় এক বিজ্ঞপ্তিতে সিডিএ জানায়,’এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ, প্রকল্পের চুড়ান্ত অনুমোদনের ২ মাসের মধ্যে কাজ শরু করা এক নজিরবিহীন ঘটনা, যেটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারনে’।
সিডিএ দাবী করেন,’ ২০ লক্ষ ঘনফুট কাঁদা আবর্জনা অপসারন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড (চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, পাঠাইন্না গোদা), ৫নং মোহরা ওয়ার্ড (কাপ্তাই রাস্তার মাথা, কাজির হাট), ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড (আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার সামনে, বহদ্দারহাট মোড়, কাঁচা বাজার), ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ড (ষোলশহর ২নং গেইট, কাপাসগোলা রোড), ৬নং পুর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড (এক কিলোমিটার, নতুন চান্দগাঁও থানা সংলগ্ন), ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড (জিইসি মোড়, হোটেল লর্ডস ইন এর সংলগ্ন),
১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড (ধনিয়ার পুল,কাপাসগোলা) ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড (সৈয়দ শাহ রোড, ইকবাল মসজিদ সংলগ্ন, বাকলিয়া স্কুল সংলগ্ন) ১৮নং পুর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড (ওয়াজের পাড়া, সাজেক শাহ মাজার সংলগ্ন), ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড (বগার বিল) এ কাজ চলমান রয়েছে বলে উক্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,’ উল্লেখিত ওয়ার্ডগুলো চট্টগ্রাম-৭ (চান্দগাঁও বোয়ালখালী আসনের অন্তর্ভুক্ত)। এ আসনে নির্বাচন করতে চান সিডিএ’র চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগ কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম।
এ ছাড়া নগরীর সবচেয়ে জলাবদ্ধ ওয়ার্ড ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ (নালাপাড়া বাজা, নাছির খাল, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারী পাড়া, বিল্লাপাড়া, ছোটপুল) ও ২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ (শান্তিবাগ, কর্নফুলী মার্কেট সংলগ্ন) ওয়ার্ডেও কাজ চলমান বলে দাবী করা হয়। তবে এসব এলাকার জনাসাধরনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,’ তারা এখনো পানিতে ভাসছে’।
উন্নয়ণের মহাপ্রকল্পের কোন সুফল পাওয়া যায়নি। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ’মির্জা খাল, নোয়া খাল, বামনশাহী খাল এবং মহেশখালসহ ১২টি ওয়ার্ডে সেকেন্ডারী খাল পরিস্কারের কাজসহ মহেশখালের মুখে স্যুইচ গেইট নির্মানের কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে’। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিয়ে কোন ডেটলাইন নেই।
সচেতন জনসাধারনের মতে,’ চট্টগ্রাম শহরে বিল্ডিং নির্মানের নকশা অনুমোদ দেয় সিডিএ। এসব ভবন নকশা অনুসরন করে নির্মিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে নজরদারী নেই। অধিকাংশ বহুতল ভবনের পাইলিংএর মাটি গিয়ে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন নগর আওয়ামী লীগের সধারন সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম একই কমিটির কোষাধ্যক্ষ।
এই দুটি সেবা সংস্থার কাজের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে সাময়িক পার পেলেও চট্টগ্রামে সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন করতেও দুই সংস্থা দায় এড়াতে পারবে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নদী খননে অনিহা ও নদী সংস্কারে ব্যর্থতায় নদীর পানিতে নগর ডুবছে। যা দেখার কোন অভিভাবক নেই চট্টগ্রামে।